রুনা খানের ভাইয়ের ব্যতিক্রমী নজীরে আপ্লুত নেটিজেনরা
প্রকাশিতঃ 5:01 pm | February 11, 2025
![](https://www.kaleralo.com/wp-content/uploads/479179195_10235292999766503_2971219942859868292_n_20250211_151519492-e1739271709728.jpg)
বিনোদন ডেস্ক, কালের আলো:
পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে মাঝে মাঝেই ভাই-বোনের মাঝে বিবাদের খবর শোনা যায়। বিখ্যাত ব্যক্তিদেরও পোহাতে হয় এই ঝাক্কি। সম্প্রতি অভিনেত্রী পপির সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের বিবাদই বড় উদাহরণ।
তবে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী নজীর সৃষ্টি করলেন অভিনেত্রী রুনা খানের ভাই। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তিতে কন্যা সন্তানের ভাগ পুত্র সন্তানের অর্ধেক। তবে সে পথে না হেঁটে বাবার সম্পত্তি দুই ভাই বোনের মধ্যে সমান ভাগ করলেন। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ভাগ করে নিয়েছেন রুনা খান।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি ) নিজের ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন রুনা। লিখেছেন, তুহিন খান বয়সে আমার দেড় বছরের ছোট,কিন্তু পড়াশুনায় ৫ বছর পেছনে! আম্মা-আব্বু আমাকে ৫ বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলে সরাসরি ক্লাস টুতে ভর্তি করান। আর তাকে ৫ বছরে প্লে-গ্রুপে, কিন্ডার-গার্ডেনে, ক্লাস টু উঠতে উঠতে তার বয়স ১০।
এরপর লেখেন, আব্বু ১৯৯৮ সালে বিএডিসি থেকে গোল্ডেন-হ্যান্ডশেকে রিটায়ার করেন। আমি এসএসসি পাশ করেছি মাত্র। তুহিন ক্লাস সেভেনে পড়ে। সরকারি সৎ চাকরিজীবীর ছোট্ট মহাসুখী পরিবার, অঢেল প্রাচুর্য নেই তবে আর্থিক সংকট কী জিনিষ তাও জীবনে কখনও দেখিনি। আব্বুর বেতনের টাকায় মহাসুখে খেয়ে-দেয়ে দুই ঈদে নতুন জামা-জুতা পরে কেটেছে আমাদের দুই ভাইবোনের জীবন।
অভিনেত্রীর কথায়, আমি এইচএসসি পাশ করার পর জানতে পারলাম আব্বুর রিটায়ারমেন্টের সব টাকা শেষ। আব্বুর চোখে রেটিনা সমস্যা তিনি দেখতে পান না ঠিকমতো। কোনো কাজ বা রোজগার তিনি আর করতে পারবেন না! সম্পদ বলতে সখীপুরে বাবার চাকরির টাকায় কেনা ২৫ কাঠা জায়গার ওপর বিশাল এক বাড়ি! শাক-সবজি,ফলমুল,মুরগি-ডিম-গরুর দুধ-বাড়ি ভাড়া কিছুই লাগে না। সব নিজেদের কিন্তু মাসিক কোনো রোজগার নেই!
রুনা লেখেন, ততদিনে আমি ইডেনে অনার্স ভর্তি হয়ে গেছি। তুহিন ক্লাস নাইনে। পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি! টিউশনি-কোচিংয়ে পড়ানো, কুরিয়ার-সার্ভিস অফিসে চাকরি— এসব করে ঢাকায় নিজে চলি,বাড়িতে টাকা পাঠাই। সেই টাকায় ভাইয়ের লেখাপড়া,বিদ্যুৎ বিল অন্যান্য খরচ চলে! তারপর শুরু হলো টিউশনির পাশাপাশি,অভিনয় করে উপার্জন। এভাবেই চলছিল সংসার! ভাইয়ের পড়াশুনা শেষ হলো। তারপর ২০০৯ এ আমার বিয়ে, ভাইয়ের চাকরি।
তিনি লিখেছেন, ২০০১-২০০৯ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি থেকে ২০০৯-২০১৬ এমন জীবন-যাপন করছে, যেখানে তার ১ টা টাকা সংসারের পেছনে খরচ করতে হয় না, না নিজের সংসার, না মা-ভাইয়ের সংসার! দায়িত্ব ফুরালো রুনা বিবির!
আরও লেখেন, রয়ে গিয়েছিল সখিপুরের ২৫ কাঠার বাড়িটা। ভাই বিক্রি করল! ধরুন ১০ টাকা ভাগ করল! তার ৫ টাকা রেখে আমার ৫ টাকা ব্যাংকে দিয়ে গেল! সবাই তাকে বোঝায় তুমি সাড়ে সাত টাকা পেলে তোমার বোন পাবে আড়াই টাকা। এটাই দেশের নিয়ম! তুমি তাকে ৫ টাকা কেন দিচ্ছ? সে বলে, ”আমি দেশের নিয়ম মানি না!” আর তোমার রোজগার ১ টাকা হলে, তোমার বোনের রোজগার ১০ টাকা! তোমার ১ টাকার সম্পত্তি থাকলে, তোমার বোনের আছে ১০ টাকার সম্পত্তি! কেন তাকে বাবার জমির ভাগ অর্ধেক দিবা?
এরপর লিখেছেন, আমার ভাই বলে,“রুনার আমার থেকে ১০ গুণ বেশি আছে তাই অর্ধেক দিলাম, নইলে ওকে পুরাটা দিতাম! বাপের ২৫ কাঠা জমি যে ২৫ বছর আগেই বেঁচে খেতে হয়নি, তার কারণ রুনা! আব্বুর রিটায়ার করার পর কোনো একটা আত্মীয়-স্বজন ১টা টাকা দিয়ে সাহায্য করেনি, রুনা জীবনে ১ টা টাকা কারোর কাছে সাহায্য চায়নি, ধার করেনি! ১৮ বছর বয়স থেকে টিউশনি করে নিজে চলেছে, সংসার চালিয়েছে, আমাকে মানুষ করে! এজন্যই তো এই জমি আছে, নইলে তো জমি কবেই বেঁচে খেতে হতো! আব্বুর জমির পুরাটা ওর ভাগ! ওর অনেক আছে তাই ওর ভাগ থেকে অর্ধেক আমি নিলাম!”
অভিনেত্রী লিখেছেন, আমি যা করেছি তা এই দেশের বহু মেয়ে হয়তো পরিবারের-ভাইয়ের জন্য করে! তবে আমার ভাই যা করল গত সপ্তাহে, তা এই দেশের কয়জন ভাই বাপের সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে বোনদের সাথে করে, তা ঠিক জানি না!
সবশেষে রুনা লেখেন, আমার থেকে শেখার তেমন কিছু না থাকলেও, আমার ভাইয়ের থেকে এদেশের ছেলেরা শিখতে পারেন। মনে মনে হাসি আর ভাবি,অর্থ-বিত্ত-বিখ্যাত না হলেও ভাই আমার মানুষ হয়েছে.. সত্যিকারের মানুষ!
নেটিজেনদের অনেকেই রুনা খানের ভাইয়ের ব্যতিক্রমী এ নজীরে আপ্লুত। মন্তব্যের ঘরে প্রকাশ করেছেন তা। ভাসিয়েছেন প্রশংসায়।
কালের আলো/এএএন/কেএ