বাড়তি দামে মাছ-মাংস, দ্বিগুণের বেশি বেগুন-শসা

প্রকাশিতঃ 10:43 am | March 01, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক. কালের আলো:

পবিত্র রমজান মাস ঘিরে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এতে রোজার নিত্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজার এখন স্থিতিশীল। তবে পর্যাপ্ত আমদানি হলেও গত নভেম্বর থেকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি রাখা হচ্ছে।

বোতলজাত সয়াবিন তেল সংকটে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেলও। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকটের কারণে ভোক্তারা উদ্বিগ্ন। এই সংকট চলতে থাকলে রোজায় এটি ভোক্তাদের বাড়তি উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মাছ-মাংস কিনতে হিমশিম এদিকে রোজা ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও মাছ-মাংসের দাম বেড়ে গেছে।

ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ বেগুন, শসা ও লেবুর বাড়তি চাহিদার সুযোগে দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

গত দুই দিন রাজধানীর মগবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা, রামপুরা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ও রমজান উপলক্ষে বাজারগুলোতে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। প্রতিটি নিত্যপণ্যের দোকানের সামনে ব্যাপক ভিড়।

ক্রেতারা দরদাম করে পণ্য কিনছেন। মাছ-মাংসের দোকানগুলোর সামনেও ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার (আজ) থেকে রমজান শুরু হতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভোক্তারা প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি বাজার করছেন। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই-তিন দিনের ব্যবধানে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় এবং খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাছের দামও মাছভেদে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম সহনশীল রয়েছে। প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।

রাজধানীর বাড্ডার মুরগি বিক্রেতা মো. সোহেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাড়তি চাহিদার কারণে খামারি পর্যায়েই মুরগির দাম বেড়ে গেছে। এতে আমাদেরও কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৫০ থেকে ৬০ টাকা ছিল। শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে লেবুর। এক মাস আগেও লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা ছিল। এখন দ্বিগুণের বেশি দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা হালি। উন্নত জাতের লেবুর হালি ১০০ টাকা।

বাড্ডার সবজি বিক্রেতা মাহাদী হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন লেবুর অফ সিজন। তাই পাইকারি বাজারেই লেবুর কিছুটা সংকট রয়েছে। শীত মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে বেগুনের সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।’

জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। এতে এবার নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

তিনি বলেন, কম্পানির ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাও আমাদের নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কবে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, ছোলার কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, বেসনের কেজি মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, চিনি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, দেশি আদার কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি নতুন রসুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, আমদানি করা রসুনের কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।

শীতকালীন সবজির সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় কয়েকটি সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। টমেটোর কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, মুলার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম মানভেদে ৩০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৫০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

৭ দিনের মধ্যে ভোজ্যতেলের সংকট নিরসন হবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’

খেজুরসহ সব পণ্যের দাম কমে আসবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এবারের রমজানে সব কিছুই মজুদ রয়েছে। আশা করি সরবরাহে বাজারকেন্দ্রিক সমস্যা হবে না।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের হুঁশিয়ারি : ভোজ্যতেল নিয়ে যারা কারসাজি করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। গত বৃহস্পতিবার রমজান উপলক্ষে ভোগ্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের একটি অংশ এখনো সক্রিয়। ভোজ্যতেল নিয়ে যারা দুষ্টামি করে বা ভোক্তার স্বার্থবিরোধী কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোগ্যপণ্যের রেকর্ড আমদানি : পবিত্র রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্কছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার রেকর্ড হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসি নিষ্পত্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে দেশে ৯টি ভোগ্যপণ্যের মোট আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ টন। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের একই সময় আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টন।

কালের আলো/এসএকে