পুলিশের লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র এখনও অপরাধীদের হাতে

প্রকাশিতঃ 11:28 am | February 24, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর জনরোষের মুখে পড়ে পুলিশ। আক্রান্ত হয় বিভিন্ন থানা। লুট হয় আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত হয়েছে অভিযান। তবে এখনও পুলিশের লুট হওয়া বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ অপরাধীদের হাতে রয়ে গেছে। এখনও ১ হাজার ৩৯২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৩১টি গোলাবারুদ উদ্ধার হয়নি। পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখন ছিনতাই-ডাকাতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যৌথ বাহিনী অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ মনোযোগ না দিলে জননিরাপত্তা, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, দেশে ৬৬৪টি থানা আছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানা-ফাঁড়ি, পুলিশ বক্সসহ বিভিন্ন ইউনিট-স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। এসব স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি গোলাবারুদ লুট হয়। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড ও বিভিন্ন বোরের গুলি।

জানা যায়, লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর যৌথ অভিযান শুরু হয়। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এই অভিযানে গত ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৩৮টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। তবে এখনো ১ হাজার ৩৯২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৩১টি গোলাবারুদ উদ্ধার হয়নি।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আকরাম হোসেন বলেন, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের বেশিরভাগ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের খোয়া যাওয়া কিছু অস্ত্র আবার খাল-বিলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বাকি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে অভিযান চলছে। লুট করা অস্ত্র নিয়ে কেউ যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

কক্সবাজারের মহেশখালীর ডাকাত জিয়াউর পাঁচ বছর আগে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের পর এখন আবার অপরাধে নেমেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যাসহ অন্তত ১৪টি মামলা রয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (সদ্য প্রত্যাহার হওয়া) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, লুট হওয়া পুলিশের একটি পিস্তল ডাকাত সরদার জিয়াউরের হাতে গেছে বলে জানার পর গত ১৪ নভেম্বর কোস্টগার্ডের গার্ডের কর্মকর্তারা সেটি উদ্ধার করেন এবং তাঁকে আটক করেন। কোস্টগার্ড জানায়, জিয়াউর স্বীকার করেন যে ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র সংগ্রহ করে আবারও ডাকাতিতে নামেন তিনি।

গত ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের ডবলমুরিং থানার ঝরনাপাড়ায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৬টি গুলি, ১টি রাবার বুলেটসহ শাহাবুদ্দীন, শাহ জামালসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং থানার চৌমুহনী এলাকার চারিয়া পাড়ায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ একটি এলজিসহ (লোকাল গান) তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে একজনের নাম ইউসুফ শান্ত (২৫) ও অপর দুজন বয়সে কিশোর।

গত বছরের ১২ আগস্ট রাতে ফেনী মডেল থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, গুলিসহ মো. রুবেল নামের এক যুবককে শহরের শাহীন একাডেমি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই রাতে সেখানে অস্ত্র বিক্রি করতে গেলে পুলিশ খবর পেয়ে রুবেলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর কাছ থেকে ১টি নাইন এমএম পিস্তল, ১৪টি গুলি ও ২টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। ৫ আগস্ট ফেনী থানায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের সময় রুবেল ওই অস্ত্র ও গুলি লুট করার কথা স্বীকার করেন। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে গোলাগুলি-হত্যাকাণ্ডের পর উদ্ধার হওয়া পিস্তল-রিভলবারগুলো থানায় জমা রাখা সাধারণ মানুষের হতে পারে পুলিশ ধারণা করছে।

কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে ২ হাজার ২০০ আসামি পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনো ৭০০ আসামি পলাতক। তাঁদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তসহ অতিঝুঁকিপূর্ণ ৭০ জন আসামি রয়েছেন। এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, জেল পলাতক ৭০০ আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাঁদের মধ্যে ১০০ জন নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে দু-একজন করে ধরা পড়ছেন।

কালের আলো/আরআই/এমকে