মেডিকেলে কোটায় ভর্তি কার্যক্রম আপাতত স্থগিত

প্রকাশিতঃ 6:27 pm | February 03, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে সমালোচনা ওঠার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ অবস্থায় এই শিক্ষাবর্ষে সব কোটাধারীদের ভর্তি কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর।

গত ১৭ জানুয়ারি এই শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি সব মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। তাতে উত্তীর্ণদের মেধা তালিকার ভিত্তিতে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময়সীমা আগামী ২-৮ ফেব্রুয়ারি। আর বেসরকারিতে ৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

কোটায় উত্তীর্ণদের ভর্তি কার্যক্রম আপাতত স্থগিতই থাকছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রুবিনা ইয়াসমিন।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী উপদেষ্টা পরিষদ সভার পর। উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে, এরপর সেটা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর জানাবে। মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটায় উত্তীর্ণদের ভর্তি প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিতই রাখছি আমরা। বিষয়টি ইতোমধ্যেই উপদেষ্টা পরিষদকে অবহিত করা হয়েছে।

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ইউনিটগুলোকে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত ৫ শতাংশ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা করা হয়। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে আগামী সভায়।

গত বৃহস্পতিবার রুবিনা ইয়াসমিন জানান, মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত যে ১৯৩ জনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার কথা ছিল, তাদের মধ্যে ৪৯ জন নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আসেনি।

সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, ১৯৩ জনকে আসতে বলা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৪৯ জন এখনও বাকি। আমরা তাদের রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) আসতে বলেছি। বাকিদের কাগজপত্র দেখা শেষ।

৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন ৫ হাজার ৩৭২ জন। তাদের মধ্যে ১৯৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় কম নম্বর পেয়েও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন- এমন যুক্তি দিয়ে শুরু হয় সমালোচনা।

মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অংশ নেয় এক লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ জন। ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, তাদের মধ্যে ৬০ হাজার ৯৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে; পাসের হার ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। পরীক্ষায় পাস নম্বর ছিল ৪০।

৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয় ৫ হাজার ৩৭২ পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৯৩ জন থাকার বিষয়টি সমানে আসার পর ‘কম নম্বর পেয়েও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন’- এমন যুক্তি দিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

প্রকাশিত ফলকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে সে রাতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী। তারা ফল বাতিলের দাবিও জানান। পরদিন ২০ জানুয়ারিতেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে সেদিন বৈঠক করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়।

অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রুবিনা সেদিন বলেছিলেন, আজ এ বিষয়ে আমাদের মিটিং ছিল। কারণ বিএমডিসি নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য এ কোটা নির্ধারিত। কিন্তু নাতি-নাতনিদের জন্য নয়। সেই হিসাবে এই কোটা রয়েছে। সন্দেহজনক ১৯৩ জনকে আমরা ডেকেছি। তাদের ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে এবং আমরা ওয়েবসাইটেও দেব।

সবকিছু যাচাই-বাছাই করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য তিনটা কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রতিদিন ৬৬ জনের কাগজপত্র যাচাই করা হবে। সবকিছু দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

এরপর গত ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি সব কাগজপত্রসহ তাদের ডাকা হয়।

এই ১৯৩ জনের ফল স্থগিত বলা যাবে কিনা- এমন প্রশ্নে অধ্যাপক রুবিনা ইয়াসমীন বলেন, আমরা ঠিক স্থগিত শব্দ বলছি না। বলতে পারেন, কাগজপত্র দেখার জন্য ডাকা হচ্ছে। সবকিছু যাচাই করা হবে, এরপর সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নীতিমালা অনুযায়ীই মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ৫ শতাংশ কোটা রয়েছে। কোটা অনুযায়ী তাদের জন্য গতবার ছিল ১০৮টি আসন; এবার রয়েছে ২৬৯টি আসন। এবার এ কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে ১৯৩ জন; বাকি ৭৬টি আসন এরই মধ্যে মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হয়েছে।

ওই ১৯৩ জন আসলেই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কি না, তারা নাতি-নাতনি হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিচ্ছে কি না বা অন্য কেউ মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুযোগ নিচ্ছে কি না- এসব যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। যাচাই-বাছাইয়ে কোনও ভুল বা অসত্য তথ্য পাওয়া গেলে সেই প্রার্থীর ভর্তি বাতিল হবে এবং মেধাতালিকা থেকে সেই শূন্য আসন পূরণ করা হবে।

দেশে মেডিকেল কলেজ ১১০টি। সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে আসন ৫ হাজার ৩৮০টি। বেসরকারি ৬৭টি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ২৯৩টি আসন রয়েছে। এছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ আছে।

সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয় এই পরীক্ষার মেধাতালিকার ভিত্তিতে। এই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই শুধু বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া যায়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা পদ্ধতি বিএমডিসি নীতিমালাতেই রয়েছে। সে অনুসারেই ফল প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স হিসেবে এখন তাদের সন্তানদের থাকার কথা না কোনও ভর্তি পরীক্ষায়। এই সুযোগটাই অন্য কেউ নিচ্ছে কি না, সেটাই যাচাই করা হবে।

কালের আলো/এএএন/কেএ