আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনে রোজার গুরুত্ব
প্রকাশিতঃ 2:10 pm | March 07, 2025

মাহমুদ আহমদ:
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ কৃপায় আমরা পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের প্রথম শুক্রবারের রোজা রাখার সৌভাগ্য লাভ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র মাহে রমজান সিয়াম সাধনার মাস, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে একান্ত করে পাওয়ার মাস এবং সকল পাপ ক্ষমার মাস।
এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজান মাসের শুভাগমন উপলক্ষ্যে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়’ (বুখারি ও মুসলিম)।
এ পবিত্র মাসে একজন মুমিন দিন-রাত এই চেষ্টায় রত থাকে কীভাবে সে তার প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন করবে। তাইতো মুমিনরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাতের ইবাদত ও তাহাজ্জুদে দোয়ায় মগ্ন হয়।
আমাদেরকে রমজান মাসের পুরো ফায়দা অর্জন করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত হবে, পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বুঝে রমজান থেকে কল্যাণ মণ্ডিত হওয়া। আল্লাহপাক আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন, আমিন।
হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ’ (মুসনাদে আহমদ)।
মাহে রমজানের প্রথম এই দশকে আমাদের সবার মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এ কামনাই হওয়া উচিত যে, তার কাছ থেকে যেন আমরা বেশি বেশি রহমত লাভ করতে পারি এবং তার রহমতে চাদরে যেন আমাদেরকে আবৃত করে রাখেন। পবিত্র এ রমজানে মুমিন মুত্তাকিদের আধ্যাত্মিক-বাগানে ঘটবে নব-বসন্তের সমারোহ। আর স্বর্গীয় আনন্দে মুমিন মুত্তাকিদের হৃদয় ভুবন আলোকিত হয়ে উঠবে।
আল্লাহপাকের পবিত্র বান্দারা জানে যে, এই রহমতের দশকে আল্লাহতায়ালার রহমতের বৃষ্টির পানি দ্বারা তাদেরকে সিক্ত করবেন এবং তাদের তৃষ্ণা মেটাবেন। আর এ কারণেই আল্লাহপাকের নেক বান্দারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত থেকে কখনো নিরাশ হোন না এবং সামান্য অজুহাত দেখিয়ে রোজা পরিত্যাগ করেন না।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘হে যারা ইমান এনেছো! তোমাদের জন্য সেভাবে রোজা রাখা বিধিবদ্ধ করা হলো, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।
পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াত থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তা হলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসাবে রোজা অর্থাৎ উপবাসব্রত পালন করা কোনো না কোনো আকারে সকল ধর্মেই ছিল, আছে এবং দেখতে পাওয়া যায়। অধিকাংশ ধর্মগুলোতে এবং নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ শ্রেণির কৃষ্টির মধ্যে, উপবাসব্রত একটি সাধারণভাবে নির্দেশিত ব্যাপার। আর যেখানে এই ধরনের নির্দেশ নেই, সেখানেও প্রাকৃতিক প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই উপবাস করে থাকেন।
সাধুপুরুষ ও দিব্যজ্ঞানীগণের অভিজ্ঞতা থেকে যে বিষয়টি জানা যায় তা হলো, আধ্যাত্মিক উন্নতি ও মনের পবিত্রতা সাধনের জন্য শারীরিক সম্পর্কসমূহ কিছুটা ছিন্ন করা এবং সাংসারিক বন্ধন থেকে কিছুটা মুক্তিলাভ করা একান্তই প্রয়োজন। তবে ইসলাম এই উপবাস ব্রতের মধ্যে নবরূপ, নব অর্থ ও নবতম আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আরোপ করেছে।
পবিত্র মাহে রমজানের এই রোজাকে অর্থাৎ উপবাস পালনকে ইসলাম পূর্ণমাত্রার আত্মোৎসর্গ মনে করে থাকে। যিনি রোজা পালন করেন, তিনি যে কেবল শরীর রক্ষাকারী খাদ্য পানীয় থেকেই বিরত থাকেন তা নয় বরং তিনি সন্তানাদি জন্মদান তথা বংশবৃদ্ধির ক্রিয়াকলাপ থেকেও দূরে থাকেন এবং সমস্ত পাপ কাজ থেকেও বিরক থাকেন।
তাই যিনি রোযা রাখেন, তিনি তার অসাধারণ আত্মত্যাগের এবং তার প্রস্তুতির কথা আল্লাহপাককে জানিয়ে দেন আর তার হৃদয় এই ঘোষণাও দেয় যে, আমি কেবল মাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখছি।
এছাড়া তার হৃদয় এটাও বলে যে, যেহেতু আমি আল্লাহর জন্য রোজা রাখছি এবং সকল প্রকারের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করছি তাই প্রয়োজন বোধে আমি আমার প্রভু ও সৃষ্টিকর্তার খাতিরে আমার সবকিছু, এমনকি আমার জীবন পর্যন্ত কোরবানি করে দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হবো না।
পবিত্র মাহে রমজান আসে আমাদের জন্য অবারিত ইবাদত বন্দেগির বাড়তি সুযোগ নিয়ে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নেক বান্দারা অন্বেষণ করে কীভাবে আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করা যায়। ইসলামে রোজার মাহাত্ম্য অতি ব্যাপক।
এই মাহাত্ম্য ও মর্যাদাকে বুঝাতে গিয়ে আমাদের প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ মস্তফা (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জিনিসের জন্য নির্দিষ্ট দরজা থাকে আর ইবাদতের দরজা হচ্ছে রোজা’ (জামেউস সগির)।
হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে একটি দরজার নাম ‘রাইয়ান’। এ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররা প্রবেশ করবে। অন্যরাও এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে চাইবে। কিন্তু রোজাদার ছাড়া অন্য কাউকে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না’ (বুখারি ও মুসলিম)।
তিনি (সা.) আরো বলেছেন, ‘রোজা ঢাল স্বরূপ এবং আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি নিরাপদ দুর্গ’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল)।
যদিও আমরা সবাই জানি যে, পবিত্র রমজান বড়ই কল্যাণ মণ্ডিত মাস, দোয়ার মাস। তারপরেও আমরা অনেকেই এই মাসের ইবাদত বন্দেগি থেকে গাফেল থাকি। অন্যান্য মাসের মতই এই পবিত্র মাসটিকে হেলায় কাটিয়ে দেই। আমরা যারা পবিত্র এই মাসটিকে লাভ করার তৌফিক পেয়েছি, নিশ্চয় তারা সৌভাগ্যবান। অনেকেই হয়ত আশায় ছিল কিন্তু লাভ করতে পারেননি, না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
তাই আমাদেরকে এ মাসের পুরো ফায়দা অর্জন করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত হবে, পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বুঝে রমজান থেকে কল্যাণ মণ্ডিত হওয়া। আল্লাহপাক আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।