স্মৃতিচারণায় জমে ওঠে পুনর্মিলনী উৎসবের মিলনমেলা, দেশ ও জাতি গঠনে ক্যাডেটদের অবদানের কথা সেনাপ্রধানের কণ্ঠে
প্রকাশিতঃ 9:38 pm | February 07, 2025
![](https://www.kaleralo.com/wp-content/uploads/WhatsApp-Image-2025-02-07-at-21.34.09_d758ad57-e1738942734225.jpg)
কালের আলো রিপোর্ট:
শীতার্ত মাঘ বিদায় নিচ্ছে বলেই দিনভর উজ্জ্বল সূর্যের তেজ চড়েছে। ঋতুরাজ বসন্তের হাওয়ার কাঁপন তখন প্রকৃতিতে। ফাল্গুনের টানের এই সময়টিতে চট্টগ্রামস্থ ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের মাঠ মুখর নানা বয়সী প্রাক্তন ক্যাডেটদের পদচারণে। একেকজন নিজ নিজ অঙ্গনে এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। মাঝখানে জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপেই ছিল সীমাবদ্ধ। কারও তো আবার ক্যাডেট জীবন শেষ হওয়ার পর আর যোগাযোগই হয়নি। ফলত দীর্ঘ সময় পর একে অন্যের সঙ্গে দেখা।
একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন বুকে। কেউ কেউ এসেছেন আবার তিন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়েই। অনেকটা আবেগাপ্লুত প্রত্যেকেই। আড্ডা, আলাপচারিতা, কুশল বিনিময় আর স্মৃতিচারণায় অন্য রকম এক অনুভূতি। জমে ওঠে মিলনমেলা। ক্যাডেট কলেজ প্রাঙ্গণের প্রাক্তনদের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছিল- ‘বন্ধু, কী খবর বল, কত দিন পর দেখা’, ‘এই মাঠেই তো খেলে বেড়াতাম, আজ চেনাই যায় না’ প্রভৃতি। তাঁরা বলছিলেন মনের গহিনে জমে থাকা নানা কথা। দীর্ঘ সময় পর পুরনো বন্ধু এক্স ক্যাডেটদের কাছে পেয়ে মেতে ওঠেন আনন্দে।
ছুটির দিনের মৌনতা ছাপিয়ে শুক্রবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) এমনই জমজমাট ছিল বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ। এই ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ক্যাডেটদের সংগঠন ওল্ড ফৌজিয়ান এসোসিয়েশন (ওফা) এর আয়োজনে তিন দিনব্যাপী পুনর্মিলনী উৎসবের দ্বিতীয় দিনের মিলন মোহনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। দেশের সর্বপ্রথম এই ক্যাডেট কলেজের পুনর্মিলনী উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি দেশ ও জাতি গঠনে ক্যাডেটদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। নতুন ক্যাডেটদের মন-মননে গেঁথে দেন সাফল্যের মন্ত্র। সুনাগরিক ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠতে জানান আহ্বান।
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সর্বপ্রথম ক্যাডেট কলেজ। ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ‘ইস্ট পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজ’। মহান স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাটে অবস্থিত এই ক্যাডেট কলেজটির পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ। পড়াশোনা ছাড়াও শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিভিত্তিক, চারিত্রিক, সাংস্কৃতিক ও নেতৃত্বের বিকাশে এই ক্যাডেট কলেজের জুড়ি মেলা ভার। দেশের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে এই ক্যাডেট কলেজটির। কলেজটির প্রাক্তন ক্যাডেটরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান ক্যাডেটদেরকে অর্জিত জ্ঞানকে দেশ ও জাতির উন্নতির কাজে লাগানোর আহ্বান জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এর আগে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ প্রাঙ্গনে এসে পৌঁছলে ক্যাডেট কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান, কলেজ অধ্যক্ষ মিসেস মাহিনুর আক্তার এবং ওল্ড ফৌজিয়ান এসোসিয়েশন (ওফা) এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) আবদুল মতিন তাকে অভ্যর্থনা জানান। সেনাবাহিনী প্রধান অনুষ্ঠানস্থলে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী প্রাক্তন বীর সেনানী ক্যাডেটদের স্মরণে নির্মিত ‘৭১ এর ফৌজিয়ান’ এ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। বর্তমান ও প্রাক্তন ক্যাডেটদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য প্যারেডে তিনি সালাম গ্রহণ করেন। পরে কলেজ অধ্যক্ষ মিসেস মাহিনুর আক্তার তাকে ক্রেস্ট উপহার দেন। এ সময় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মাহাবুবুস সামাদ চৌধুরীসহ ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ক্যাডেটরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, এই ক্যাডেট কলেজের সাবেক ক্যাডেটদের সংগঠন ওল্ড ফৌজিয়ান এসোসিয়েশন (ওফা) এর উদ্যোগে এবার পুনর্মিলনী উৎসবকে ঘিরে আগেই বর্ণিল সাজে সাজানো হয় কলেজের বিভিন্ন স্থাপনা। কলেজের ভবন ও আশপাশের ভবনে করা হয় আলোকসজ্জা। বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তিন দিনব্যাপী পুনর্মিলনী উৎসবের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ ও ত্রাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক। তিনি অন্যায়, অবিচার, মিথ্যাচার দূর করে সত্যাশ্রয়ী ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে দেশের প্রশিক্ষিত ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
স্মৃতিজড়ানো ক্যাডেট কলেজের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেন ফিরে গিয়েছিলেন হারানো সেই সোনালি ক্ষণে। তারুণ্যের দুরন্তপনার সঙ্গীদের সঙ্গে দিনভর আবেগ-উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। হালের ট্র্যান্ড সেলফি তোলায় ব্যস্ত থেকেছেন প্রত্যেকে; বন্দি হয়েছেন স্মৃতির ফ্রেমে। শনিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ভাঙবে সেই মিলনমেলা। যাওয়ার বেলায় বিদায়ী বন্ধুরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হয়তো বলবেন-‘আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো।’
কালের আলো/এমএএএমকে