বাড়তি মূল্যে ওষুধ কিনতে হিমশিম
প্রকাশিতঃ 10:11 am | March 19, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
জীবনরক্ষাকারী ওষুধ কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে মানুষকে। রক্তচাপ, হৃদরোগ, ব্যথানাশক ও পেটে গ্যাসের সমস্যার নিয়মিত ওষুধগুলোর দাম বেড়েই চলেছে। এজন্য নিয়মিত সরকারি নজরদারির অভাবকে দায়ী করেছেন ক্রেতারা। ফলে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদেরকে।
রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় কথা হয় ফয়সাল চৌধুরী নামের আরেক ব্যক্তির সঙ্গে। ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে তার ওপরও। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ উচ্চমূল্যে ওষুধ কিনে খেতে হিমশিম খাচ্ছে। এদিকে দেখার কেউ নেই। ওষুধ কোম্পানির দিকে একটু নজর দিন। ওষুধের উচ্চমূল্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে কমিয়ে আনার অনুরোধ জানাই।’
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে প্রতিবছর দেশে ৮৬ লাখ মানুষ আর্থিক সমস্যায় পড়েন। ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ১৬ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এক গবেষণায় তারা বলছেন, দেশের মানুষের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ শুধু ওষুধের জন্য ব্যয় হয়। অর্থাৎ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে মোট ১০০ টাকা খরচ করলে তার মধ্যে ৬৫ টাকা খরচ হয় ওষুধ কিনতে। এ থেকেই বোঝা যায়, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ওষুধের ওপর কতটা নির্ভরশীল।
ওষুধ শিল্প সমিতির নেতারা বলছেন, ডলার সংকট, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ওষুধ উৎপাদনে। এতে সার্বিকভাবে বেড়ে গেছে ব্যবসার খরচ। অনেক কারখানা পুরোদমে চলছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে দাম সমন্বয় করা প্রয়োজন।
রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরনের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। এরপরের বিক্রির তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে প্রেসার এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সারজেল, প্যানটোনিক্স এবং ম্যাক্সপ্রো। এছাড়া প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপাও রয়েছে সর্বোচ্চ বিক্রিত ওষুধের তালিকায়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কয়েক মাসে দেশে ওষুধের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৯০ শতাংশ। স্বল্প আয়ের মানুষ বাড়তি মূল্যে ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। ওষুধের দাম বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ওষুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অসহনীয় পর্যায়ে দাম বাড়ছে বলেও অনেকেই মনে করছেন।
ওষুধ উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো ওষুধের গায়ে যদি মূল্য ১০০ টাকা থাকে, সেখান থেকে সরকার ভ্যাট পায় ১৫ শতাংশ, ফার্মেসির লাভ ১৫ শতাংশ। বাকি ৭০ টাকার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাঁচামালসহ উৎপাদন খরচ। আর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মার্কেটিং ও প্রোমোশনাল খরচ, বাকিটা কোম্পানির মুনাফা।
ওষুধ শিল্প নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশে ওষুধের বিপণন বাবদ টার্নওভারের ২৯ শতাংশের বেশি খরচ করছে কোম্পানিগুলো। কিন্তু এই বিপণন প্রক্রিয়াটি খুবই অস্বচ্ছ। ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রধানত ডাক্তারদের উপঢৌকন হিসেবে এই ২৯ শতাংশের বেশির ভাগ ব্যয় করে।
জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জামালউদ্দিন বলেন, ওষুধের দাম বাড়ার একটা বড় কারণ; ডাক্তারদের স্পিড মানি, খাম ও উপহার সামগ্রী দেওয়ার মাধ্যমে প্রায় কোম্পানির ৩০ শতাংশ ব্যয় হয়ে যায়। ডাক্তারদের যদি এসব না দিতে হতো তাহলে ওষুধের দাম বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে ৩০ শতাংশ কম থাকতো।
কালের আলো/এমএএইচএন