দুর্দশাগ্রস্ত মিয়ানমারে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছে নৌবাহিনী, ‘সমুদ্র অভিযান’র যাত্রায় নৌবাহিনী প্রধানের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা
প্রকাশিতঃ 9:07 pm | April 08, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড মিয়ানমার। ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা হাজার হাজার।বাতাসের প্রতিটি ঝাপটায় ভেসে আসছে লাশের গন্ধ। ভয়াবহ এক ট্র্যাজেডি। মুসলমান পল্লিগুলোতে শোকের মাতম যেন খানিকটা বেশিই। বিধবাদের কান্নায় ভারী হয়ে আছে পরিবেশ। জাতিসংঘের হিসাবে, ভূমিকম্পে দেশটির অন্তত ৩০ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই থাকছেন খোলা আকাশের নিচে। সবার ভাগ্যে তাঁবুও জোটেনি। কারও কারও ঠাঁই হয়েছে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে। ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় চলছে খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। এতে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এমন দুর্দশাগ্রস্ত মিয়ানমারে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের নির্দেশে উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। তারা দুর্গত মানুষের পাশে থেকে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে নিরলসভাবে পরিচালনা করছে। ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়াদের টিকে থাকার সংগ্রামকে তরান্বিত করতে ত্রাণ ও জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। মানবতার চিরন্তন হৃদয়াবেগ নিয়ে দুর্গত মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাঁরা। এর মাধ্যমে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে প্রকৃত মনুষ্যত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যাত্রা করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘সমুদ্র অভিযান’। এদিন প্রায় ১২০ মেট্রিক টন ত্রাণসহ মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা করা জাহাজটির সামগ্রিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান। এ সময় তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, উদ্ধার, শুশ্রূষা ও কায়িক শ্রম দিয়ে এমন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল করেছে বাংলাদেশ ও নৌবাহিনীর ভাবমূর্তি।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘সমুদ্র অভিযান’ প্রায় ১২০ মেট্রিক টন ত্রাণসহ মিয়ানমারের উদ্দেশে এদিন যাত্রা করে। জাহাজটি শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ইয়াঙ্গুন বন্দরে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী, সেনা কল্যাণ সংস্থা এবং রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় ১২০ টন ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৭৭ টন শুকনা খাবার, ৯ টনের বেশি তাঁবু এবং ব্যবহারযোগ্য বস্ত্রাদি, ২৯ টন বিশুদ্ধ খাবার পানি, ৪ টন হাইজিন কিট এবং প্রায় ১ টন প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী।
আইএসপিআর আরও জানায়, ইয়াঙ্গুন বন্দরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক তত্ত্বাধানে এই সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং তাদের দুর্ভোগ লাঘবে সহায়ক হবে।
এর আগে গত ২৮ মার্চ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে দুই ধাপে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পরিবহন বিমানের মাধ্যমে ৩১ দশমিক ৫ টন ত্রাণসামগ্রী, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তাকারী দল পাঠিয়েছে। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের দুর্যোগকালে বাংলাদেশের এই সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস আরও বাড়াবে এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে।
আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ২০২৩ সালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কে বিমানযোগে ত্রাণ এবং উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তা দল পাঠিয়েছিল। ২০২৩ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’তে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের সাধারণ মানুষকে জাহাজযোগে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছিল। ভবিষ্যতেও যেকোনো জাতীয় ও বৈদেশিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কালের আলো/এমএএএমকে