বর্তমান অস্বস্তিকর পরিস্থিতি শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের রেশ: রিজভী
প্রকাশিতঃ 4:42 pm | March 17, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “আজকে জনপদ থেকে জনপদের যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের ফসল, ফ্যাসিবাদী শাসনের রেশ। ড. ইউনূসকে এর প্রতিকার করতে হবে।”
সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর নয়াপল্টনে শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘‘আজকের এই আধুনিক যুগে আমরা যেখানে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড অনুসন্ধান করছি, আমরা খবর নিচ্ছি পৃথিবীর এই মহাবিশ্বের আর কোথাও প্রাণী আছে কি না, কোনো মানুষ রয়েছে কি না— এই অনুসন্ধান যখন মানব সভ্যতার এই পর্যায়ে এসে হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের একটি শিশু বাচ্চা নিরাপদ নয়। তাও কী, নিজের আত্মীয়র বাড়িতে! এর চাইতে বেদনাদায়ক, এর চাইতে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।”
তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্র ও সমাজে যখন অপরাধীরা রাজত্ব করে, তখন এই প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। বিগত ১৬ বছর শেখ হাসিনার শাসন আমল ছিল অপরাধীদের অভয়ারণ্য। অপরাধীরা, ধর্ষকরা, টাকা লুটেরা, স্মাগলার, মাদক ব্যবসায়ীরা, মাফিয়া চক্র ও ক্যাসিনো মালিকদের রমরমা আধিপত্য ছিল আমাদের সমাজে। এই আধিপত্যের কারণেই একটি অপরাধ, আরেকটি অপরাধের জন্ম দেয়। কালো টাকা বিস্তারের কারণেই সমাজে অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত হয়।’’
রিজভী বলেন, ‘‘এত নারী নির্যাতন হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে যে, এটা বলে শেষ করা যাবে না। বাসের মধ্যে কলেজের ছাত্রী রূপাকে টাঙ্গাইলে কীভাবে নির্যাতিত করা হয়েছে। এইভাবে খাদিজা, তনু, মিতু, নুসরাত— একটার পর একটা জীবন চলে গেছে, একটার পর একটা তরুণী, কিশোরীরা নিপীড়িত হয়েছে এবং এই প্রত্যেকটা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। হয় যুবলীগ, না হয় ছাত্রলীগ, না হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ। না হয় শ্রমিক লীগ।’’
তিনি বলেন, ‘‘যারা আইন প্রয়োগ করবেন, তাদের দেওয়া হয়েছিল ফ্রি লাইসেন্স। সেখানে কোনো আইন লাগত না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থারা বেআইনিভাবে বিরোধীদলকে দমন করার জন্য এমন কোনো পন্থা নাই, যেটা তারা অবলম্বন করেনি। যেহেতু আইন প্রয়োগকারী সংস্থারা জানে বিরোধী দলের সঙ্গে অন্যায় করলে রেহায় পাওয়া যায়, সুতরাং তারা বেআইনি কাজ করতে কখনো দ্বিধা করেনি।’’
রিজভী বলেন, ‘‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার হয়েছেন, কেউ পাঁচবার, কেউ দশবার কেউ ১৫ বার। আদালত থেকে তার জামিন হয়েছে, আবার জেলগেট থেকে তাকে জেলে মধ্যে ঢোকানো হয়েছে। এইটার কারণে তাদেরকে বেরিয়ে আসতে টাকা লেনদেন করতে হয়েছে, শেষ পর্যায়ে ঘুষ দিতে হয়েছে। এই যে অপরাধ আইন প্রয়োগকারী সংস্থারা করেছে এর কারণে সামাজিক দুর্বৃত্তপনা, সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। মিথ্যা মামলা, শত শত মামলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে। কেন দেওয়া হয়েছে, এই মিথ্যা মামলা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দিলে শেখ হাসিনা খুশি হতেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার আমলে বিএনপির কোনো লোক তার নিজের এলাকায় নিরাপদে থাকতে চাইলে পুলিশকে চাঁদা দিতে হত, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাঁদা দিতে হত। এমন এক রাজত্ব কায়েক করেছিল, যেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারও নিরাপত্তা ছিল না। আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ শান্তিতে বসবাস করতে পারত না। এই পারত না বলেই সামাজিক অপরাধীদের দৌরাত্ম বেড়েছিল। সমাজের মধ্যে ধর্ষণ বেড়েছিল, মেয়েরা নিরাপত্তাহীন ছিল। যে বাড়ির লোক চাকরি করে অথবা ছোটখাটো ব্যবসা করে তার যদি সুন্দরী মেয়ে থাকত, সেই মেয়ের নিরাপত্তা ছিল সব চাইতে কঠিন। যদি কোনো যুবলীগ, ছাত্র লীগের পছন্দ হত আর রেহায় নেই। এটা বাস্তব অবস্থা। এটা অস্বীকার করা যাবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘এক ছাত্রলীগ নেতা হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তার কিছু হয় নাই। এভাবে একজন টাকা পাচারকারী যদি রেহায় পেয়ে যায়, তাহলে ধর্ষকরাও রেহায় পেয়ে গেছে। এটা কিন্তু এখনো সমাজের বিভিন্ন জায়গা আছে। তার প্রমাণ— একজন সন্ত্রাসীর নাম সাজ্জাদ। সে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার স্ত্রী বলছে- ‘ওকে কয়দিন ধরে রাখবে কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে ওর জামিন হবে।’ দেখুন টাকার কী গরম, টাকার কী আধিপত্য। টাকা দিয়ে আইন কিনে নেবে, টাকা দিয়ে আদালত কিনে নেবে, টাকা দিয়ে পুলিশ কিনে নেবে।’’
ড. ইউনূসের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘‘আপনার ওপর এ দেশের মানুষের অগাধ আস্থা। আপনি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন, এই ধরনের একটা গভীর বিশ্বাস জনগণের আছে। কিন্তু, আপনার এক উপদেষ্টা ছাত্রদের বলছে, ‘যেভাবে তোমরা চালাচ্ছ, এভাবে পাঁচ বছর চললে দেশ আরও সুন্দর হবে’। তার মানে নির্বাচনের দরকার নাই, গণতন্ত্রের দরকার নাই। গণতন্ত্রের আরও যে উপাদনগুলো আছে, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, এগুলোর দরকার নাই। তাহলে গণতন্ত্রের এসব উপাদান কি ধ্বংস হয়ে যাবে?’’
‘‘আমি সেই উপদেষ্টাকে বলতে চাই, এটার জন্যই তো লড়াই। ৫ আগস্ট যে আন্দোলন, এটা তো বিএনপির ১৫ বছরের আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ। এটাকে আপনারা বিভাজন করছেন কেন? আপনারা ছাত্রদের কী ছবক দিচ্ছেন? তাদেরকে আরেকটা ডিক্টেটরশীপের প্রলোভন দেখাচ্ছেন?’’— প্রশ্ন রিজভীর।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
কালের আলো/এএএন