দীর্ঘায়িত হচ্ছে বিচ্ছেদের মিছিল

প্রকাশিতঃ 10:17 am | March 12, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

দেশে দিন দিন বিচ্ছেদের ঘটনার মিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কসহ নানা কারণে ভাঙছে সংসার, বাড়ছে বিচ্ছেদের হার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে বিয়েবিচ্ছেদের হার তুলনামূলক বেড়েছে।

২০২১ সালে নারীদের পক্ষ থেকে সাধারণ বিয়েবিচ্ছেদের হার ছিল ২ এর সামান্য কম। তা পরের বছর বেড়ে ৩ দশমিক ৬-এ দাঁড়ায়। একইভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের হার ২০২১ সালে ছিল ২ এর সামান্য বেশি। পরের বছর তা বেড়ে ৩ দশমিক ৮ এ দাঁড়ায়। আর শহরের তুলনায় গ্রামে বিয়েবিচ্ছেদ বেশি, এমনটি বলছে পরিসংখ্যান।

গ্রামীণ জীবন যাপন করা পরিবারের নারী এবং পুরুষ উভয়ের মতে, বিয়ে হলো সামজিক বন্ধন। দাম্পত্য জীবনে যতই চড়াই–উতরাই থাকুক না কেন শেষ পর্যন্ত জীবনের রাস্তায় দুজনকে এক থাকতে হয়। আর এক্ষেত্রে একান্নবর্তী পরিবারের গুরুত্ব তুলে ধরে তারা বলছেন, দাম্পত্য জীবনে যে কোনো কলহ দুজনকেই মিটাতে হয়, তবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তা সহজ করতে ভূমিকা পালন করে থাকে।

বিবিএসের ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক ২০২৩-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ১০ হাজারে গ্রামে ১১টি এবং শহরে ৯টি তালাকের ঘটনা ঘটছে। দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার অনেকটাই বেড়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা গ্রামে বিয়েবিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার পেছনের অন্যতম বড় কারণ হিসেবে বাল্যবিয়ে ও কৌশলে যৌতুক আদায়ের বিষয়টিকে দেখছেন।

এই গল্পটা খুলনার তাসলিমার। মাত্র ১৪ বয়সে বিয়ে হয় তার। দারিদ্র্যের কারণেই পরিবার তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। তবে দুই বছর পরই বিচ্ছেদ হয়ে যায়। স্বামীর যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় ২০১৮ সালে এক সন্তানসহ তার সংসার ভাঙে।

তিনি এখন ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করছেন। বিচ্ছেদের কারণ জানতে চাইলে এক নিশ্বাসে বলেন, ‘গরিবি আমাগো পিছন ছাড়ল না, দুইটা ভাতের আশায় আব্বা বিয়া দিছিল। কিন্তু কপালে জুটত ওই বেডার মাইর। বাপে টুকটাক তো দিতই। কিন্তু শেষে টমটম কেনার টাকা দিতে পারেনাই বইলা ছাইড়া দিসে।’

প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে গতিশীল করছে। তবে এর নেতিবাচক ব্যবহার এড়াতে পারছে না মানুষ। প্রযুক্তি পারস্পরিক দূরত্ব বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবারের বাইরে সবারই ভিন্ন ভিন্ন জগৎ তৈরি হচ্ছে। একটা সময় ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য অনেকটা বেড়ে যাচ্ছে। এতে পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করতেও মানুষ দ্বিধা করছে না। আর এর বলি হচ্ছে শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ’, বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাছির।

বিয়েবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের। মনোশিক্ষাবিদ ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম এ মোহিত কামাল বলেন, দাম্পত্য কলহ দিনকে দিন বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে দম্পতিদের উচিত কাপল কাউন্সিলিং নেওয়া, নিজেদের সমস্যাগুলো মানসিক বিষেশজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ঠিক করে নেওয়া। তবে এই প্র্যাকটিসটা (চর্চা) বাংলাদেশে একদমই নেই। কলহ থেকে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কারণেই বিচ্ছেদের ঘটনা বেশি হচ্ছে।

কালের আলো/এমএএইচএন