দেড় সপ্তাহের মধ্যে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নীতিমালা চূড়ান্ত করার আশাবাদ

প্রকাশিতঃ 8:25 pm | January 29, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, আগামী এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নীতিমালা চূড়ান্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে নতুন করে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হবে। যতদিন পর্যন্ত নতুন কার্ড দেওয়া হচ্ছে না ততদিন পর্যন্ত বিদ্যমান কার্ডগুলোর কার্যকারিতা বহাল থাকবে।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।

আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরকার উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটিতে সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধি ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কমিটির কাজ হচ্ছে বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা রিভিউ করে কীভাবে সাংবাদিক বান্ধব ও তাদের কাজের জন্য আরও উপযুক্ত করে তোলা যায় সে বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। এ আলোকে সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। এ প্রস্তাবনাই চূড়ান্ত নয়। এগুলো সাংবাদিক নেতারাসহ উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে আলোচনা হবে এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।

আগামী এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা যাবে। নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়ে গেলে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী করে আবার সবাইকে নতুন করে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

যা থাকছে প্রস্তাবিত সরকারি নীতিমালায়
ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আমরা পর্যালোচনাকালে দেখেছি ২০২২ সালের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নীতিমালায় কার্ড পাওয়ার প্রথম শর্ত ছিল সাংবাদিককে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়ার জন্য সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রচার করতে হবে। এটি নীতিমালার প্রথমেই সন্নিবেশিত করা হয়েছিল। সরকার এ শব্দগুচ্ছগুলো বাতিল করার সুপারিশ করেছে। কারণ এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি কাজ।

তিনি বলেন, সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করবে, তারা তাদের মত সাংবাদিকতা করবে, এতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ মূলক কিছু থাকবে না।

২০২২ সালের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নীতিমালায় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার একটি ধারার কথা বলা হয়েছে। অতীতে এ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার ধারাটিকে অপব্যবহার করে অনেক অসাংবাদিক (তারা আসলে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত না, নামকাওয়াস্তে সাংবাদিক) তারা এটাকে অপব্যবহার করে কার্ড নিয়েছেন। সেই কার্ডের যথেচ্ছ ব্যবহার করেছেন। এতে প্রকৃত সাংবাদিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যমান নীতিমালায় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের ধারাটি বাতিল করে কিছুটা সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে এর অর্থ এই নয় যে, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের কাউকে কার্ড দেওয়া হবে না। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালার কিছু জিনিস যোগ করা হচ্ছে যেমন, সাংবাদিকতা পেশায় যারা সম্মানিত ব্যক্তি, লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন উনাদেরকে কার্ড দেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে ২০ বছর সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকতে হবে অথবা সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে এমন কোন সংগঠনের (যেমন সাংবাদিক ইউনিয়ন) সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

বিদ্যমান নীতিমালায় আরও একটি ধারা রয়েছে যা সাংবাদিকদের জন্য খুবই অবমাননাকর। হয়তো বাস্তবের প্রয়োগ খুব একটা হতে দেখিনি।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাংবাদিকরা যদি কোনো কারণে বিদেশ যান, তাহলে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রাচার অনু বিভাগ অথবা প্রধান তথ্য কর্মকর্তাকে অবহিত করে যেতে হবে। সরকার মনে করে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। তাই এ ধারাটাও সরকারের পক্ষ থেকে বাতিল করার সুপারিশ করা হবে।

প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল ও ইস্যু করার ক্ষমতা এতদিন ধরে প্রধান তথ্য কর্মকর্তার হাতে নিয়োজিত ছিল। নতুন নীতিমালার দায়িত্ব একটা কমিটির কাছে দিতে চায়। এ কমিটিতে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ছাড়াও এছাড়া সাংবাদিকদের প্রতিনিধি (সাংবাদিক ইউনিয়ন, সংবাদপত্রের সম্পাদকের প্রতিনিধি, টেলিভিশন সাংবাদিকদের একজন প্রতিনিধি, অনলাইন সাংবাদিকদের প্রতিনিধি) থাকবেন।

কমিটির মাধ্যমে কার্ড ইস্যু কিংবা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এ কমিটির সিদ্ধান্ত যদি কারো মনঃপূত না হয় তাহলে আপিল এর ব্যবস্থাও থাকবে। এ লক্ষ্যে একটি আপিল কমিটি থাকবে। এ কমিটিতে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, জাতীয় দৈনিকের একজন সম্পাদক কিংবা টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি -এ ধরনের মর্যাদা সম্পন্ন লোকজন থাকবেন।

বিদ্যমান নীতিমালায় জেলাপর্যায়ের সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট বিধান নেই। নতুন নীতিমালায় এ সংক্রান্ত কিছু বিধি-বিধান যুক্ত করা হবে। জেলাপর্যায়ে সাংবাদিকদের আলাদাভাবে কার্ড সেখান থেকেই দেওয়া হবে।

নতুন নীতিমালায় স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বলে কিছু রাখার পক্ষপাতী নয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর বদলে তিন বছরের জন্য কার্ড ইস্যু করার হবে। এ ব্যাপারে সাংবাদিক নেতারা ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন।

বিদ্যমান নীতিমালায় সাংবাদিকদের কার্ড বাতিল এর ক্ষেত্রে কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হলেই প্রধান তথ্য কর্মকর্তার কার্ড বাতিলের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন নীতিমালায় সংশোধনী এনে কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হন কিংবা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় তাহলে কার্ড স্থগিত করা হবে। পরে ওই সাংবাদিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাজা প্রাপ্ত হন তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার কার্ড বাতিল হবে।

বিদ্যমান নীতিমালায় কোন প্রতিষ্ঠান কতগুলো কার্ড কীসের ভিত্তিতে পাবে তা পত্রিকার সার্কুলেশনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হতো। এ বিধানটি উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে।

এর পরিবর্তে সরকার এমন একটি ব্যবস্থা রাখতে চাইছে যাতে কোন একটি পত্রিকার সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক বিভিন্ন বিভাগীয় সম্পাদক ও মোট রিপোর্টার কতজন রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অথবা ১৫ জন-এমন একটি বিধান করার সুপারিশ করা হচ্ছে।

সরকারের সুপারিশগুলোর ব্যাপারে সাংবাদিক নেতারা তাদের মতামত দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এ সুপারিশমালার আলোকে ও সাংবাদিকদের মতামতের ভিত্তিতে খুব শিগগির নীতিমালা চূড়ান্ত হবে।

কালের আলো/এএএন/কেএ