এডিপি বাস্তবায়নে গতিহীন ১১ মন্ত্রণালয়-বিভাগ
প্রকাশিতঃ 9:19 am | February 14, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এই সময়ে ৫৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গতবার একই সময়ে খরচের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। চলতি বছরে বাকি রয়েছে মাত্র ৫ মাস। এই সময়ে খরচের টার্গেট ২ লাখ ১৮ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। কারণ চলতি বছরে মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা।
দেখা গেছে, এডিপি বাস্তবায়নে গতি নেই ১১ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয়ে সব থেকে পিছিয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাতটি প্রকল্পে ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। পাকিস্তান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনেই ও সৌদি আরবে সাতটি চ্যান্সারি কমপ্লেক্স তৈরির জন্য আলাদাভাবে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৪৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাস্তবায়নের হার মাত্র শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে মোট বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। সাত মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ০ দশমিক ৪০ শতাংশ বা ১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এই দুই মন্ত্রণালয় ছাড়াও ৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গত সাত মাসে তাদের বরাদ্দের মাত্র ১০ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো- স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ৫ দশমিক ১৫, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ৯ দশমিক ৬৬; জননিরাপত্তা বিভাগে ৭ দশমিক ২২; মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৯ দশমিক ১৬; সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৬ দশমিক ৪৭, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৭ দশমিক ৪১; অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৭ দশমিক ০৫, ভূমি মন্ত্রণালয়ে ৫ দশমিক ৩১ ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ প্রতিবেদনে মিলেছে এমন চিত্র। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এডিপি বাস্তবায়নের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আইএমইডি। জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসের হিসাবে এডিপিতে গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এর মানে আগের বার প্রকল্পের মাধ্যমে যত টাকা খরচ করা হয়েছে, এবার তা-ও ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়েছে এবার। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন; ক্ষমতার পটপরিবর্তন এবং ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়া—এসব কিছুর প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে।
আইএমইডির তথ্য বলছে, এর আগে জুলাই-জানুয়ারি হিসাবে কোভিডের বছরে (২০২০-২১ অর্থবছর) ৬১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। পরের দুই বছরে প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা করে খরচ হয়েছিল। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭১ হাজার ৫৩২ কোটি এবং ২০২০-২১ অর্ধবছরে ৬১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।
আইএমইডি জানায়, গত জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপির মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এই সময়ে ৫৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গতবার একই সময়ে খরচের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। এর আগে জুলাই-জানুয়ারি হিসাবে কোভিডের বছরে (২০২০-২১ অর্থবছর) ৬১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। পরের দুই বছরে প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা করে খরচ হয়েছিল।
কালের আলো/আরআই/এএইচ