সাততলা বস্তিতে আগুনে সম্পদ হারিয়ে পাগলপ্রায় প্রত্যেক পরিবার
প্রকাশিতঃ 5:48 pm | March 12, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
বস্তির প্রবেশমুখে বৈদ্যুতিক পিলারে অবস্থিত ট্রান্সফরমার থেকে সূত্রপাত ঘটে আগুনের। এই আগুনে সব হারিয়েছেন বস্তির বাসিন্দা নিলুফা বেগম। পরনের কাপড়টা পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি। চোখের সামনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে ফ্রিজ, ওয়ারড্রব ও আলমারি। কাঁদতে কাঁদতে নিলুফা বলেন, ‘আমাদের সব শেষ। আর কিছুই নেই অবশিষ্ট। কত কষ্ট করে পুরো মাসের বাজার করছি। সব শেষ, কিছুই বাঁচাতে পারলাম না।’
শুধু নিলুফা নন, এমন আর্তনাদ বিধ্বংসী আগুনে পোড়া ঘর হারানো প্রায় প্রত্যেক পরিবারের। দীর্ঘ জীবনের কষ্টে অর্জিত সম্পদ হারিয়ে পাগলপ্রায় মহাখালী সাততলা বস্তির বাসিন্দারা। তারা জানান, বুধবার দিনগত রাত ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়েই আগুন লাগে একটি ভাঙারি দোকানে। আর সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পরে পুরো বস্তিজুড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের আপ্রাণ চেষ্টায় দেড় ঘণ্টা পর নেভানো সম্ভব হয় মহাখালীর সাততলা বস্তির আগুন। ভোররাত ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাকিবুল ইসলাম।
সরেজমিন রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে গেলে কথা হয় সালমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটা ১৫ মিনিটে যখন আগুন লাগে প্রথমে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়। পরে সেই ট্রান্সফরমারের নিচে একটা ভাঙারির দোকান ছিল সেই দোকানে আগুন লাগে। তারপর পুরা বস্তিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই ট্রান্সফরমারে প্রায়ই আগুন লাগে। কিন্তু এটা ঠিক করে না।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমার ৩/৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আজ ১৭/১৮ বছর ধরে কষ্ট করে যা যা করেছি সব শেষ হয়ে গেছে চোখের সামনে। কিছুই করতে পারিনি।’
আগুনে পোড়া আবর্জনা পরিষ্কারে ব্যস্ত মো. রুবেল হাসান। কাজ করতেন রাজ মিস্তিরির। ৯ সদস্যের সংসারে তিনিই চালাতেন পরিবার। রুবেল বলেন, সব পুড়ে শেষ। টিভি-ফ্রিজ সবকিছু মিলিয়ে লাখ দুই টাকার সম্পদ পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন রাতে যে পরিবার নিয়ে থাকবো সেই থাকার জায়গায়ও নেই। তাই থাকার ব্যবস্থা করছি। ময়লা আবর্জনা সরিয়ে এখানেই কিছু পেতে নিয়ে রাত কাটাতে হবে। এছাড়া আর কিছু করার নেই আমাদের।
নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল প্রতিভা সর্দার বলেন, বই খাতা কিছুই নেই। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। কত টাকা দিয়ে বই কিনেছিলাম সব শেষ। সরকার থেকেও কিছু বই দিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার বই কিনবো কোথা থেকে। কীভাবে করবো পড়াশোনা।
কালের আলো/এমএএইচএন