গঙ্গার পানি দেখতে ফারাক্কায় বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিরা
প্রকাশিতঃ 7:22 pm | March 04, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
গঙ্গা পানিবন্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের বার্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে গতকাল সোমবার (৩ মার্চ) কলকাতা পৌঁছান বাংলাদেশের সাত সদস্যের একটি দল। এরপর সন্ধ্যাতেই ফারাক্কায় পৌঁছান তারা। সেখানে উপস্থিত ছিল ভারত সরকারের একটি ছয় সদস্যের দল।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এই প্রথম বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল গঙ্গার পানিবন্টন নিয়ে আলোচনা করতে ভারতে এসেছেন। মোহাম্মদ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই দল ৪ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত একাধিক বৈঠকে অংশ নেবেন।
ভারতের বক্তব্য, এটি বিশেষজ্ঞদের বৈঠক। গঙ্গার পরিস্থিতি দেখে পানিবন্টনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেজন্যই দুই দেশের প্রতিনিধিদল ফারাক্কায় এসেছেন।
দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের দল মঙ্গলবার ফারাক্কায় একাধিক অঞ্চলে গঙ্গার পানির বর্তমান অবস্থাসহ একাধিক বিষয় দেখার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এর পর ৬ এবং ৭ মার্চ কলকাতায় পানিবন্টন বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসবেন তারা।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতা এবং যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘এটি রুটিন বৈঠক। প্রতি বছর দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা গঙ্গার পানি পর্যবেক্ষণ করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেন। গত বছরও মার্চে এই বৈঠক হয়েছিল।’
ভারত-বাংলাদেশের ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। তার আগে এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র জানাচ্ছে, আর কিছুদিনের মধ্যেই দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হবে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের এক সদস্য বলেছেন, ‘এই কমিটি গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তি নবায়নের (নবীকরণের) কাজ করবে। ২০২৪ সালে ভারত সফরে এসে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে এই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করা হবে না।’
১৯৯৬ সালের পর এটি ৮৬ নম্বর বৈঠক। এই আলোচনার কয়েক মাসের মধ্যে ভারতের প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশ যাবে। গঙ্গায় পানির মাত্রা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে এই মুহূর্তে পানিবন্টনের পরিস্থিতি কী হবে।
তবে ভারত-বাংলাদেশের এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুধুমাত্র গঙ্গা পানিবন্টনেই সীমিত থাকছে না। ৬ মার্চ পানিবন্টন সংক্রান্ত আলোচনার পরে আরও অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে আলোচনা হবে। তথ্য ভাগাভাগি, বন্যা রিপোর্ট, সীমান্ত নদীগুলিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের পরিকল্পনা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক সিদ্ধান্ত সেই সভায় আলোচিত হওয়ার কথা। ওই সভায় দুই দেশের আরও প্রতিনিধিরা যুক্ত হবেন। সূত্র জানায়, দুই দেশেরই ১২ জন করে সদস্য ওই সভায় উপস্থিত থাকবেন।
দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের দল ৪ মার্চ ফারাক্কায় একাধিক অঞ্চলে গঙ্গার পানি সরবরাহসহ একাধিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করবেন। এর পর ৬ এবং ৭ মার্চ কলকাতায় পানিবন্টন বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসবেন তারা। তবে এই সফরে শুধু গঙ্গার পানিবন্টন নিয়েই কথা বলবেন তারা। তিস্তা বা অন্য নদীর পানিবন্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না।
বর্তমান চুক্তিতে বলা হয়েছে, গঙ্গায় যদি ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি পানি থাকে তাহলে ভারত ৪০ হাজার কিউসেক পানি পাবে। ৩৫ হাজার কিউসেক পাবে বাংলাদেশ। যদি দেখা যায় নদীতে ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক পানি আছে, তাহলে বাংলাদেশ ৪০ হাজার কিউসেক পানি পাবে, বাকিটা ভারত পাবে। আয় দলের পরিমাণ ৭০ হাজার কিউসেকের কম হলে দুই দেশের মধ্যে তা সমান ভাগে ভাগ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে মোহাম্মদ আবুল হোসেন ছাড়াও আছেন মোহাম্মদ আবু সইদ, মোহাম্মদ আনোয়ার কাদির, মোহাম্মদ শামছুজ্জামান, কাজী শাহীদূর রহমান, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন আছেন। সোমবার তারা কলকাতায় পৌঁছান। তারপর দুপুর আড়াইটা নাগাদ তারা শতাব্দী এক্সপ্রেসে করে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ফারাক্কা পৌঁছান।
সেখানে তাদের স্বাগত জানান ফারাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজার আর আর দেশপাণ্ডে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের হাতে ফুলের স্তবক তুলে দেয়া হয়। একই ট্রেনে ভারতের প্রতিনিধিরাও আসেন। রাতে কোনো বৈঠক হয়নি। মঙ্গলবার মূলত তারা গঙ্গার পরিস্থিতি দেখবেন।
কালের আলো/এএএন/কেএ