আ.লীগের ৭৪টি দুর্গম এলাকাকে বহাল রাখছে ইসি
প্রকাশিতঃ 9:54 pm | March 15, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিগত সরকার আওয়ামী লীগের করা ৭৪টি দুর্গম এলাকাকে বহাল রাখতে যাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আওয়ামী লীগের আমলে ২৩টি জেলার ৭৪টি এলাকাকে দুর্গম বলে বিবেচনা করা হয়।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ইসি সূত্র জানায়, চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে কার্যক্রমে ইতোমধ্যে নির্ধারিত হারের দেড়গুণ ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহকারী ও অন্যদের জন্য ভাতা এবং অন্য খাতে অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে, যা স্বাভাবিক। কারণ সমতল ভূমির চেয়ে এসব এলাকায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা বা নির্বাচনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা অনেক কষ্টের। এসব দুর্গম এলাকায় যেমন শারীরিক পরিশ্রম বেশি হয়, তেমনি স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও রয়েছে।
এক ইসি কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালে ২৩টি জেলার যে ৭৪টি উপজেলাকে দুর্গম এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল, সেগুলো আমরা সভায় উপস্থাপন করি। এক্ষেত্রে এ তালিকা থেকে কোনো উপজেলাকে বাদ দেওয়া হবে নাকি নতুন কোনো উপজেলাকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে বিদ্যমান ২৩টি জেলার ৭৪টি উপজেলাকে দুর্গম এলাকা হিসেবেই বহাল রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইসির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চল, হাওর অঞ্চল, দ্বীপ অঞ্চল ও সমতল ভূমিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট ও দুর্গমতার ব্যাপকতা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে দুর্গম এলাকার তালিকা শ্রেণিভিত্তিকভাবে করা হবে।
এ সংক্রান্ত সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ২৩টি জেলার ৭৪টি উপজেলাকে দুর্গম এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। উপজেলাগুলো হলো– ভোলা জেলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা, বরগুনা জেলার বেতাগী, পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলা, বাগেরহাট জেলার রামপাল, মোড়লগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা, খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, দাকোপ ও কয়রা উপজেলা, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলা, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং, আজমেরীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলা, সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা, শাল্লা, জামালগঞ্জ, দিরাই, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা, বরিশাল জেলার হিজলা, মূলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলা, নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও খালিয়াজুরী উপজেলা, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী ও দশমিনা উপজেলা, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনী ও শ্যামনগর উপজেলা, পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলা, কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলা, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি, মহালছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, গুইমারা, লক্ষীছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর ও দিঘীনালা উপজেলা, বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানছি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সদর, রুমা ও লামা উপজেলা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার নানিয়ারচর, বরকল, বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি সদর, রাজস্থলী, লংগদু, কাউখালী, কাপ্তাই, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলাসহ সর্বমোট ৭৪টি উপজেলা।
জানা যায়, এসব দুর্গম এলাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনের সময় ইসির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হারে অর্থ বরাদ্দ করা হয়।
এদিকে ইসির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে একাধিকবার বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ধরে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের আগে বড় প্রস্তুতির মধ্যে আছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, যা শেষ হবে জুনে। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, যেটির আইন সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য দেওয়া হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার লক্ষ্যে আবেদন আহ্বান করেছে নির্বাচন কমিশন, যেখানে নতুন রাজনৈতিক দল আবেদন করতে পারবে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। এ ছাড়া পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য বিদ্যমান নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার পুনঃমূল্যায়নের কাজ চলমান। এর বাইরে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, ব্যালট পেপার তৈরির মতো কাজগুলো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শুরু করা হয়।
কালের আলো/এমডিএইচ