গাজায় ধ্বংসস্তূপে মিলল ৭ লাশ, ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৪

প্রকাশিতঃ 9:28 am | February 10, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ৭ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ২০০ জনে পৌঁছেছে।

এছাড়া অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। টানা ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গত মাসেই ভূখণ্ডটিতে সংঘাতের অবসান হয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরায়েলি হামলা ও ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটল।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও রোববার গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে ভূখন্ডটির একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, শহরের পূর্ব দিকে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর পর তিনজনের মরদেহ গাজা শহরের ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজা শহরের পূর্বে অবস্থানরত ইসরায়েলি বাহিনী শহরের কাছে কুয়েত গোলচত্বরের পূর্ব দিকে তাদের এলাকায় ফিরে যাওয়ার সময় একদল ফিলিস্তিনিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, নেটজারিম করিডোর থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার পরে ফিরে আসা ফিলিস্তিনিরা তাদের এলাকাগুলো পরীক্ষা করার চেষ্টা করছিল, ওই করিডোর উত্তর গাজাকে দক্ষিণ গাজা থেকে আলাদা করেছে।

এছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বে আল-কারারায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে একজন বয়স্ক ফিলিস্তিনি নারীও নিহত হয়েছেন বলে মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরও ৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪৮ হাজার ১৮৯ জনে পৌঁছেছে বলে রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে দুজন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন এবং তারাও প্রাণহানির এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আরও ২ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে করে ইসরায়েলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৬৪০ জনে পৌঁছৈছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এরপর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর থেকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে পৌনে ৬ শতাধিক লাশ উদ্ধার করেছেন।

তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

কালের আলো/এএএন/কেএ