তিতুমীর শিক্ষার্থীদের অবরোধে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ

প্রকাশিতঃ 2:44 pm | February 03, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণায় টানা পঞ্চম দিনের মতো মহাখালী-গুলশান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধের পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়ছে নগরবাসী। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলজের ভেতর থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীর একটি মিছিল কলেজের সামনের সড়ক বন্ধ করে দেয়। পরে তারা মহাখালী ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধের প্রস্তুতি নেন। শিক্ষার্থীদের এই অবরোধ ঘিরে পুরো এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মহাখালী আমতলী মোড়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের জলকামান। এছাড়া মহাখালী এলাকায় বিজিবির সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে মহাখালী-গুলশান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপেও শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন ঘিয়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। অবরোধের কারণে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের দুর্ভোগের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. আল আমিন হোসাইন বলেন, যেকোনও ধরনের নাশকতা, বিশৃঙ্খলা এবং ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। তবে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে আমরা তাদের সঙ্গে কোনও ধরনের সংঘর্ষে জড়াবো না। পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তারা যে দাবি করছে, সেটি সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা যা করণীয় আমরা সে বিষয়ে প্রস্তুত রয়েছি।’

শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করতে আমরা শিক্ষার্থীদের বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছি। তাদের বলছি, সড়ক অবরোধ করবেন না, এতে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। তবে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে আমরা সেটি বরদাস্ত করবো না।’

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) থেকে আমরণ অনশনে বসেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরদিন সকালে প্রথমবারের মতো তারা কলেজের সামনের সড়ক (মহাখালী-গুলশান) বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন।

এরপর থেকে আজ পর্যন্ত তারা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে গত কয়েকমাস ধরে একই দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি দেওয়া, ক্লাসবর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনও সাড়া না পেয়ে গত ২৯ জানুয়ারি বিকাল থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সাত দফা দাবিও জানান। পরে ৩১ জানুয়ারি সেটিকে একদফা দাবিতে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) আবারও শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানান। সেগুলো হলো–

১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।

২. শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করে যোগ্যতা বিবেচনায় নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

৩. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আইন উপদেষ্টার চাপ সৃষ্টির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির দায় নিয়ে আইন উপদেষ্টাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

কালের আলো/এএএন/কেএ