উত্তরবঙ্গে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা 

প্রকাশিতঃ 5:21 pm | March 19, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ২২ জেলার যানবাহন চলাচল করে। প্রতিবছর ঈদ আসলেই উত্তরবঙ্গের ঘরে ফেরা মানুষের ঈদযাত্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে। কারণ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদের আগে এই মহাসড়কের যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক গুণ। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত যানজটের আশঙ্কা থেকেই যায় প্রতিবছর।

কিন্তু এবারে এই মহাসড়কের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। সাসেক ২ প্রকল্পের আওতায় যমুনা সেতু সংযোগ মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নির্মিত আন্ডারপাস, ওভারপাস ও ফ্লাইওভারগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ঈদের আগে খুলে দেয়া হচ্ছে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের বগুড়া ও পাবনামুখি দুটি সার্ভিস লেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে বাইপাইল ও চন্দ্রা মোড়ে সবচেয়ে বেশি যানজটের কবলে পড়ে সড়কপথের গাড়িগুলো। বাইপাইল থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক পার হতে গাড়িগুলোর কখনো কখনো দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। পাশাপাশি গোড়াই মিলগেট, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এবং যমুনা সেতু পূর্ব গোলচত্বরেও ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে যমুনা সেতু পূর্ব গোলচত্বর পর্যন্ত প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যানজটে পড়তে হয়।

রংপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসের চালক আব্দুল মতিন জানান, অন্যান্য বারের চেয়েও এবারে উত্তরবঙ্গের মহাসড়কের অবস্থা অনেকটাই ভালো। ফলে এই মহাসড়ক ব্যবহার করে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের ঈদে ঘরমুখো মানুষের এবারের ঈদযাত্রা যানজটের ভোগান্তি ছাড়াই অনেকটাই স্বস্তির হবে।

বগুড়া থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসের চালক আশরাফ হোসেন বলেন, এবারে মহাসড়কে চার লাইনের কাজ অনেক অংশে শেষ হয়েছে, তবে এই পথে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণকাজ চলমান থাকা ও কয়েকটি পয়েন্টে এক লেন থাকায় কিছুটা যানজট দেখা দিতে পারে।

প্রতিবছর ঈদের আগে যাত্রাপথের যানজট নিরসনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সেই সভায় উপস্থিত থাকেন সড়কপথ নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তাসহ সব অংশীজন। আলোচনা হয় সমস্যা সমাধানের বিষয়ে। তারপরও সড়কের যানজট ও ভোগান্তি থামে না।

এবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সারা দেশে যানজট হতে পারে এমন ১৫৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্পট চিহ্নিত করার কথা জানানো হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্পট ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটে– ৫৪টি। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৯টি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৪২টি, ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কে ৮টি এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে।

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের ৫৪টি স্পটের মধ্যে রয়েছে– বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, গোড়াই মিলগেট, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে যমুনা সেতু পূর্ব গোলচত্বর, যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর, ফেন্সিগেটের আগের অংশ, ফেন্সিগেট সার্ভিস লেন, মুলিবাড়ী আন্ডারপাসের আগে, কড্ডা ফ্লাইওভারের পশ্চিমে, কোনাবাড়ী আন্ডারপাসের আগে, হাটিকুমরুল পাঁচলিয়া বাসস্ট্যান্ড, হাটিকুমরুল ধোপাকান্দি ব্রিজ, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, ঘুরকা বেলতলা, ভূঁইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড, হোটেল হাইওয়ে অভিভিলা, ষোলমাইল, সিরাজগঞ্জ বাইপাস, জমজম দইঘর, বগুড়া বাজার থেকে সীমাবাড়ী কলেজ, পেন্টাগন হোটেল, ফুড ভিলেজ হোটেল, হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদ, দাদপুর জামাই রোড, নিউ পাপিয়া হোটেল থেকে চাচা ভাতিজা হোটেল, জোড়া ব্রিজ, চান্দাইকোনা গরুর হাট পর্যন্ত।

এ ছাড়া ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের কাচিকাটা টোলপ্লাজা, বনপাড়া বাইপাস, বনপাড়া বাজার, রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের বানেশ্বর বাজার, রাজশাহী, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা বটতলা থেকে মোনায়েম কন্সট্রাকশন, ছনকা বাজার, শেরপুর মডেল মসজিদের সামনে, নয়ামাইল বাজার, মাঝিরা বাজার, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানার বনানী বাসস্ট্যান্ড, শাকপালা, বগুড়া জেলার সদর থানার জিয়া মেডিকেল কলেজ গেটের সামনে, তিন মাথা রেল ক্রসিং, চার মাথা ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে, বারোপুর বাসস্ট্যান্ড, মাটিডালি বিমান বন্দর মোড়, টিএমএসএসের সামনে, শিবগঞ্জ থানার মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মোকামতলা বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মায়ামনি চৌরাস্তা মোড় থেকে গোবিন্দগঞ্জ ব্র্যাক অফিস, গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী উপজেলা পোস্ট অফিস এবং শিল্পী রেস্তোরাঁ থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পর্যন্ত পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা, পীরগঞ্জ উপজেলা বাস স্টপেজ থেকে সাসেক প্রকল্পের নির্মাণাধীন আন্ডারপাসের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত, বিশ মাইল, পীরগঞ্জ, রংপুর, বড় দরগাহ্ আন্ডারপাস, পীরগঞ্জ, রংপুর, শঠিবাড়ী আন্ডারপাস, শঠিবাড়ী বাজার এবং বাস স্টপেজ এলাকা, মিঠাপুকুর, রংপুরকে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের যানজটের গুরুত্বপূর্ণ হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সভায় যানজট নিরসনে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কালের আলো/এমএএইচএন