উন্নয়ন ও সেবার ভিশন মেয়র টিটু’র!
প্রকাশিতঃ 3:56 pm | February 20, 2018
অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো:
তাঁর বাসার ড্রয়িং রুম থেকে পৌরসভার কক্ষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াত। কোনরকম বাধা নেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে। দুর্যোগ-দুর্বিপাক বা কোন সমস্যা হলে মুহূর্তেই ছুটে যান। আবার তাঁর সকালটাও শুরু হয় সমসাময়িক অন্য দশটা রাজনীতিকের মতোন নয়। নিত্য সকালেই তাঁর বাড়ির চৌহুদ্দিতে থাকে জনারণ্য।
আগন্তুক স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সম্পর্কের মেলবন্ধন স্থাপনেই বিনয় আর হাসিমুখেই কথা বলেন। সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানও দেন। প্রায় প্রতিদিনই ছুটে যান কম করে হলেও ১০ থেকে ১৫ টি কর্মসূচি বা সামাজিক অনুষ্ঠানে। এসব নিয়েই যেন নিজের ‘রুটিন ওয়ার্ক’ সাজিয়েছেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু।
তিনি ময়মনসিংহ মহানগর আ’লীগেরও অন্যতম শীর্ষ নেতা। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা তাকে ব্যক্তি ও দলের ঊর্ধ্বে দিয়েছে বিশেষ স্থান। সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা তাকে করে তুলেছে তুমুল জনপ্রিয়।
এক সময় অবহেলিত, বঞ্চিত, অনুন্নত ও বৈষম্যের শিকার ছিল ময়মনসিংহ। একদিকে ছিলো সচেতনতার অভাব আর অন্যদিকে হাহাকার। এখানে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখা মানুষজনের একজন ছিলেন ইকরামুল হক টিটু। এরপর মেয়র নির্বাচিত হয়েই ময়মনসিংহ নগরীর উন্নয়নের রূপকল্প তৈরি করেছেন।
পৌরসভার বাসিন্দাদের কল্যাণ আর সেবার ভিশন নিয়ে কাজ করছেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা তো বটেই স্থানীয় নাগরিকরাও তার উৎসাহ, উদ্দীপনায় বিমুগ্ধ, আশ্বস্ত এবং সম্মোহিত। মানব কল্যাণের মিশনই ইকরামুল হক টিটুকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছে।
ইতিহাস, ঐতিহ্যের জনপদ, ব্রক্ষপুত্র অববাহিকায় তখন চলছে তরুণ এক নেতার বিকাশ পর্ব। সময়টা প্রায় ৮ থেকে ৯ বছর আগের। তখন ইকরামুল হক টিটু ময়মনসিংহ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তার প্রথম লক্ষ্যই ছিল অনুন্নয়নের বৃত্ত থেকে ময়মনসিংহকে বের করে আনার। সেই লক্ষ্য পূরণে তিনি সফলও হয়েছেন। দারিদ্র্য দূর করার ব্রত নিয়েও রাজনীতি করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এ দেশের মাটি বর্ষায় যেমন কোমল চৈত্রের রোদে তেমনি কঠিন হয়। ময়মনসিংহবাসী দেখেছে মেয়র টিটু’র হৃদয় তাদের জন্য বর্ষার মাটির মতো কোমল আবার জঙ্গী বা আগুন সন্ত্রাসীদের জন্য চৈত্রের মাটির মতো কঠিন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে মেয়রদের ভূমিকা রাখার জায়গা রয়েছে।
সেবার মনোভাব নিয়ে ইতিবাচকভাবে কাজ করার চেষ্টা করেন মেয়র টিটু। নগরীকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর চেষ্টাও চালাচ্ছেন। ভোটারদের প্রতি তার ‘কমিটমেন্ট’ ছিল। তিনি বলেন, আধুনিক নগরায়নের জন্য দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এজন্যই শুধু খুশি থাকলেই হবে না। তাদের জন্যও সব সময় কাজ করার চেষ্টা করেছি।’
জানা যায়, সাধারণত নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা নাগরিক সমস্যা সমাধানের কথা বলে বিগলিত হয়ে ভোটারদের দূয়ারে ভোট প্রার্থনা করেন। বিনয়ী আচরণ আর মধুমাখা কথায় ভোটারদের মন গলানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালান। আর নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেয়ার পরই বদলে যায় তাদের মুখের কথা। আশ্বাস প্রতিশ্র“তিতেই নির্দিষ্ট সময় পেরুনোর পর ভোটাররাও মুখ ফিরিযে নেন। কিন্তু এমনটি নন মেয়র ইকরামুল হক টিটু। নিজের প্রতিটি দিনকেই তিনি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি বলেই মনে করেন। সেভাবেই পাবলিকের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ‘রাউন্ড দ্যা ক্লক’ সেবার মনোভাবে তিনি সক্রিয়।
উন্নয়নের উদাহরণ মেয়র টিটু গত ৮ বছরে ময়মনসিংহ নগরবাসীকে প্রায় ২৬০ কোটি টাকার মতো দুই শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প উপহার দিয়েছেন। তার হাত ধরেই নতুন আদল পেয়েছে নগরীর ব্রক্ষপুত্র নদঘেষা জয়নুল উদ্যান। আধুনিকতার মিশেলে বিপিন পার্কও আধুনিকায়ন সৌন্দর্য্য বর্ধনের দৃষ্টান্ত।
জয়নুল উদ্যানে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, শরীরচর্চা ও শিশু বিনোদন কেন্দ্র, দু’টি মঞ্চ, মহিলাদের নামাজের স্থান, পাঠাগার, পাবলিক টয়লেট, ফোয়ারা, বাগান, হাঁটার পথসহ হরেক রকমের গাছগাছালি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন প্রয়াত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। কীর্তিমান এ রাজনীতিকের স্মরণে নগরীর টাউন হল মোড় এলাকায় প্রথম নির্মিত হয় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কয়ার। এ স্কয়ার নির্মাণের মধ্যে দিয়ে বিউটিফিকেশনের যুগে প্রবেশ করে ময়মনসিংহ নগরী। মেয়র টিটু তখন ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র।
এরপর নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে পৌর পিতার পদে আসীন হয়ে মেয়র টিটু পাটগুদাম র্যালীর মোড়কে নামকরণ করেন ‘বিজয় ৭১’। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে মুক্তিযোদ্ধা জনতার বিজয় র্যালির সূচনা হয়েছিল এ মোড় হয়েই। এখানেই মেয়র টিটু গড়েছেন অনুপম স্থাপত্য ভাস্কর্য। এখানে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ৪ বীর শ্রেষ্ঠের ম্যুরাল। অপরূপ টেরাকাটায় এ নান্দনিকতা মুগ্ধ করেছে স্থানীয়দের।
এ ভাস্কর্যের দৌলতেই কথা বলে ইতিহাস। এর মাধ্যমেই মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের বার্তা নতুন প্রজন্মে মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন এ পৌর পিতা।
ময়মনসিংহের প্রথম শহীদ মিনার স্থাপিত হয়েছিল ময়মনসিংহ পৌরসভা মোড়ে। কালের কপোলতলে এ ইতিকথা হারিয়ে যেতে বসেছিল। নান্দনিক রূপ দিয়ে তা ফিরিয়ে এনে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রথম শহীদ মিনার স্মারক। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘স্মৃতি অম্লান’।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত গাঙ্গিনারপাড় মোড়। এ মোড়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘শাপলা স্কয়ার।’ গাঙ্গিনারপাড় মোড়ে প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পানির ট্যাংকের নিচে নুড়ি পাথরের সামনে বসানো হয়েছে ঝিনুক। দু’পাশে দু’টি সাদা বক। তার সঙ্গেই রয়েছে এনসিসি ব্যাংকের সৌজন্যে এটিএম বুথ। নান্দনিকতার ছোঁয়ায় এ মোড়কেও বদলে দিয়েছেন মেয়র টিটু।
নগরীর নতুন বাজার এখন পায়রা চত্বর। এ মোড়ে বসানো হয়েছে শান্তির প্রতীক পায়রা চত্ত্বর ভাস্কর্য। নান্দনিকতার আদলে গড়া এ পায়রা চত্বরকে মেয়র টিটু উৎসর্গ করেছেন ময়মনসিংহের প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোতাহার হোসেন বাচ্চুকে।
ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে নগরীর পুরাতন ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শিক্ষার শেকড় এবং চরপাড়া মোড় এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ‘টাইম স্কয়ার।’ রাতের চরপাড়া মোড় এ টাইমস স্কয়ারের বর্ণিল আলোচ্ছটায় হয়ে উঠছে অপরূপা।
ময়মনসিংহ পৌরসভার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মেয়র টিটুর সময়ে গত ৮ বছরে ৪ হাজার বেকার পুরুষ ও মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই এর সুফল লাভ করেছে হাজার হাজার পরিবার। এ সময়টাতেই তিনি সাড়ে ১০ হাজার অসহায় ও দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। শুন্য হাতে তার কাছ থেকে ফিরে আসার কোন নজির নেই এ সময়ে।
পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী গড়তে মেয়র গুরুত্বারোপ করেন। অপরিচ্ছন্ন শহরের বদনাম থেকে শহরটিকে বের করে আনার উদ্যোগ ফলপ্রসু হয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এ নগরীকে দেশের মডেল নগরে পরিণত করেছেন। তার হাত ধরেই ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নেও মডেল এখন সংস্কৃতির এ নগরী।
নগরীর প্রধান সড়কের দুই পাশের ড্রেনগুলোর উন্নয়নসহ সড়কের নিচে ১৫ টি বৃহৎ পাইপ ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া সড়কের নিচে ৬৫ কিলোমিটার পাইপ ড্রেন ও আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এর সুফল ভোগ করছেন লাখ লাখ বাসিন্দা। একই সঙ্গে নাগরিক সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
কী বলছেন মেয়র ইকরামুল হক টিটু ব্রক্ষপুত্র নদের উপকন্ঠের এ নগরীকে আধুনিক চিন্তা-চেতনার মেলবন্ধন ঘটিয়ে দৃষ্টিনন্দন ও পরিকল্পিত উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে ‘সুন্দর শহর’ এর আলোকে গড়ে তুলতে নিয়েছেন একের পর এক প্রয়াস। তার এসব প্রয়াস স্থানীয় জনসাধারণের মাঝেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘শিল্পকলার বিভিন্ন উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে ময়মনসিংহ নগরীকে আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে নেয়াই আমার ভিশন। এ ভিশন বাস্তবায়নে পৌরবাসীকে আমাকে আকুন্ঠ সমর্থন জুগিয়েছেন।
নেতৃত্বের দূরদর্শিতার অভাবে অতীতে এখানে উন্নয়ন দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারেনি। আমি চেষ্টা করেছি বিদ্যমান নানা সঙ্কট এবং সমস্যার বেড়াজাল থেকে নগরীকে পরিকল্পিত ও আধুনিক রূপে উপহার দিতে।
কালের আলো/এমকে