মহিয়সী বঙ্গমাতায় ‘একাকার’ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী

প্রকাশিতঃ 11:20 pm | April 21, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

বাঙালি নারী জাগরণে অন্যতম অগ্রদূত বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। সপরিবারে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত নারী জাগরণের আলোকবর্তিকা হয়েছিলেন। তাঁরই রক্তের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে নারী উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে স্বভাবতই নারী জাগরণের উদাহরণ দিতে গেলেই অনিবার্য হয়ে উঠে বঙ্গমাতার নাম।

নিজের প্রায় প্রতিটি বক্তৃতাতেই স্বাধীন মানচিত্র ও লাল-সবুজের পতাকা অর্জনে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অনস্বীকার্য ভূমিকা’র কথা তুলে ধরেন স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী। যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে বঙ্গমাতার বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য্য ও সাহসের গল্প বলে যান অকপটে।

বাঙালির দীর্ঘ আন্দোলনের পরতে পরতে ভূমিকা রাখা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকেই গোটা নারী জাতির অনুপ্রেরণা হিসেবেই মনে করেন তিনি। বুধবারও (২১ এপ্রিল) জাতির সঙ্কটে-দু:সময়ে বঙ্গমাতার অসাধারণ ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করলেন।

এদিন বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক নারী ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহিয়সী বঙ্গমাতায় একাকার হয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী উচ্চারণ করেছেন, ‘বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গমাতার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশের মেয়েদের অসাধারণ সাফল্যের কথাও বলেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা আর শেখ হাসিনা অন্ত:প্রাণ এ স্পিকার আন্তর্জাতিকমানের এ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করতে গিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের জন্য সম্মান ও গৌরব বয়ে আনা মেয়েদের জয়গানও গেয়েছেন।

আইয়ুব খানের শাসনামলের মতো ঘোর দু:সময়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধরীর বাবা ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাবা রফিকুল্লাহ চৌধুরী পালন করেছেন বঙ্গবন্ধু’র একান্ত সচিবের দায়িত্ব। পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে উঠে এসে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রেও নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন।

মাত্র ৪৬ বছর বয়সে প্রথম নারী হিসেবে স্পিকার হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদেই এ পদে দায়িত্ব পালন করে হ্যাট্টিকও করেছেন। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য থেকে সংসদ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বিরল নজির স্থাপন করেছেন।

সরকারের প্রস্তাবিত নারী নীতিরও সফল রূপকার বলা হয় তাকে। ছিলেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও। কমনওয়েলথ স্কলার’ ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী’র শিক্ষা জীবনও সাফল্যে মোড়া।

নিজের শিক্ষা জীবনে কখনো তৃতীয় হননি! মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম, উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয়, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এলএলবি অত:পর এলএলএমওতেও করেছেন প্রথম স্থান অধিকার। আপন মহিময়া অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া নারীদের দৃষ্টান্তও তিনি।

আলোকিত নারী তৈরি করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানকেও বরাবরই মোটা দাগে উপস্থাপন করেছেন স্পিকার।

বঙ্গমাতার ৮৮ তম জন্মবার্ষিকীতে স্পিকার বলেছিলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যে কোন পরিস্থিতি বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও সাহস নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতেন। বাংলার মানুষের মুক্তি সংগ্রামে প্রতিনিয়তই তিনি বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা এক অবিচ্ছেদ্য সত্তা, এ সত্তাকে কখনই পৃথক করা যাবে না। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গমাতার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেণার উৎস হয় থাকবে।’

হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের বলরুমে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ গোল্ডকাপটি বঙ্গমাতার নামে আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একজন মহিয়সী নারী ছিলেন। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী।

বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা অর্জনে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তাই বঙ্গমাতার নামে মেয়েদের আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন বিশেষভাবে অভিনন্দনযোগ্য।’

আন্তর্জাতিক মানের এ প্রতিযোগিতার সাফল্য কামনা করে স্পিকার বলেছেন, ‘এ প্রতিযোগিতায়ও নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখে বিশ্ব ফুটবলে মেয়েরা বাংলাদেশকে পরিচিত করে তুলবে। এতে বাংলাদেশ দলের সফলতা অন্য মেয়েদের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।’

কালের আলো/এএ