ঢাকায় বেড়েছে ছিনতাই
প্রকাশিতঃ 9:51 am | February 23, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
গত ১ জানুয়ারি পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকায় থাকা আত্মীয়ের বাসা থেকে ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন এক নারী ও ওই নারীর ভাই। এসময় তাদের একটি মোটরসাইকেলে আসা তিন ছিনতাইকারী পথরোধ করে। পরে তাদের গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে সোনার গয়না (চেইন ও আংটি) ও পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা চাপাতি দিয়ে পুরুষ যাত্রীর ঊরু ও হাতে কোপ দিয়ে অটোরিকশার চাবি নিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ৬ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা অটোরিকশা চালক জসিম মোল্লা (৪২) রাতে বাসা থেকে বের হন। পরদিন মীরহাজিরবাগ তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা রোডের ইঞ্জিনিয়ার গলির মাথায় পাকা রাস্তার উপর জসিমের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এসময় জসিম মোল্লার মাথায়, পিঠে, বাম হাতের কব্জি, বাম পায়ের গোড়ালি ও ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপের আঘাত ছিল। এ ঘটনায় মৃত জসিম মোল্লার স্ত্রী শিল্পী গত ১৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় এখন পর্যন্ত কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়, রাজধানীতে বেপরোয়াভাবে এমন ছিনতাই চলছে অহরহ। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা পুলিশের মাথা নষ্ট করে দিয়েছে। যদিও ডিএমপির কয়েকটি বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন কমবেশি ছিনতাই প্রতিরোধে কাজ করছেন। কিন্তু সেটি রোধ করা কঠিন হচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিগত সময়ের তুলনায় ছিনতাইকারীর সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনাও। সেই সাথে বেড়েছে ছিনতাইয়ে জড়িত ব্যক্তিদের হিংস্রতাও। আগে চাকু বা ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে পথচারীদের টাকা ফোন কেড়ে নিত তারা। এখন রামদা, হাসুয়া ও বড় ছোরা ব্যবহার করছে। ছিনতাইয়ে কেউ একটু বাধা দিলেই তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করছে। গত কয়েক মাসে বেশ কিছু জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
ছিনতাই ও কিশোর গ্যাংয়ের শিকার হচ্ছেন খোদ পুলিশ সদস্যরাও। গত মঙ্গলবার দিনদুপুরে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য আদাবর এলাকায় থাকা বিট পুলিশের অফিসে যায় এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। পরে তারা সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের কোপানোর জন্য ধাওয়া দেয়। মোহাম্মদপুর থানার একজন পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমরা এখন সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে আছি। যেকোনো সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হামলা করে বসতে পারে। কারণ আমরা তাদের ধরছি, অভিযান করছি।’ তবে র্যাবের ভাষ্য, গত ৫ আগস্ট থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ, র্যাব, সেনা ও যৌথবাহিনী মিলে দুই শতাধিক ছিনতাইকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীর সংখ্যাই বেশি। তবে মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় ছিনতাই বেড়েছে বলে তারা স্বীকার করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাইকারীর উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে, পুলিশ এখন টহল বাড়িয়ে এই অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করছে। তারা দিনে ও রাতে মিলে টহল দিচ্ছে। আগে যেসব এলাকায় পুলিশ টহলই দিত না সেগুলোও এখন টহলের আওতায় আনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর থানাগুলোতে প্রতি রাতে টহল বাড়ানো হচ্ছে। যেসব এলাকায় বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে সেগুলো চিহ্নিত করে এই টহল চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের প্রতিটি থানায় টহল জোরদার করা হয়েছে। অপরাধীদের ব্যাপারে গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে যাদের নাম পাওয়া হচ্ছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।’
কালের আলো/এমএএইচ