ত্রিশালে ১৭৩ একর জায়গায় নির্মিত হবে সেনাপ্রধানের স্বপ্নের অলিম্পিক কমপ্লেক্স
প্রকাশিতঃ 10:39 pm | April 23, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
দেশের ক্রীড়ার মান উন্নয়ন, উচ্চতর ও আধুনিক প্রশিক্ষণের জন্য ময়মনসিংহের ত্রিশালে নির্মিত হবে একটি মাল্টি স্পোর্টস অলিম্পিক কমপ্লেক্স। এটি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর স্বপ্নের একটি প্রকল্প। ১৭৩ একর জায়গায় এটি নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ৪০০ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ইনডোর স্টেডিয়ামের কাজ চলতি বছরের জুনে শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেখানে থাকবে বিভিন্ন খেলার অনুশীলন, খেলার ব্যবস্থা ও খেলোয়াড়দের আবাসন সুবিধা। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক গেমস আয়োজনের সক্ষমতার চেষ্টায় রয়েছে বাংলাদেশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থ সংগ্রহের পথ খুঁজে বের করার দায়িত্ব পড়েছে বিওএ’র দু’সহ-সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী ও বশির আহমেদ এর ওপর। তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে সেনাপ্রধান ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সভায় সেনাপ্রধানের স্বপ্নের প্রকল্প অলিম্পিক কমপ্লেক্স চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। এ সময় বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ বি এম শেফাউল কবীর বলেন, ‘বিওএ সভাপতি মহোদয় একটি আইডিয়া ডেভেলপ করেছেন। সেই হিসেবে আজকের সভায় এটি আলোচনা হয়েছে। ১৭৩.৫৯ একর জমি সেনাবাহিনীর আওতায় রয়েছে। সেটিকে সেনপ্রধান নিতে চাচ্ছেন। আজকে বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এটিতে ফোকাস করবো।’
- ৪০০ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন
- ইনডোর স্টেডিয়ামের কাজ চলতি বছরের জুনে শুরুর পরিকল্পনা
- অর্থ সংগ্রহের পথ খুঁজে বের করার দায়িত্বে বিওএ’র দু’সহ-সভাপতি
তিনি জানান, আমাদের দেশের বিভিন্ন ফেডারেশনের টিমগুলো যারা আছে তারা সেখানে যেন প্র্যাকটিস করতে পারে, টুর্নামেন্ট করতে পারে এবং যাতে করে আমরা ইন্টারন্যাশনাল গেমগুলোকে এখানে কনভার্ট করতে পারি সেজন্যই এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
চার মাসের মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট, ৫০টি ডিসিপ্লিনে লড়বে বাংলাদেশ
চার মাসের মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট এশিয়ান ইয়ুথ, ইসলামিক সলিডারিটি ও সাউথ এশিয়ান গেমস হতে যাচ্ছে। তিন গেমসকে সামনে রেখে সব মিলিয়ে ৫০টি ডিসিপ্লিনে লড়বে বাংলাদেশ। এছাড়া তিন গেমসে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের শেফ দ্য মিশনও নির্বাচিত করা হয়েছে বিওএ’র কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়। এর মধ্যে বাংলাদেশের সাফল্য বেশি সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসেই। নেপাল এসএ গেমসে ১৯টি স্বর্ণজয়ই লাল সবুজের নতুন ইতিহাস। সেবার ২৫টি ডিসিপ্লিনে অংশ নিলেও আগামী ২৩-৩১ জানুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় গেমসে ২৬টিতে অংশ নেবে বাংলাদেশ।
বাড়তি ডিসিপ্লিনটি হলো বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার। এই গেমসের শেফ দ্য মিশন করা হয়েছে বিওএর সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীরকে। এই গেমসের আর্চারি, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, বক্সিং, ক্রিকেট, ফেন্সিং, ফুটবল, গলফ, হ্যান্ডবল, হকি, জুডো, কাবাডি, কারাতে, শুটিং, স্কোয়াশ, সাঁতার, টেবিল টেনিস, তায়কোয়ান্দো, টেনিস, ভলিবল, ভারোত্তোলন, কুস্তি, উশু, রাগবি এবং বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার।
আগামী ২২ থেকে ৩১ অক্টোবর বাহরাইনে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ান ইয়ুথ গেমস। এই আসরে ১৩টি ডিসিপ্লিনে অংশ নেবে বাংলাদেশ। বাহরাইনে লাল সবুজের কন্টিনজেন্টের শেফ দ্য মিশন নির্বাচিত করা হয়েছে বিওএর সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হুমায়ুন কবিরকে। এশিয়ান ইয়ুথ গেমসের অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, বক্সিং, বাস্কেটবল (থ্রি নট থ্রি), গলফ, জুডো, সাঁতার, টেবিল টেনিস, তায়কোয়ান্দো, ভারোত্তোলন, কুস্তি, কাবাডি ও সাইক্লিং ডিসিপ্লিনে অংশ নেবে বাংলাদেশ।
৭ থেকে ২১ নভেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত হবে ইসলামিক সলিডারিটি গেমস। অ্যাথলেটিকস, ফেন্সিং, কারাতে, সাঁতার, টেবিল টেনিস, ভারোত্তোলন, কুস্তি, উশু, বাস্কেটবল (থ্রি নট থ্রি), জুডো ও তায়কোয়ান্দো। এই গেমসে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের শেফ দ্য মিশন করা হয়েছে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) ড. মো. নাঈম আশফাক চৌধুরীকে।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ বি এম শেফাউল কবীর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে বলেন, ‘এশিয়ান ইয়ুথ গেমসে আমরা ১২টি ডিসিপ্লিনের শর্ট লিস্ট করেছি। কতজন খেলোয়াড় যাবে এটি পরবর্তীতে নির্ধারণ করবো। সাউথ এশিয়া গেমস যেটি পাকিস্তানে হওয়ার কথা রয়েছে সেখানে আমরা ২৬টি টিম পাঠাবো। বিওএ’র গঠনতন্ত্র সংশোধনের কাজ শেষ হলেও চূড়ান্ত হবে নির্বাহী কমিটির বিশেষ সভায়। এই বিষয়ে এদিন বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বিওএ’র সভার মূল কার্যক্রম শুরুর আগে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করা ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়া পরিবারের সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিওএ সভাপতি জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিওএ’র সার্বিক কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য সকল ফেডারেশন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই সভায় গত বছরের ৭ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বিওএ’র কার্যনিবাহী কমিটির ০৩/২০২৪ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন এবং সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
কালের আলো/এমএএএমকে