ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের জনমত জরিপে সাড়া

প্রকাশিতঃ 9:21 am | February 13, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয় শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। দেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা যুক্ত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছেন তারা। তারই ধারাবাহিকতায় এবার দেশের মানুষের কাছে দলের নাম ও প্রতীক চেয়েছে শিক্ষার্থীদের এই দুটি প্ল্যাটফর্ম। পাশাপাশি দেশের মানুষের চিন্তা, প্রত্যাশা, পরামর্শ চেয়ে জনমত জরিপ ও মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে। শুরু করেছে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন। দেশ পরিবর্তনে তিনটি পরামর্শও চাওয়া হচ্ছে তাদের জরিপে।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, কার্জল হলসহ রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী বুথ বসিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দিনমান রাজধানীর পান্থপথ সিগন্যালের পাশে একটি বুথে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে ভিড় করতে দেখা গেছে। সেখানে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে বিভিন্ন লিখিত মতামত জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এতে নতুন দলের নাম কী হবে, মার্কা কী হবে-এমন নানা প্রশ্নে নিজেদের আকাক্সক্ষার কথা জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের সাড়া পাচ্ছেন তারা। তাদের প্রত্যাশা, ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করবে নতুন এই রাজনৈতিক দল।

এর আগে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেয়া এক পোস্টে এই ক্যাম্পেইনের কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন একসময় দুই সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময়ের গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিল বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্র-তারুণ্য। সেই তরুণরাই গঠন করতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল। আর সেই দল গঠনে আমরা জানতে চাই ছাত্রসমাজের প্রত্যাশা। ছাত্রসমাজের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়েই গঠন করা হবে নতুন রাজনৈতিক দল। সেই লক্ষ্যে আমরা শুরু করেছি ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ নামক ক্যাম্পেইন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অস্থায়ী বুথগুলোতে ফরম পূরণের উদ্দেশ্যে অনেকেই আসছেন। ফরমে দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে। ফরমরে প্রশ্নে রয়েছে নাম, পেশা, জেলাসহ একাধিক প্রশ্ন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো হচ্ছে-আপনার মতে কোন তিনটি কাজ করলে দেশ বদলে যাবে? নতুন রাজনৈতিক দলের কাছে আপনার জীবনের সমস্যার সমাধান চান? নতুন দলের কাছে কী প্রত্যাশা করেন? দলের নাম কী হতে পারে এবং দলের মার্কা কী হবে? শিক্ষার্থী, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে এই ফরম পূরণ করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছেন।

ফরম পূরণের পর কথা হলো রবিউল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি লিখেছেন- ‘দুর্নীতি দূর করতে হবে, বেকারত্ব দূর করতে হবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন করতে হবে।’ তিনি এই দলের কাছে প্রত্যাশা করেন সততা, যোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা। আরিফুল ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ী লিখেছেন- আমি এ দেশের একজন নাগরিক, এটি যেন স্বাধীনভাবে বলতি পারি।’ সুন্দর একটি আদর্শে দেশ গড়ে তোলার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, সেটা প্রত্যাশা করেন তিনি।

বুথে বসা কলাবাগান থানার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি মাহবুব গাজী বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বুথ চালু থাকে। আমাদের এই ক্যাম্পিং চলবে টানা তিন দিন। তবে বেড়ে সপ্তাহব্যাপী হতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীদের একটি টিম পালাক্রমে কাজ করছে। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০টির মতো লিখিত ফরম জমা পড়ছে। এদিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত জমা পড়েছে প্রায় ১০০টি।’

জানা গেছে, রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশে এই জরিপ চালাবেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা। জরিপ শেষ হলে শিক্ষার্থীদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে নতুন রাজনৈতিক দলের সূচনা করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাংস্কৃতিক সেলের সদস্য সাইফুল্লাহ বলেন, ‘ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত নিচ্ছি। ছয়টি বুথে এই কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়ার পর সারা দেশে এই জরিপ চলবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। সম্ভাব্য নতুন দলটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটির অনেকেরই অংশগ্রহণ থাকবে। তবে নতুন দল গঠিত হলেও জাতীয় নাগরিক কমিটির বিলুপ্তি হবে না। নতুন দলের কারণে বিলুপ্ত হবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও। এই দলে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে অভ্যুত্থানের পক্ষের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগম ঘটানোর চেষ্টা করা হবে। বিশেষ করে নাগরিক কমিটিতে থাকা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীসহ এর বাইরে অনেকেই রয়েছেন, তারা স্থান পাবেন এ দলে। পাশাপাশি বিরাজমান রাজনৈতিক দলগুলো থেকে কেউ এ দলে আসতে চাইলে তাদেরও স্বাগত জানানো হবে।

এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রাথমিক আলোচনা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে থাকা তিন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ এর মধ্যে থেকে একজন পদত্যাগ করে দলের নেতৃত্ব নেবেন। অন্য দুজন আরও পরে সুবিধাজনক সময়ে পদত্যাগ করে দলে যোগ দিতে পারেন। ওই দুজনের একজন আগামী জুন মাসে উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দলে যোগ দিতে পারেন।

কালের আলো/এমকে