চ্যালেঞ্জের মুখে মেয়র আতিকুল ইসলাম?

প্রকাশিতঃ 5:27 am | March 31, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

মেয়র হিসেবে মাত্র একমাস পূর্ণ হয়েছে তাঁর। সেই হিসেবে এখন চলছে ‘হানিমুন পিরিয়ড’। কিন্তু কার্যত স্বস্তিদায়ক সেই সময়টাই পাচ্ছেন না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। গতিময়, নিরাপদ, পরিবেশ বান্ধব ও আধুনিক ঢাকা গড়ার মিশন যখন সবেমাত্র শুরু করেছেন তখনই ঘটছে একের পর এক ‘দুর্ঘটনা’।

নির্বাচিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে সড়কে শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তরণে ‘নাওয়া-খাওয়া’ ভুলে কাজ করতে হয়েছে তাকে। বনানীর ফারুক-রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড এবং গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে রহস্যময় আগুনের ঘটনাতেও এক প্রকার দৌড়ের ওপর রয়েছেন তিনি।

আরো পড়ুন:
সরকারকে ‘বেকায়দায়’ ফেলতেই কী ঘন ঘন অগ্নিকান্ড?

মেয়র হিসেবেই তাঁর কাঁধে পড়েছে গুরুদায়িত্ব। ফলে যেন দম ছাড়ারও সময় পাচ্ছেন না সচল ঢাকা গড়ার এই স্বাপ্নিক। কিন্তু এরপরেও মাথা ঠান্ডা রেখে ধৈর্য্য ধরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মেপে মেপে কথা বলছেন। কথার বদলে অ্যাকশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নিজের করপোরেশন এলাকার বহুতল ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করে দেখার কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন।

এমন প্রেক্ষাপটে একের পর এক চ্যালেঞ্জে দম বন্ধ অবস্থা কীনা জানতে মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে প্রশ্ন রাখে কালের আলো। শনিবার (৩০ মার্চ) রাতে উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে এসেছি। তবে অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনার পর সবার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।

এখন সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। নিজেদের ভবনগুলোর সেফটি’র দিকে মনোযোগী হতে হবে। গত ৪০ বছরের জঞ্জাল একদিনে পরিস্কার করা যাবে না। এজন্য সময় লাগবে। সবার সহযোগিতা নিয়েই নিরাপদ ঢাকা গড়ার কাজ এগিয়ে নিতে চাই।’

‘ঢাকায় বহুতল ভবনগুলো আছে প্রত্যেকটি বিল্ডিংয়ে তাদের ফায়ার সেফটি এবং বিল্ডিং সেফটির যত ধরনের অনুমোদন আছে সবকিছু আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমাকে দিতে হবে’ শুক্রবার (২৯ মার্চ) ফারুক-রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারের সামনে সাংবাদিকদের বলেছিলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

এই বিষয়ে কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, প্রত্যেক ফ্যাক্টরিতে ফায়ার, ইলেকট্রিক্যাল ও বিল্ডিং সেফটি আছে কীনা? আগে গার্মেন্টসগুলোতেও একই সমস্যা হয়েছিলো। তখন বিল্ডিং ও ইলেকট্রিক্যাল সেফটি আমরা শুরু করেছিলাম। তখন ভবনের নিরাপত্তার পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হয়েছিলো।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসিতে প্রকৌশলী ও আর্কিট্যাক্টদের নিয়ে রোববার (৩১ মার্চ) আমি একটি সভা ডেকেছি। কীভাবে বিল্ডিং ও ইলেকট্রিক্যাল সেফটি নিশ্চিত করা যায় এ নিয়ে কথা হবে। এজন্য তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্নিনিরাপত্তা সম্পর্কে যারা জানেন তাদেরকে সভায় রাখা হবে। কারণ এই মুহুর্তে আমাদের বিপুল সংখ্যক জনবল প্রয়োজন।

আমরা প্রতিটি ভবনে ফায়ার ও ইলেকট্রিক্যাল সেফটি আছে কীনা খতিয়ে দেখবো। তাদেরকে বলবো আপনার বিল্ডিং ও ইলেকট্রিক্যাল সেফটি’র সব ধরণের কাগজ আমাদের কাছে জমা দেবেন। যাতে করে আমরা বুঝতে পারি কোন বিল্ডিং কী অবস্থায় আছে?’

বহুতল ভবনগুলোতে কর্মরতদের উদ্দেশ্যে মেয়র আতিকুল বলেন, ‘আপনারা যারা এখানে চাকরি করেন তাঁরা নিজেরাও সচেতন হোন। আপনারাও দেখে নিন ফায়ার ও ইলেকট্রিক্যাল সেফটি আছে কীনা? প্রতিটি ভবন চেক করার সময় এসেছে। তবে কীভাবে কী করবো, কাজের ধরণ কী হবে এজন্য সবাইকে নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।’

বহুতল ভবনগুলোর ফায়ার সেফটি ও ভবন সেফটির কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে জনস্বার্থে নোটিস দেওয়ার পর ম্যাজেস্ট্রিট পাঠানো এবং ফায়ার সেফটি না থাকলেই তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব, ওইদিন বলেছিলেন আতিকুল। সেই কথাটি মনে করিয়ে দিতেই পুনরায় তিনি কালের আলোকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিস্কার। আমি সব সময় অ্যাকশনে বিশ্বাস করি। আমি নিজে আগামী কয়েক দিনে কয়েকটি ভবন পরিদর্শনে যাবো। তখনই অ্যাকশনের বাস্তবতা দেখা যাবে বলেও জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।

কালের আলো/এএম/এএ