যশোরে বার্ড ফ্লু শনাক্ত, মেরে ফেলা হয়েছে দুই সহস্রাধিক মুরগি
প্রকাশিতঃ 8:49 pm | March 26, 2025

যশোর প্রতিবেদক, কালের আলো:
যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। খামারের দুই হাজার ৭৮টি মুরগি মেরে পুঁতে ফেলা হয়েছে।
গত ১২ মার্চ খামারে মুরগি মারা যাওয়ায় নমুনা ঢাকার ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ হলে ১৩ মার্চ খামারের ছয়টি শেডের দুই সহস্রাধিক মুরগি মেরে পুঁতে ফেলা হয়। একইসঙ্গে শেড খালি করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
জানতে চাইলে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত ১৩ মার্চ ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার পর খামারের ছয়টি শেডের দুই হাজার ৭৮টি মুরগি মেরে পুঁতে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে খামারে কোনো মুরগি নেই। শেডগুলো খালি করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। খামারিদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি খামারের বাইরে ময়লা ফেলার জায়গা আছে। এছাড়া খামারে পাখির আনাগোনা থাকে। এসব মাধ্যমে বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে নিশ্চিত নই কোন মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কোনো খামারে মুরগি মারা গেলে ল্যাব টেস্টে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেন, গত ১২ মার্চ যশোরের সরকারি খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। আমরা যে নমুনা পেয়েছি তা পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠাবো। তবে মৃদু আকারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি পোলট্রি খামারকে নির্দেশনা দিয়েছি। একইসঙ্গে পোলট্রি খামারিদের সংগঠনকেও সতর্ক থাকতে বলেছি। যাতে তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ভ্যাকসিন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করেন।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সীমান্ত এলাকায় আমাদের কার্যালয়গুলো সতর্ক করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষায়িত ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত আছে। বাংলাদেশে খামারে ২০০৭ সালে প্রথম এবং ২০১৮ সালে সর্বশেষ বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়। এবার আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের মতো নয়। বার্ড ফ্লু নিয়ে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝি বা প্রচারণা না ছড়ায়, সেদিকে যেন আমরা সতর্ক থাকি। খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ক্রেতাসাধারণকে অনুরোধ করবো, আতঙ্কিত হয়ে আপনারা হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ করবেন না।
বুধবার (২৬ মার্চ) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, আমাকে মার্চের শুরুতে বার্ড ফ্লু শনাক্তের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ফ্লুর বিস্তার যাতে বাড়তে না পারে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এই ফ্লুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
২০০৭ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু দেখা দেয়। সে বছর ১০ লাখেরও বেশি মুরগি এই ফ্লুয়ের কারণে মেরে ফেলা হয়। পরে ২০০৮ সালের মে মাসে দেশে মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ধরা পড়ে।
দেশে মাংসের মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি জোগান দেয় পোলট্রি খাত। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা জানান, দেশে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার আছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও ডলার সংকটে বেড়ে গেছে প্রাণিজ খাদ্যের দাম। করোনার পর থেকে খরচ সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে ৬২ হাজার ৬৫৬টি খামার। এবার বার্ড ফ্লু যেন দেশের খামারিদের আরেকটি মহামারিতে না ফেলে, সেজন্য ফ্লু বিস্তার রোধে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা নাহলে পোল্ট্রিখাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
কালের আলো/এএএন