পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ৪৩১ যানবাহন

প্রকাশিতঃ 10:46 am | March 07, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

গণঅভ্যুত্থানের পর ব্যাপক জনরোষের শিকার হয় পুলিশ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুলিশের ৪৬০টি থানা ও স্থাপনা। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় থানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক করে তোলার কাজ শুরু হয়। কাজে ফিরে আসে পুলিশও। তবে ছয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসেনি। বরং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো এলাকাগুলোয় খুন, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের ঘটনা বেড়ে গেছে। যদিও এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে এখনো কার্যকর ভূমিকা নেয়া যায়নি। এর বড় কারণ হিসেবে বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যানবাহন ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতির কথা। এসব বিষয় জানিয়ে এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। এ অবস্থায় পুলিশ সদর দপ্তর ৭২২টি গাড়ি কেনার ও এজন্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। পরে মন্ত্রণালয় ৪৩১টি যানবাহন কেনার এবং এজন্য ২৭৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে পুলিশের গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ ৪৫৫টি যান পুড়ে যায়। এগুলোসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয় মোট ১ হাজার ৭৪টি যানবাহন। যানবাহনের অভাবে প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসব বিষয় চিন্তা করেই অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশের যানবাহন সঙ্কট দূর করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট দেশের ১০৫টি থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ অন্যান্য স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে গেছে পুলিশের ৪৫৫টি যানবাহন। এর মধ্যে রয়েছে ১৩টি জিপ, ১৭৩টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ৫৬টি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ, ১২টি প্যাট্রোল কার, ১২টি মাইক্রোবাস, ২টি অ্যাম্বুলেন্স, ১২টি ট্রাক, ২টি বাস, ২টি প্রিজন ভ্যান, ১৫৬টি মোটরসাইকেল, ৮টি রেকার, ৪টি এপিসি, ১টি জলকামান ও ২টি ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট ভ্যান। এসব যানবাহন মেরামতের অযোগ্য।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, যানবাহন সঙ্কট কাটিয়ে পুলিশের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৩৮টি জিপ, ২৫০টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ৫৬টি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ, ১২টি করে প্যাট্রোল কার ও মাইক্রোবাস, ২টি অ্যাম্বুলেন্স, ২০টি ট্রাক, ২টি বাস, ১২টি প্রিজন ভ্যান, ২৮৫টি মোটরসাইকেল, ৮টি রেকার, ৪টি এপিসি (আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার), ১টি জলকামানসহ মোট ৭২২টি যানবাহন কেনার প্রস্তাব পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে। এ জন্য ৩৯৯ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দপ্তরের ওই চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ৩০টি জিপ, ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ৮টি মাইক্রোবাস, ১৬টি ট্রাক, ৪টি বাস, ১৫২টি মোটরসাইকেল, ৮টি রেকার, ৪টি এপিসি, ১টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডগ ভ্যানসহ মোট ৪৩১টি নতুন যান কেনার সম্মতি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য বরাদ্দের সম্মতি দেওয়া হয়েছে ২৭৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এপিসি ও রেকার কেনা হবে। অন্য যানবাহন কেনা হবে স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে। প্রতিটি এপিসি ৬ কোটি ও রেকার ২ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। প্রতিটি জিপ ১ কোটি ৭০ লাখ, ডাবল কেবিন পিকআপ ৮০ লাখ, সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ ৬৫ লাখ, প্যাট্রোল কার ৪৮ লাখ, মাইক্রোবাসের ৬০ লাখ, মোটরসাইকেল ৩ লাখ ৫০ হাজার ও ডগ ভ্যান ৭৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

জানা যায়, প্রস্তাবিত ৪১৮টি গাড়ির মধ্যে ২২৮টি দেশীয় সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রতিটি ডাবল কেবিন পিকআপের জন্য অর্থ বিভাগে বরাদ্দ ৫৬ লাখ ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৮৭ লাখ টাকা পুননির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে মাইক্রোবাসের জন্য ৫২ লাখ টাকার পরিবর্তে ৫৫ লাখ টাকা, ৩ টনের ট্রাকের ক্ষেত্রে ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ৩৮ লাখ এবং ৫ টনের ট্রাকের জন্য ৩৯ লাখ টাকার পরিবর্তে ৪৫ লাখ টাকা পুননির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বাস কেনার ক্ষেত্রে ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪৮ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া তিনটি প্যাট্রোল বোট প্রতিস্থাপনের জন্য ১ কোটি ২৫ লাখ এবং চারটি স্পিড বোটের জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব: পুলিশ ও এনটিএমসি অনুবিভাগ) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে ও পরে দেশব্যাপী পুলিশের বহু স্থাপনা ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে অনেকগুলো যানবাহন একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমাদের সাধ্য ও সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে পুলিশের যানবাহন প্রতিস্থাপন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ৪৩১টি গাড়ি কেনার অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও হবে। এভাবে আগামী অর্থবছরের মাঝামাঝি নাগাদ পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী সব যানবাহন প্রতিস্থাপন সম্ভব হবে বলে আশা করি। পাশাপাশি কিছু গাড়ির দাম বরাদ্দ দেয়া অর্থের চেয়েও বেশি। সেগুলো সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বয় করা হবে। আমরা সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী মূল্যে গাড়িগুলো কিনতে চাই।’

কালের আলো/আরআই/এমকে