আতঙ্কে দিন কাটছে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শিক্ষার্থীদের
প্রকাশিতঃ 12:51 pm | February 10, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কাওসার হামিদ। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শিক্ষার্থী। শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেছিলেন তিনিসহ আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার পর থেকেই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অনলাইনে-অফলাইনে অনবরত তাদের হুমকি দিচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে তাদের বাবা-মায়ের মোবাইলে ফোন করেও। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্তসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা এসব কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছে।’
একই রকম অভিযোগ করেন আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুলাইমান আলী। তিনি বলেন, ‘যেসব নম্বর থেকে ফোনকল করা হচ্ছে তার কয়েকটি বাংলাদেশের। বাকিগুলো বাইরের। তারা কল দিয়ে এত জঘন্য ভাষায় গালাগালি করে যেগুলো মুখে নেওয়ার মতো নয়। নারী শিক্ষার্থীসহ সবাইকে এক এক করে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে। পরে সেখানে একসঙ্গে অনেকজন মিলে গালিগালাজ করে। তারা নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফেক ছবি এবং ভিডিও বানিয়ে সেগুলো অনলাইনে ছেড়ে দিচ্ছে, যা ওই শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর।’
শুধু কাওসার বা সুলাইমানই নয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের ঠিক এমনভাবেই প্রতিনিয়ত সাইবার বুলিং’র শিকার হতে হচ্ছে। তাদের প্রাণনাশসহ নানান ধরনের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। কোন অবস্থাতেই রেহাই মিলছে না তাদের। ফলে মানসিকভাবেই আতঙ্কের দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। টার্গেট করে এসব শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক অত্যাচার করে চলেছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলার ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি ফোনকলে হত্যা ও পরিবারের ক্ষয়ক্ষতির হুমকি, সামাজিক মাধ্যমে হয়রানি ও ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে হয়রানিসহ নানান হুমকির ঘটনা ঘটেছে প্রতিনিয়ত।
এসব ঘটনায় আইন বিভাগের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা তথ্য-প্রমাণসহ রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে হুমকিদাতা ৩০টি ফেসবুক আইডি এবং ১০টিরও বেশি দেশি-বিদেশি নম্বর উল্লেখ করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
সাধারণত সাইবার বুলিং বলতে এক ধরনের মানসিক বা মৌখিক অত্যাচার বোঝায়। যেখানে একজন মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যকে অপমান করে, হুমকি দেয় বা হেনস্তা করে। সাইবার বুলিংয়ের ক্ষেত্রে, এই অত্যাচার ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম বা অনলাইন ফোরাম ব্যবহার করে। এটি ব্যক্তির মানসিক শান্তি নষ্ট করে এবং অনেক সময় সামাজিকভাবে তাকে একঘরে করে তোলে। গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সাইবার বুলিং অব্যাহত রেখেছে।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিসা ইসলাম সাকাফিও সাইবার বুলিং ও হুমকির শিকার হয়েছেন। একই রকম ঘটনা ঘটেছে ‘অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন’ নামের একটি সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গেও। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবের গ্রাফিতি নতুন করে এঁকেছিলেন এবং সেখানে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করেছিলেন। এছাড়া সম্প্রতি চট্টগ্রাম, গাজীপুর, রংপুর, গোপালগঞ্জসহ সারাদেশে প্রথমে হুমকি এবং পরবর্তী সময়ে হামলার ঘটনা দৃশ্যমান হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘এটি আসলেই অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যদি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে একটি হুমকিও বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তাহলে ছাত্রদল সামনে থেকে সেটি প্রতিহত করবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ছাত্রদল সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, এখনো সাইবার বুলিংয়ের বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাজনক। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব দমাতে অসহযোগিতামূলক আচরণ করছে। আমি নিজেও থানায় জিডি করেছিলাম, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলেই এদের শনাক্ত করতে পারে, কিন্তু তারা তা করছে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে প্রশাসন ও অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যেহেতু আন্দোলন থেকেই গড়ে ওঠা, তাই এর দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা অনেকগুলো সেল তৈরি করেছি। লিগ্যাল সেল আছে, হটলাইন নম্বরও আছে। এগুলোর মাধ্যমে যারা বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন তাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ব্যাপারে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।’
কালের আলো/এমএইচ/ইউএইচ