খাদ্যমন্ত্রীর জামাতার অকাল মৃত্যু নিয়ে এতো ‘জলঘোলা’র নেপথ্যে কী?

প্রকাশিতঃ 7:36 am | April 03, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

একটি স্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক’ প্রমাণ করতে জলঘোলা কম হয়নি। গুজবের পর গুজব ছড়ানো হয়েছে। প্রয়াত ডা: রাজন কর্মকারের স্ত্রী ডা. কৃষ্ণা মজুমদারের নামে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ ছড়িয়ে খাদ্যমন্ত্রী ডা: সাধন চন্দ্র মজুমদারকে বিতর্কিত করার পাশাপাশি হেনস্থা করতেই নানা কুটকৌশল করে বেড়াচ্ছিল একটি চক্র।

পুলিশ মরদেহে আঘাতের কোন চিহ্ন পায়নি বলে আগেই নিশ্চিত করলেও ‘ঠকঠক’ করে বেড়াচ্ছিলো স্বার্থান্বেষীরা। অবশেষে তাঁরা ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেছেন। পুলিশের সুরতহাল ও পোস্টমর্টেম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডা: রাজনের মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন: খাদ্যমন্ত্রীর জামাতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই বলছে পুলিশ, স্বজনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন

এমনকি তার চোখ, কান, মুখ ও নাক ছিল স্বাভাবিক। পুলিশের সুরতহাল এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামিল হোসাইন।

পরিস্কার এই স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় নানা বিভ্রান্তির প্রেক্ষাপটে কালের আলো গত ১৮ মার্চ ‘খাদ্যমন্ত্রীর জামাতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই বলছে পুলিশ, স্বজনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন’ শিরোনামে তথ্য নির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই সংবাদ প্রকাশের পর মহল বিশেষের লম্ফঝম্ফ বন্ধ হয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফিসিয়াল সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজন কর্মকারের অকাল মৃত্যুতে শোকাহত সবাই।

পুলিশের সুরতহাল ও পোস্টমর্টেম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডা: রাজনের পরনে কালো রংয়ের প্যান্ট, কোমরে বেল্ট এবং প্যান্টের নিজে আন্ডারওয়ার ছিল। মৃতের দুই হাত শরীরের দুই পাশ লম্বাভাবে খোলা অবস্থায় আছে। পা দুটো লম্বালম্বি। মৃতের মাথার চুল কালো ও কোঁড়ানো এবং দুই ইঞ্চি লম্বা।

কান, নাক স্বাভাবিক, চোখ বন্ধ এবং স্বাভাবিক। বুক, পেট ও নাভী স্বাভাবিক। মৃতের প্যান্ট ও আন্ডারওয়ার খুলে দেখা গেছে পুরুষাঙ্গও স্বাভাবিক। মৃতের শরীরের কোথাও কোনো দাগ দেখা যায়নি।

‘স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে মান-অভিমান হয়। কিন্তু কোন স্ত্রীই অকাল বৈধব্য হতে চান না। অন্য দশটি নারীর মতোই সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে চান স্বামীকে নিয়ে। ভাগাভাগি করতে চান দু:খ-সুখ। কিন্তু একবার ভাবুন, স্বামীকে চিরদিনের মতো হারানোর সময় ডা: কৃষ্ণা মজুমদারের ওপর দিয়ে কী ঝড়ই না বয়ে গেছে।

তাঁর কথা আমলে না নিয়ে একটি বিশেষ মহল তাকেই খুনি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এমন কী নেই যা করেনি? স্বামী হারানোর শোকের পাশাপাশি এই নোংরামি তাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যাওয়ায় ঘরের প্রতিটি কোণে এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বামীকে’ ডা: কৃষ্ণা মজুমদারের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে এভাবেই কালের আলোকে বলছিলেন তাঁরই একজন স্বজন।

এদিকে, জামাতার মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন খাদ্যমন্ত্রী ডা: সাধন চন্দ্র মজুমদার। দিনের পর দিন তিনি যে পরিচ্ছন্ন ইমেজ গড়ে তুলেছেন, সততার কাঠিতে ভর করে তৃণমূল থেকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা’র আস্থার জায়গায় পৌঁছেছেন, খাদ্যমন্ত্রী হয়েছেন সেই তাকেও তো এই বয়সে কম হেনস্থার মুখে পড়তে হলো না?’ বেশ ক্ষোভ নিয়েই বলছিলেন পরিবারের এক সদস্য।

তিনি জানান, শোকাহত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি যেনে কোনোভাবেই অকালে তার মেয়ের এ অপূরণীয় ক্ষতি মেনে নিতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত নিজের মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে চোখের জল ফেলছেন। তাদের কান্নায় কাঁদছে যেন সবাই।

রাজনের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে ডা. রাজন কর্মকারের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ।

ডা. রাজনের পোস্টমর্টেম শেষে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া জানিয়েছেন, ডা. রাজনের পোস্টমর্টেম আমাদের এখানে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের ফরেনসিক বিভাগ তার পোস্টমর্টেম করেছে। তার শরীরের বাইরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিলো না।

এই বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আসাদুজ্জামান বলেন, ওইদিন রাত পৌনে ৪টার দিকে ডা. রাজনকে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর লাইফের কোনো সাইন পাওয়া যায়নি। তার শরীরে কোনো জখম ছিল না। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

গত ১৬ মার্চ রাত ৩টার দিকে ডা. রাজন কর্মকার হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়াকে দায়ী করেন।

কালের আলো/টিসি/এমএইচএ