কক্সবাজারের সংঘর্ষে বিভ্রান্তিকর ও অপতথ্যে ‘টার্গেট’ বিমান বাহিনী
প্রকাশিতঃ 10:13 pm | February 24, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
কক্সবাজার বিমান ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষে শিহাব কবির নাহিদ নামে এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় দিনভর ভয়াবহ অপতথ্যের তাণ্ডব চলেছে। বিমান বাহিনীর গুলিতে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এই তরুণের মৃত্যু নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো হলেও মূলত গুলির খোসার ছবি পর্যবেক্ষণে মিলেছে ভিন্ন তথ্য। গুলির খোসাটি আদতে ফাঁকা গুলির বা Blank Cartridge, যা প্রাণঘাতি নয় এবং এটি শুধুমাত্র শব্দ তৈরি করে। তাছাড়া নিহত তরুণকে সংকটাপন্ন অবস্থায় উদ্ধারের পর বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই মানবিকতার মাধ্যমে দেশপ্রেমী বিমান বাহিনী দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। এই তরুণ নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে।
শুধু তাই নয়, কক্সবাজার বিমান ঘাঁটির মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় বিমান বাহিনীর সদস্যরা বাহিনীটির বিধান অনুযায়ী ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোন প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। এর কোন প্রমাণও নেই। কিন্তু দিনমান অবাধে ভুল বা অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে। দেশপ্রেমিক বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে গুজবকে সত্য বা তথ্য হিসেবে উপস্থাপনের কসরত চলেছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি পাশের দেশের ‘গদি মিডিয়া’ গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে তথ্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পূর্ণ মূল্য দেয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মিথ্যাচারের বিষাক্ত ডালপালার বিস্তার ঘটিয়েছে। এমন অপকৌশল ঘৃণাভরেই প্রত্যাখ্যান করেছে দেশের মানুষ।
সঠিক তথ্যের চেয়ে ভুল তথ্য যে মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে কক্সবাজার বিমান ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষের ঘটনায় এই বিষয়টি আরও একবার মোটা দাগে প্রমাণিত হয়েছে। অপতথ্য কতটা বিপদজনক ও ক্ষতিকর; এই আপদকে মোটেও অবহেলা করা ঠিক হবে না বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কক্সবাজারের ঘটনার দিকে চোখ রাখলে প্রকৃত সত্যকে যে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে এই বিষয়টিকেও সামনে এনেছেন তারা। এক শ্রেণির বিশেষ মহলের এমন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জের ধরেই অনেকেই বলতে শুরু করেছেন সেই পুরনো আপ্তবাক্য- ‘সত্যের চেয়ে মিথ্যার কাটতি বেশি। বাস্তবতার চেয়ে গুজবের চল বেশি।’ কোন রকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই গালগপ্প মার্কা এমন কথাবার্তাকে কুৎসিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলছেন অনেকেই।
প্রকৃত পক্ষে কী ঘটেছিল কক্সবাজারে?
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) প্রকৃত ঘটনার সুলুক সন্ধান করেছে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলছে, ‘কক্সবাজারে অবস্থিত বিমান বাহিনী ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিমান বাহিনী ঘাঁটির উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।’ এই সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্যে তারা বলেছেন, ‘বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট থেকে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিক স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে তাদের বাধা দেয় বাহিনীর সদস্যরা।’
‘পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপর ইট পাটকেল ছুড়ে’, এমনটিই বলা হয়েছে আইএসপিআরের বিবৃতিতে।
এই সময় বিমান বাহিনীর চারজন সদস্য আঘাতপ্রাপ্ত হন ও শিহাব কবির নাহিদ নামের একজন যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীর সদস্যরা বিমান বাহিনীর বিধান অনুযায়ী ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। তবে স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোনো প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমান বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমান বাহিনীর গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছিল, যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি কক্সবাজার এর নাম বিমান বাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা সত্য নয়। ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারি প্রজ্ঞাপনে ঘাঁটির নাম পরিবর্তন করে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার রাখা হয়েছে।
অপপ্রচারের নেপথ্যে মতলববাজ গোষ্ঠী
কক্সবাজারের ঘটনাকে ঘিরে মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পনা প্রসূত এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে। নানা ভুয়া, অতিরঞ্জিত ও অপতথ্যের ফলে তৈরি হয়েছে ঘৃণার পরিবেশ। কোথাও চিকন চালাকি বা জেনেশুনে মিথ্যাকে সত্য হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। দিবালোকের মতো পরিস্কার এমন অপপ্রচারের নেপথ্যে রয়েছে চিহ্নিত মতলববাজ গোষ্ঠী।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, দেশের প্রতিটি দুর্যোগে-সঙ্কটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কক্সবাজারে সংঘর্ষের মধ্যে তরুণ নিহতের ঘটনায় বিমান বাহিনীর ঘাড়ে দোষ চাপানোর অপচেষ্টার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি ও হতাশার সৃষ্টি করে প্রকারান্তরে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদকেই শক্তিশালী করার এমন অপকৌশলের পাঁয়তারার বিষয়ে সরকার, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন,’চিলে কান নিয়েছে’ শুনেই দৌঁড় দেওয়া যাবে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না দেশের জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।
কালের আলো/এমএএএমকে