রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে কাটছে দুশ্চিন্তা
প্রকাশিতঃ 12:32 am | February 06, 2025
কালের আলো রিপোর্ট:
আসছে গরমের দিন। চাহিদা বাড়বে বিদ্যুতের। ফলে গরমে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। এর ফলে ৭০০ থেকে ১৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হতে পারে। তবে পুরো রমজান মাসকে লোডশেডিং মুক্ত রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান স্বয়ং এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফলে রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটতে শুরু করেছে।
জানা যায়, আগামী মার্চ দেশে গরম পড়তে শুরু করবে। একই মাসে শুরু হবে পবিত্র রমজান। শিগগিরই শুরু হচ্ছে সেচ মৌসুম। এ তিনে মিলে এবারের গ্রীষ্মে বিদ্যুতের বাড়তি চাপ থাকবে। এজন্য বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না হলে লোডশেডিং বাড়বে। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা এবার গরমে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন। আর চাহিদা ও সরবরাহে পার্থক্য বেশি হলে ভোগান্তিতে পড়বে সাধারণ মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বকেয়া না পাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী উদ্যোক্তারা প্রাথমিক জ্বালানি কিনতে পারছেন না। দিনদিন সরকারের কাছে বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছেই। গ্যাসের সংকট তীব্র হচ্ছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে উচ্চ দামের ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালাতে হবে। এতে সরকারের ব্যয় ও লোকসান দুটোই বেড়ে যাবে। এ ছাড়া লোডশেডিং হলে মাঠ পর্যায়ে সেচেও ডিজেলচালিত সেচপাম্পের খরচ বাড়বে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র মতে, বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে উৎপাদন সক্ষমতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে ঘাটতি আছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের সরবরাহে। চাহিদা মতো জ্বালানি না পাওয়ায় গেল দু’বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যাপক লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয়েছে গ্রাহককে। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে ১১ শতাংশের মতো। একই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে একই হারে। তবে গত বছরের মতোই সক্ষমতার বড় একটি অংশ বসিয়ে রাখতে হতে পারে জ্বালানির অভাবে।
একই সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে উৎপাদন সক্ষমতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে ঘাটতি আছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের সরবরাহে। চাহিদা মতো জ্বালানি না পাওয়ায় গেল দু’বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যাপক লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয়েছে গ্রাহককে। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে ১১ শতাংশের মতো। একই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে একই হারে। তবে গত বছরের মতোই সক্ষমতার বড় একটি অংশ বসিয়ে রাখতে হতে পারে জ্বালানির অভাবে। যদিও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে বন্ধ করতে না হয়, সেজন্য তাদের বকেয়াও পরিশোধ করা হবে। সম্পূর্ণ হয়ত করা যাবে না।
বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিদ্যুৎ ভবনে আসন্ন রমজান ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই উপদেষ্টা বলেছেন, আসন্ন গরম মৌসুমে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) সাতশ থেকে সর্বোচ্চ ১৪শ মেগাওয়াট লোডশেডিং হতে পারে। গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। তবে রমজানে লোডশেডিং মুক্ত রাখতে চেষ্টা করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৫ হাজার ৭শ মেগাওয়াট।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাসের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। রমজানে লোডশেডিং মুক্ত রাখতে অতিরিক্ত চার কার্গো গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করব। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখন ৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। রমজান মাসের জন্য ১২০ কোটি ঘনফুট এবং এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১০ কোটি গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে। গ্রীষ্মে মূলত সেচ ও এয়ারকন্ডিশনের জন্য চাহিদা বেড়ে যায়। আমরা সেচে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দিতে চাই। তবে এয়ারকন্ডিশনের লোড কমানোর চেষ্টা করা হবে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, প্রাথমিক জ্বালানি সমস্যার কারণে লোডশেডিং করতে হয়। রোজা এবং গ্রীষ্মে মৌসুমে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছি। যাতে করে জ্বালানি আমদানি করতে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট না হয়।
লোডশেডিংয়ের কারণ সম্পর্কে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, আর্থিক কারণে নয়, অপচয়ের কারণে লোডশেডিং বেশি হয়। তিনি বলেন, গ্রীষ্মে কুলিং লোডের (এসির লোড) পরিমাণ হচ্ছে ৬ হাজার মেগাওয়াট। আমরা যদি এসি তাপমাত্রা ২৪-২৫ রেখে চালাই, তাহলে দুই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট সাশ্রয় করা সম্ভব। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবার লোডশেডিং করার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করা হবে না। ঢাকা থেকে লোডশেডিং শুরু হবে। শহর গ্রামে সমান লোডশেডিং হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেসব কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বড় কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনায় যে কমিটি কাজ করছে, তাদের আইনি সহায়তা প্রয়োজন। সেটি নিয়ে কাজ চলছে। এছাড়া ট্যারিফ পুনর্মূল্যায়নের জন্য গঠিত কমিটি কাজ করছে। তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের বিদ্যুতের দামের বিষয়ে একটি বেঞ্চমার্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। মাতারবাড়ি কেন্দ্রের ইউনিট প্রতি খরচ হচ্ছে ৮ টাকা ৪০ পয়সা। এখন এই বেঞ্চমার্ক ধরে অন্যান্য কেন্দ্রের চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।
কালের আলো/আরআই/এমকে