মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আইসিসি

প্রকাশিতঃ 9:24 am | February 08, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে টার্গেট করা হচ্ছে দাবি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তিনি এ-সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন। আদেশে হুমকি দেওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ তার মিত্রদের বিরুদ্ধে যারা তদন্ত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন বাস্তবিক ও শক্ত পদক্ষেপ নেবে। এ ধরনের তদন্ত জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

গতকাল শুক্রবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ ধরনের বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত বিরল। গাজায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে গত নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকারের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আইসিসি। এ সিদ্ধান্তকে বিশ্বব্যাপী স্বাগত জানানো হলেও কড়া সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।

ট্রাম্প তাঁর আদেশে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে এর প্রারম্ভিক তদন্ত ভয়ানক নজির স্থাপন করেছে। এর সঙ্গে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এতে তাদের অপমানিত হওয়া বা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এটা করার কোনো আইনি বৈধতা আইসিসির নেই। তিনি আইসিসির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারেরও অভিযোগ তোলেন।

ট্রাম্প প্রশাসন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার মধ্যে আছে– আইসিসি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সম্পদ ক্রয় করতে পারবে না, আদালতের কোনো কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্য দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না।

বিবিসির প্রতিবেদন জানায়, নির্বাহী আদেশে এ নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের হেগের আদালত। শুক্রবার এক বিবৃতিতে আইসিসি বলেছেন, তারা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আছেন। ট্রাম্পের এ ধরনের আদেশ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিবৃতিতে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার চালিয়ে যাওয়া ও লাখ লাখ নির্দোষ ভুক্তভোগীর আশা হয়ে থাকার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এর আগে ইউক্রেন আগ্রাসনের জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও রোহিঙ্গা নিপীড়নের দায়ে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আইসিসি। যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১২০টি দেশ এর সদস্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল সেখানে নেই।

প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় কতটুকু ক্ষতির মুখে পড়বে আইসিসি। আদালতের সাবেক কর্মকর্তা এরিক উইট ব্রাসেলস থেকে আলজাজিরাকে বলেন, এটা নির্ভর করছে সদস্য দেশগুলোর ওপর। তাদের অবশ্যই আইসিসির সমর্থনে এগিয়ে আসতে হবে। আইসিসি দুর্বল হলে কেবল ফিলিস্তিনিই নয়, ইউক্রেন, সুদান, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম চালানো কঠিন হবে।

জার্মানি বলেছে, ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা দিলেও তারা আইসিসিকে সমর্থন দিয়ে যাবে। আর ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান বলেছেন, কোনো ধরনের বাধা ছাড়া আইসিসিকে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী দায়মুক্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে দিতে হবে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, আন্তর্জাতিক অপরাধের জবাবদিহির নিশ্চয়তা দেন এ আদালত। ইউরোপ সব সময় ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশে থাকবে।

কালের আলো/এসএকে