সাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর: তদন্ত নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় পরিবার
প্রকাশিতঃ 1:37 pm | February 11, 2025
![](https://www.kaleralo.com/wp-content/uploads/Untitled-113.webp)
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও উদঘাটন হয়নি আলোচিত এ হত্যা মামলার রহস্য।
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও তদন্ত নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছে না তাদের পরিবার। তদন্ত নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে চুরি বা ডাকাতির মতো কিছুর দোহাই দিলে সেই তদন্ত মেনে নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন সাগর সারওয়ারের মা সালেহা মনির।
এ মামলায় সবশেষ গত ২৭ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। সেদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ মার্চ নতুন দিন ধার্য করেন। সব মিলিয়ে মামলাটিতে রেকর্ড ১১৫ বার তদন্ত প্রতিবেদনের তারিখ পেছাল।
এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও দুই সহকর্মী হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের এদিন রাতে আমাদের প্রিয় দুই সহকর্মী সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনী নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন। ১৩ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু প্রকৃত হত্যাকারীদের এখনো শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াও থমকে আছে। নিষ্ঠুর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে ডিআরইউসহ গোটা সাংবাদিক সমাজ আজও সোচ্চার।
মামলাটি তদন্তের জন্য এক যুগ র্যাবের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সংস্থাটি দীর্ঘদিনেও তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আলো দেখা যাচ্ছিল মামলার তদন্তে। হাইকোর্টের আদেশে নতুন করে তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
তবে মামলাটি তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে কোনো আশার বানী শুনাতে পারেননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কিছু বলা যাবে না। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিল করবো।
মেয়ে হত্যার শোক নিয়েই তিন বছর আগে মারা যান মেহেরুন রুনির মা নুরুন নাহার মির্জা। তবে মৃত্যুর আগে অন্তত ছেলে হত্যার কারণ জানতে চান সাগর সারওয়ারের মা সালেহা মনির। তিনি বলেন, শুধু এটুকু দেখে যেতে চাই কেন, কিসের জন্য ওদের খুন করা হলো। এরপর কি (বিচার) হলো না হলো জানার দরকার নেই। ছেলের কবরস্থানে এখনো যাইনি। রুনির মা তো চলে গেছে। এখন আমি একা আছি। দেখি আল্লাহ ভরসা।
তদন্ত নিয়ে এখনও যে সালেহা মনির খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন তা নয়। তিনি বলেন, অন্ধকারে পড়ে আছি। প্রত্যাশার বা আশার কিছু নেই। তখনই বলেছিলাম র্যাব এ মামলার তদন্ত করতে পারবে না। তারা বারবার সময় নিচ্ছে। না পারলে তদন্ত ছেড়ে দিক। এখন পিবিআই তদন্তভার নিয়েছে। তারা এসেছিলেন। দেখি কতদূর কি করেন। এরপর বুঝবো কতদূর অগ্রসর হতে পারেন।
তবে চুরি-ডাকাতির দোহাই দিলে মেনে নেবেন না। তিনি বলেন, তাদের একটা কথাই বলেছি, চুরি বা ডাকাতির দোহাই দেবেন না। আমি এটা মেনে নেব না। চোর চুরি করতে এলে চুরি করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাবে। আর ডাকাতরা অস্ত্র নিয়ে আসবে, তারা মারবে না। এটা বলে দিয়েছি।
মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, আমরা বিচার চাই। আর নতুন করে চাওয়ার কি আছে। সরকার ৬ মাস সময় দিয়েছে। দেখি, অপেক্ষা করি কি দাঁড়ায়। তবে নতুন করে চাওয়ার কিছু নেই। বিচার চাই। জানি না বিচার হবে কি না।
মামলাটিতে এ পর্যন্ত রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অপর আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিন আছেন। অন্য আসামিরা কারাগারে আছেন।
দীর্ঘদিনে তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে আসামিপক্ষও। আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আবু সাইদ সিদ্দিকী (টিপু) বলেন, মামলাটা নিয়ে আমরা পরিশ্রান্ত। বারবার বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। আমরা পরিশ্রান্ত। পরিত্রাণ চাই।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটনের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই সরকারের আমলে ১২ বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি র্যাব।
কালের আলো/এএএন/কেএ