পাকিস্তান-বাংলাদেশ বাণিজ্য ছাড়াল ১০০ কোটি মার্কিন ডলার

প্রকাশিতঃ 1:07 pm | February 24, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া উভয় দেশই আরও বেশ কিছু পণ্যের বাণিজ্যে আগ্রহী এবং এই কারণে বাণিজ্যের পরিমাণ ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।

পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন খান রাজধানী ইসলামাবাদে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ/জং-এর সাথে কথা বলার সময় একথা জানান। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন খান রোববার দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুর ও ফয়সালাবাদ সফর করেন এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে দেখা করেন। সেখানে তিনি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ত্বরান্বিত করার বিষয়ে তাদের সঙ্গে বিস্তর আলোচনা করেন।

পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের এই হাইকমিশনার পাঞ্জাবের এই দুই শহরে তার সফরকে ফলপ্রসূ ও লাভজনক বলে অভিহিত করেন। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইকবাল হুসাইন গত মাসে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং হাসিনা পরবর্তী সময়ে তিনিই পাকিস্তানে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত।

হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানের অনেক পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং পাকিস্তান বাংলাদেশের অনেক পণ্যের জন্য একটি লাভজনক বাজার। তিনি বলেন, এটা সন্তোষজনক যে— পনেরো বছরেরও বেশি সময় পর দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে বাণিজ্য পুনরায় শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের তুলা, চিনি, চাল, পোশাক, বিশেষ করে লেডিস ড্রেস, ফল বিশেষ করে আমের প্রচুর চাহিদা বাংলাদেশে রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ আনারস, পাট, ওষুধ, পোশাক পাকিস্তানে রপ্তানি করতে পারে।

হাইকমিশনার বলেন, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির সীমা হলো আকাশ। ইতোমধ্যেই পাকিস্তান তার ন্যাশনাল ক্যারিয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশে ২৬ হাজার মেট্রিক টন চালের প্রথম চালান রপ্তানি করেছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব পাকিস্তানের (টিসিপি) মাধ্যমে মোট ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি করা হবে। বাকি ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি হবে আগামী মাসে।

বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন (বিটিসি) চাহিদা মেটাতে সরকার-টু-সরকার (জি-টু-জি) ভিত্তিতে পাকিস্তান থেকে চাল কেনার আগ্রহ দেখানোর পরে টিসিপি গত বছরের ডিসেম্বরে একটি দরপত্র জারি করেছিল। এছাড়া আরেকটি দরপত্রে কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে চাল বিক্রির আগ্রহ প্রকাশের জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

দরপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ৬০ শতাংশ চাল চট্টগ্রাম বন্দরে এবং ৪০ শতাংশ চাল আরেক সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দরে সরবরাহ করা হবে। আর এই চালান করাচি বন্দরের মাধ্যমে পাঠানো হবে। চাল অবশ্যই ৫০-কিলোগ্রাম পলিপ্রোপিলিন ব্যাগে প্যাক করতে হবে এবং ব্রেক বাল্ক কার্গোতে পাঠাতে হবে।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। হাসিনার পতন ও দেশ ছেড়ে ভারতে পলায়নের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা এবং বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্প্রতি উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সফর ও বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দু’বার সাক্ষাৎ করেন। সেখানে উভয় নেতাই দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক সম্পর্ক জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেন।

এছাড়া শেখ হাসিনার পতনের পর দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। পাকিস্তানের সরকার ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো আশা করছে, বাংলাদেশের সঙ্গে এক বছরের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য বেড়ে তিন বিলিয়ন ডলার হতে পারে, যা আগের সময়ের চেয়ে চারগুণ বেশি।

কালের আলো/এসএকে