বঙ্গবন্ধু’র ‘স্বপ্নের পুলিশ’ উপহারের মিশনে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী

প্রকাশিতঃ 9:42 am | April 02, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

সাদামাটা জীবনে তিনি নৈতিকভাবে বিতর্কমুক্ত এবং শক্তিমান। সমানুভূতিতেই যেন অনুভব করেন সাধারণের যাপিত জীবনের সমস্যা-সংকট। কর্মনিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও নেতৃত্বের নন্দিত মহিমায় নিজ বাহিনীতে নিজেকে উদ্ভাসিত করেছেন। বাহিনীর ‘অধিকর্তা’ হিসেবে স্বপ্ন দেখেন এবং বিশ্বাস করেন-‘থানা হবে সেবার কেন্দ্রবিন্দু, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা’।

সেবা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমেই পুলিশ দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করবে, প্রমাণ করবে পুলিশ জনগণের বন্ধু- নিজ বাহিনীর সদস্যদের সাফল্যের ঝুলিতে এমন প্রাপ্তিই সবার আগে দেখতে চান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)।

আরো পড়ুন:
মাদক-জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে : আইজিপি

অর্জনের সোপানে সতত অগ্রসর করতে চান পুলিশকে। পরিশ্রম, সততা, সাহস, প্রজ্ঞা, ধৈর্য্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দায়িত্ব পালনের সময় সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার ‘গাইড লাইন’ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

পুলিশী কার্যক্রমকে শুধু ‘রুটিন ওয়ার্ক’ হিসেবে না ভেবে সাধারণের সমস্যাকে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুশাসনও দিয়েছেন শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত বাহিনীটির এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত এক বছরে বাহিনীর কর্মকর্তাদের আচরণ ও সেবার মনোভাবের গুণগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদেরও ‘পরিচর্যা’র উদ্যোগ নিয়েছেন।

আস্থাহীনতার সংস্কৃতিকে বিদায় করে সেবার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিটি থানাকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলার কঠোর বার্তা দিতেই দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন অভিজ্ঞায় ঋদ্ধ পুলিশের এই প্রধান কর্মকর্তা। ব্যর্থতাকে কখনোই নিজের ‘অভিধানে’ ঠাঁই না দেওয়া জাবেদ পাটোয়ারী পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাকেই এখন অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।

আইজিপি বিশ্বাস করেন, ‘থানায় এসে মানুষ যদি ভাল ব্যবহার পায়, পুলিশের প্রতি মানুষ সন্তুষ্ট থাকবে। এতে পুলিশের ওপর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা আরও বাড়বে।’ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ডিএমপি’র ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশ সদস্যদের দেওয়া নির্দেশনায় এমনটিই বলেছিলেন তিনি।

আরো পড়ুন: কঠোর পথে আইজিপি, মাদক ‘বিপর্যয়’ থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশ?

জাবেদ পাটোয়ারী সেদিন আরো বলেছিলেন, ‘একজন মানুষ নিরুপায় হয়েই থানায় যায়। প্রতিটি থানার পক্ষে একজন মানুষের সব সমস্যার সমাধান করা হয়তো সম্ভব হবে না। তারপরেও থানায় যে ব্যক্তি যাবেন, তার কথা পুলিশকে মনোযোগ দিয়ে হাসিমুখে শুনতে হবে।

ওই ব্যক্তিকে কি করতে হবে, সে সম্পর্কে থানাকে পরামর্শ দিতে হবে। তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। থানায় এসে হাসিমুখে মানুষ যেন কাঙ্খিত সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী প্রচারণার আলো থেকে নিজেকে দূরে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্বশীল ভূমিকারও প্রত্যাশা করেন তিনি। পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরে নিজ জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় আইজিপি বলেছিলেন, ‘‘বাংলাদেশে দুই লাখ পুলিশ সদস্য রয়েছে।

এদের মধ্যে যেসব পুলিশ ভালো কাজ করবে তাদের বিষয়ে আপনারা লিখবেন। কারণ একজন ভালো কাজ করে প্রশংসা পেলে আরও ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহিত হন। আবার যারা ভুল করবে অথবা অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবে তাদের ভুলগুলোও গঠনমূলকভাবে তুলে ধরবেন। এতেও তারা নিজেদের ভুল ও অনিয়ম থেকে সরে আসবে।’

একটা সময় পুলিশ এবং জনগণের মধ্যে বৈরিতা বা দূরত্ব ছিলো। ‘জনতাই পুলিশ, পুলিশই জনতা’ এই বিষয়গুলোকে আরো একধাপ এগিয়ে সাম্প্রতিক ভূমিকায় পুলিশের সেবার মানসিকতায় ক্ষেত্রবিশেষে অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করেছে। অপরাধ নির্মূলে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে নিজ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে জাগরিতও করছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।

পুলিশ প্রধান হিসেবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলাসমূহ সফরকালে নিজ বাহিনীর সদস্যদের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা মোতাবেক সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন। লক্ষীপুরে একটি থানার নব-নির্মিত ভবনের উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি ‘জনগণের সেবক’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশ সদস্যদের।

বলেছেন, ‘সেবা নিতে আসা লোকজনের দু:খ কষ্ট দূর করে পুলিশের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট ওসি ও এসপিকে। নিরীহ লোকজনকে কোনোভাবেই হয়রানি করা যাবে না। দেশের মানুষ নির্বিঘ্নে সার্ভিস পেতে পুলিশকেই প্রমাণ করতে হবে যে পুলিশ জনগণের বন্ধু।’

‘পুলিশকে বদলে দেওয়ার প্রবল মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাস রয়েছে পুলিশ প্রধানের’ বলছিলেন পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেন, ‘অপরাধ দমনের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে পুলিশকে।

জননিরাপত্তার জন্য কাজ করতে হয় দিন-রাত। সেখানে পুলিশ এখন জনগণের আস্থায় রয়েছে। আর এর পেছনে কেবল চাকরি নয়, সেবার মনোভাবও রয়েছে। এখানকার পুলিশকে কঠিন অনুশাসন দিয়ে সেই লক্ষেই এগিয়ে দিয়েছেন আইজিপি। ফলে জনগণ এখন আশ্বস্ত। তাঁরা যে কোন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে পাচ্ছেন পুলিশের উপস্থিতি ও সেবা।’

ইতিহাসের মহানায়ক, আবহমান বাংলা ও বাঙালির আরাধ্য পুরুষ এবং স্বাধীন দেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘স্বপ্নের পুলিশ’ উপহার দেওয়ারও অঙ্গীকার করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। ময়মনসিংহ সফরকালে তিনি বলেছেন, ‘যে পুলিশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, আমি মনে করি সেই পুলিশ উপহার দেওয়ার সময় এসেছে।

আমরা চাই সেই পুলিশ হতে যে পুলিশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখিয়েছিলেন, গরিব-দু:খী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা জনবান্ধব পুলিশ হবো, জনগণের পুলিশ হবো।’

বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন-শৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দ করা অর্থকে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করেন। প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে বদলে দিয়েছেন, আগের তুলনায় পুলিশ আরো অনেক বেশি জনবান্ধব হয়েছে’ বলেও মনে করেন পুলিশ প্রধান।

তিনি বলেন, ‘গত ক’বছরে বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী পুলিশের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং সর্বোপরি পুলিশকে জনবান্ধব করতে কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে আগের পুলিশ আর এখনকার পুলিশের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিজের বক্তৃতায় পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করেছেন সব সময়ই। তবে তাঁর প্রত্যাশার জায়গা হচ্ছে ‘জনবান্ধব’ পুলিশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা চলতি বছরে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও অগ্নিসন্ত্রাস দমনে (পুলিশ বাহিনী) যে ভূমিকা রেখেছে, তার জন্য আজকে শুধু দেশে নয়, বিশ্বে তারা প্রশংসা পাচ্ছে।’

তিনি বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ বাহিনী কর্মদক্ষতা ও পেশাদারির সঙ্গে কাজ করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের পুলিশ আজ বিশ্বে রোল মডেল।’

পুলিশ-জনগণের মেলবন্ধন অব্যাহত রাখতে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী’র এই আন্তরিক প্রয়াস অটুট থাকলে সত্যিকার অর্থেই পুলিশের প্রতি পূর্ণ আস্থা ফিরবে। সতের কোটির বাংলাদেশকে তিনি উপহার দিতে পারবেন জাতির জনকের স্বপ্নের পুলিশ, এমনটিই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

কালের আলো/টিইএ/এএ