‘নতুন আইনে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াও ধর্ষণ মামলার বিচারকাজের সুযোগ আছে’

প্রকাশিতঃ 6:29 pm | March 17, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকতো। আমরা এই আইনে বিধান করেছি– ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই আদালত যদি মনে করে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষীর ভিত্তিতে বিচার সম্ভব, তাহলে সেটা করতে পারে। এছাড়া ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করছি। ধর্ষণকালে বা ধর্ষণের উদ্দেশ্যে যদি কোনও জখম করা হয়, সেটাকেও আমরা কঠোর শাস্তির আওতায় আনছি।

সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘ধর্ষণের ক্ষেত্রে বিচারকাজের সময়সীমা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়া আইনে শিশু ধর্ষণের মামলা আলাদাভাবে বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিধান রাখা হয়েছে। এতে সবাই নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন।’

সম্মতি ছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় বিচার কাজের সময় কমানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলার জট লেগে যেতো। এখানে দুই ধরনের মামলা আসতো। একটা হলো, সম্মতিসহ ধর্ষণের ঘটনা বা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ। এসব মামলার অনেক আধিক্য ছিল। সম্মতি ছাড়া ধর্ষণের ঘটনার মামলাগুলোর বিচার এ কারণে আটকে থাকতো। সে জন্য আমরা বিধান করেছি, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের ঘটনা সেটা একটা আলাদা অপরাধ। আর সম্মতি ছাড়া যেসব অপরাধ, সেগুলো আইনে আলাদা অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সম্মতি ছাড়া যেসব অপরাধ, সেগুলোর বিচার কাজের সময় কমানো হয়েছে। আমরা এটাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে কিছু সংজ্ঞাগত পরিবর্তন এনেছি। সংজ্ঞা পরিবর্তন করে শুধু পুরুষের মাধ্যমে না, যেকোনও ব্যক্তির মাধ্যমে ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য করা হচ্ছে। এছাড়া ধর্ষণের সংজ্ঞাকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে, বলাৎকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধু পেনিট্রেশন না, যদি অন্য কোনও বস্তু ব্যবহার করা হয়, কিংবা যে কোনোভাবে ধর্ষণ করা হয়, সেসবকে আমরা শাস্তির আওতায় আনছি।’

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আজ উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক ছিল। বৈঠকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনীর প্রস্তাব পাস হয়েছে। এই যে ধর্ষণগুলো হয়েছে, মাগুরা, বরগুনাসহ দেশের অন্যান্য জায়গার ঘটনাগুলো– এসব বিবেচনায় রেখে আজ ‘‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’’এ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আইন মন্ত্রণালয় থেকে উত্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ নীতিগত অনুমোদন দেয়। ইতোমধ্যে আমরা কিছু মতামত পেয়েছি, সেগুলো আমরা কাল বা পরশু যাচাই-বাছাই করবো। আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) এই সংশোধনী চূড়ান্তভাবে উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দেবে বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের বিচার বিলম্ব হওয়ার একটা বড় কারণ হলো, পর্যাপ্ত ডিএনএ ল্যাব না থাকা। এই মুহূর্তে একটি মাত্র ল্যাব আছে। আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে দুটি ল্যাব স্থাপন করবো। আরেকটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিশেষ জুডিশিয়াল কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত কিছু সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়া শুরু হবে। যাতে করে ধর্ষণসহ অন্যান্য মামলার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যায়। আবার দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল আছে বিবেচনায় নিয়ে এটা যেন স্থিতিশীল থাকে সে জন্য সবসময় বাজার মনিটর, আমদানি, সরবরাহ খেয়াল রাখতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আরও লক্ষ্য করছি, মাজার ভাঙার নামে একটা নৈরাজ্য চলছে। এতদিন সরকার মাজার ভাঙার ঘটনায় সক্রিয় অবস্থায় ছিল, মামলা হয়েছে, দোষীদের আইনের মুখোমুখি করা হয়েছে। কিন্তু এখন সরকার সতর্ক করে দিয়ে বলতে চায়, মাজার ভাঙার ঘটনা আর কোনভাবেই গ্রহণ করবে না। সবাইকে এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কালের আলো/এএএন