অনন্য মহিমায় ভাস্বর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ
প্রকাশিতঃ 12:29 am | February 21, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা, সেই থেকে শুরু, সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা…। গীতিকবির ভাষায় জাতির দিনবদলের পালা শুরু হয়েছিল যেদিন, বাঙালির মননে অনন্য মহিমায় ভাস্বর চিরস্মরণীয় সেদিন একুশে ফেব্রুয়ারি। ইতিহাসের পাতায় রক্ত পলাশ হয়ে ফোটা সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়ালের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আজ শুক্রবার। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ।
একুশে ফেব্রুয়ারি মানে বিশ্বে মাতৃভাষার জন্য নির্ভয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দেওয়ার প্রথম ইতিহাস সৃষ্টির দিন। বাঙালির ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় শোকের দিন। তাই তো বাঙালি সমস্বরে গেয়ে ওঠে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি।’
বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৫২ সালের এদিন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা পেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি। এরপর থেকে ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। পরবর্তীতে ২১শে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার দিবসের স্বীকৃতি।
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ২১শে ফেব্রুয়ারিকে এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। ইতিহাসবিদদের মতে, ভাষার প্রশ্নে একুশের আন্দোলন হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তা ছিল শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ।
সেদিন আত্ম-অধিকার, সমতাভিত্তিক সমাজ আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্নে জেগে উঠেছিল তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। একুশের আন্দোলনেই ঘটে বাঙালির আত্মবিকাশ, যার ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে এসেছে মহান স্বাধীনতা।
একুশে তাই বাঙালির চেতনার প্রতীক। একুশের শহীদদের ঠাঁই এখন প্রতিটি বাঙালির মর্মমূলে। পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় উচ্চারিত হয় একেকটি নাম। মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে সারা দেশে, অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং বিদেশে যেখানে রয়েছে বাঙালি, সেখানেই গড়ে উঠেছে অহংকারের প্রতীক শহীদ মিনার।
একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মত্যাগের অহংকারে ভাস্বর মহান একটি দিন, জেগে ওঠার প্রেরণা। দেশমাতৃকার প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গ করার শপথ গ্রহণের দিন। সেই ভালোবাসায় মধ্যরাত থেকে মানুষের স্রোত শুরু হয় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে। সব বয়সী শ্রেণি-পেশার মানুষ শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক ও ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ভাষাশহীদদের স্মরণ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রভাত ফেরি করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। প্রথম প্রহরে আলপনায় রাঙিয়ে তোলা হয়েছে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী ও সাধারণ মানুষ। পরে একে একে ফুল দিয়ে জাতির মহান সন্তানদের স্মরণ করবেন তারা। ‘সবার হাতে থাকবে বাংলা বর্ণমালা’, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ সহ নানান স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।
পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় শহীদ মিনারে আসা মানুষের স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠবে। অনেকে একুশের গান গেয়ে শহীদদের স্মরণ করেন। বাবার কাঁধে চড়ে শিশুরাও আসেন শহীদ মিনারে। এটি চিরায়ত দৃশ্য।
আজ ২১ ফেব্রুয়ারি সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এ উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এছাড়া দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহ পৃথক কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
কালের আলো/এমএএএমকে