ট্রাম্পের ইঙ্গিত করা সংস্থার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই : আইনুল ইসলাম

প্রকাশিতঃ 7:23 pm | February 23, 2025

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, কালের আলো:

‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (এসপিএল)’ শীর্ষক এক প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র ২৯ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ওই মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, এই তহবিল বাংলাদেশের এমন একটি ফার্ম পেয়েছে, যেখানে মাত্র দু’জন কর্মী কাজ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালীকরণের নামে এই তহবিল দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বরাত দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউএসএইডের তহবিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম কাজ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে ট্রাম্পের ইঙ্গিত করা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন ড. আইনুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, আমি কখনো ইউএসএইডের বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করিনি। আমার সে লাইসেন্সও নেই।

আর ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে আমাদের উপর দায় চাপিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।বরোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মোবাইলে ফোনে ঢাকা পোস্টের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক।

অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ’ নামে যে প্রকল্পটির কথা বলেছেন সেই প্রকল্পের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমস (আইএফইএস)-এর সঙ্গে যে কাজ করি সেক্ষেত্রে আমাদের আইডিয়া থাকলে তাদের জানালে তাদের অনুমতি সাপেক্ষে কাজ করি। আমার প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিট করার সুযোগ নেই। সে লাইসেন্সও আমাদের নেই। অন্যদিকে ইউএসএইড যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিতে হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান হতে হবে।

তিনি বলেন, ট্রাম্প বলেননি, বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠান বা এনজিওকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফান্ডিং করা হয়েছে। ইউএসএইড ভালো বলতে পারবে তারা কোন প্রতিষ্ঠানকে ফান্ড দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন চাইলেই বলতে পারত তারা কোন প্রতিষ্ঠানকে ফান্ডিং করেছে, কিন্তু তারা সেটা বলেনি। পত্রিকায় যে প্রজেক্টের নাম বলা হয়েছে সে প্রতিষ্ঠানের নামও আমি শুনিনি। আমি যেই প্রতিষ্ঠান ও এনজিগুলোরও সঙ্গে কাজ করি সেটা দেশীয় এনজিও। সেটা আমেরিকান কোনো অর্থায়ন গ্রহণ করতে পারে না। আমি এখন পর্যন্ত ইউএসএইড-এর সঙ্গে কাজ করিনি।

‘আমার ভোট আমার’ নামে প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক আইনুল বলেন, না এই প্রজেক্টের সঙ্গে আমি কখনো কাজ করিনি। আমি ইয়ুথদের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্টের জন্য আইএফইএস, ফেসবুক বা অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফান্ডের জন্য কাজ করেছি। তবে ইউএসএইড-এর সঙ্গে আমার প্রজেক্টগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।

গত শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে গভর্নরদের নিয়ে আয়োজিত গভর্নর ওয়ার্কিং সেশনস অনুষ্ঠানে ২৯ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার তথ্য প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির নতুন দপ্তর ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জানায়, বাংলাদেশের জন্য ইউএসএইডের এই সহায়তা বাতিল করা হয়েছে। তবে কারা বা কে এই সহায়তা পেয়েছে সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। একই দিন ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য নির্ধারিত ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের কর্মসূচিসহ বিশ্বের ১১টি দেশে আর্থিক সহায়তা স্থগিত করে ডিওজিই।

শনিবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে ভারতে ইউএসএইডের তহবিল নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ইউএসএইডের তহবিলের বিভিন্ন রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখার দাবি করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ভারতীয় এই দৈনিক বলেছে, ভারতে নয়, বরং ২০২২ সালে ওই অর্থ বাংলাদেশে অনুমোদন দিয়েছিল ইউএসএইড। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ফ্যাক্টচেকে ওই ২ কোটি ১০ ডলার তহবিলের মধ্যে অন্তত এক কোটি ৩৪ লাখ ডলার ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

ইউএসএইডের তহবিল বাংলাদেশে কারা পেয়েছেন, সেই বিষয়ে আলোচনা চলছে। মাইক্রো গভর্ন্যান্স রিসার্চ (এমজিআর) নামের একটি গবেষণা সংস্থার পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক আইনুল ইসলাম।

গত ১১ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে আইনুল ইসলাম লিখেছিলেন, হ্যালো বাংলাদেশ ২.০!  গত দুই বছরে এমজিআর, সেইভ ইয়ুথ ও ডিএফটিপি দেশজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তরুণদের জন্য ৫৪৪টি অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি পরিচালনা করেছে। কর্মশালার আকারে, প্রশিক্ষণ, কথোপকথন, সামিট, অ্যাকশন প্রকল্পসহ তরুণ গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এবং নাগরিক সংশ্লিষ্টতার জন্য সরাসরি ২২১টি অ্যাকশন প্রকল্প, ১৭০টি গণতন্ত্র সেশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার ২৬৪ তরুণের কাছে পৌঁছেছিল এমজিআর, সেইভ ইয়ুথ ও ডিএফটিপি!

এসব কর্মসূচির বাস্তবায়ন নাগরিক প্রোগ্রামের আওতায় ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমস (আইএফইএস) এবং ইউএসএইড বাংলাদেশের উদার সমর্থন ও অংশীদারত্বে সম্ভব হয়েছে বলে লেখেন তিনি।

আইনুল ইসলাম আইএফইএসের সিনিয়র কনসালটেন্টের দায়িত্বেও রয়েছেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত অ্যাপ্লাইড ডেমোক্রেসি ল্যাবের (এডিএল) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হন তিনি। ইউএসএইড ও আইএফইএসের সহায়তায় এই ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কালের আলো/এমডিএইচ