বাণিজ্যমেলায় বিদেশিরা শুধুমাত্র মনোহারী পণ্য নিয়ে আসেন: উপদেষ্টা
প্রকাশিতঃ 6:08 pm | January 31, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অবয়ব এবং সক্ষমতার মধ্যে সমন্বয় নেই বলে মনে করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন।
তিনি বলেন, আমাদের চিন্তার ব্যাপ্তি আরও বাড়াতে হবে। আমরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা বলি, কিন্তু আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীরা এখানে আসেন না। যারা আসেন তারা কেবল মনোহারী পণ্য নিয়ে আসেন।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বাণিজ্যমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান এবং এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।
শেখ বশির উদ্দিন বলেন, আমি বাণিজ্যমেলায় আগত সব ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের বলতে চাই, আপনারা আপনাদের পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ান, বৈচিত্র্যকরণ করুন এবং ব্যবসার খরচ কমান। বাণিজ্যমেলার অবয়ব এবং সক্ষমতার মধ্যে সমন্বয় নেই। এটি করা বেশ ব্যয় এবং সময়সাপেক্ষ। আমাদের চিন্তার ব্যাপ্তি আরও বাড়াতে হবে। আগামী ৩০তম আসরে মেলাকে আরও স্বচ্ছ ও দৃষ্টিনন্দন করতে হবে।
তিনি বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক ভারসাম্য এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে এই মেলার আয়োজন করা হয়।
ব্যবসায়িক ব্যয় কমানোর আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়িক ব্যয় কমাতে না পারলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা তৈরি হবে না। ফলে বেকারত্বের চ্যালেঞ্জ বেড়ে যাবে। তাই সবাইকে আহ্বান জানাবো আপনারা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ান।
এবারের মেলায় ৩৪৩টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। যার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়ার ১১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত বছরের মেলায় ৩০৪টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছিল। যার মধ্যে ৫টি দেশের ৯টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ছিল।
মেলায় বস্ত্র, ফার্নিচার, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, মেশিনারিজ, কসমেটিক্স, গৃহসজ্জা, খেলনা, স্টেশনারিজ, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পসহ নানাবিধ পণ্য প্রদর্শিত হয়েছে।
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫১টি সেরা প্যাভিলিয়ন, স্টল ও প্রতিষ্ঠানকে ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
এবারের বাণিজ্যমেলাকে অধিকতর আকর্ষণীয় করতে প্রথমবারের মতো অনলাইনে স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ এবং মেলার প্রবেশ টিকিট ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত করা হয় কনসেশন রেটে উবার ও পাঠাও সার্ভিস।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো জন্য তৈরি করা হয় জুলাই চত্বর ও ছত্রিশ চত্বর। তরুণদের রপ্তানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধ করতে মেলায় তৈরি করা হয় ইউথ প্যাভিলিয়ন এবং আয়োজন করা হয় সম্ভাবনাময় সেক্টর ও পণ্যভিত্তিক সেমিনার।
বিদেশি ক্রেতা/উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয় সোর্সিং কর্নার, ইলেকট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার, মা ও শিশু সেবা কেন্দ্র এবং শিশুদের জন্য শিশু পার্কের ব্যবস্থা করা হয়।
মেলায় একাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য সচেতনতা ক্যম্পেইন পরিচালনা করে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি সার্ভেইল্যান্স, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি এবং অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফায়ার ব্রিগেড মোতায়েন করা হয়। খাদ্যদ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা হয়রানি রোধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে।
গত ১ জানুয়ারি পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৫ এর উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৯৯৫ সাল থেকে আয়োজিত এই মেলা দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে।
কালের আলো/এএএন/কেএ