মন্ত্রিপরিষদের যুগ্মসচিব ‘ক্লিন ম্যান’ খলিলুর রহমান
প্রকাশিতঃ 9:25 pm | February 25, 2018
অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো :
দুর্নীতিমুক্ত এবং ‘ক্লিনম্যান’ হিসেবে সুনাম রয়েছে খলিলুর রহমানের। তিনি ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি)। সম্প্রতি যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন সফলতার সঙ্গে প্রায় দেড় বছর ময়মনসিংহ চালানো এ কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব তমিজুল ইসলাম খানের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে উচ্চকন্ঠ, জঙ্গিবাদ দমনে সোচ্চার ও কাজের মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা ‘জনবান্ধব’ এ কর্মকর্তার মন্ত্রিপরিষদের যুগ্মসচিব হিসেবে নিয়োগে আনন্দের জোয়ার তৈরি হয়েছে তাঁর বর্তমান কর্মস্থল ময়মনসিংহে। ময়মনসিংহের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
খুশির এ সংবাদে উচ্ছ্বসিত মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নতুন যুগ্ম সচিব খলিলুর রহমান দৈনিক কালের আলোর এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘পদোন্নতি অবশ্যই আনন্দের বিষয়। নতুন কার্যক্রম নিজেকে গতিশীল করে, উদ্দীপনা বাড়িয়ে দেয়। নতুন কর্মস্থলেও নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে চাই।’
২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর খলিলুর রহমান ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে যোগদান করেন। প্রশাসনের ত্রয়োদশ (১৩ তম) ব্যাচের এ কর্মকর্তা সেদিন যোগ দিয়ে নিজ সম্মেলন কক্ষে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সৃজনশীল, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।
তিনি ওই সময় উচ্চারণ করেন, চাটুকারিতা না কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে কাজের মূল্যায়ন করবো। এ কারণে জবাবদিহিতা ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন নিশ্চিত করবো।’ ময়মনসিংহে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দেড় বছরের পথচলায় নিজের কথার সঙ্গে কাজের মিল রেখেছেন ঝানু এ কর্মকর্তা।
ডিসি খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ শান্তিপূর্ণ এক জেলা হিসেবে নিজেকে দেশের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জেলা প্রশাসনে নীতি নির্ধারণী পদে থেকে পরিচ্ছন্ন মনে জনসাধারণের জন্য সেবার দূয়ার খুলে দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার অসাধারণ ক্ষমতার কারণেও তিনি জনপ্রিয়।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির নগরীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে সফলতা ও সুনামের সঙ্গে প্রশাসন চালানো এ কর্মকর্তা নিজের কাজের মাঝেও অপূর্ব সমন্বয় রেখেছেন।
এসব কারণেই ময়মনসিংহের ইতিহাসে তাকে বিবেচনা করা হচ্ছে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে। জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে সুশীল সমাজ এমনকি নতুন প্রজন্মও তার ভূমিকায় মুগ্ধ।
ময়মনসিংহে যোগদানের প্রথম দিনেই তদ্বিরবাজদের সতর্ক করেছিলেন ডিসি খলিলুর রহমান। চাটুকারিতাকে ‘না’ জানিয়েছিলেন। তার মতো এমন জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহে খুব কমই এসেছেন। তিনি সংস্কৃতি নগরী ময়মনসিংহে সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছেন। সচেতনতা বিকাশে বিস্তৃত করেছেন সামাজিক আন্দোলন।
তাঁর আলোচিত ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপের একটি প্যানাফ্ল্যাক্স, ব্যানারের জঞ্জালমুক্ত নগরী উপহার দেয়ার প্রচেষ্টা। এক সময় ঠাহর করাই কষ্টকর ছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। ডিসি অফিসের সামনের পুকুরটি এক সময় ছিল ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ। চারপাশে ছিল ঘন জঙ্গল।
কিন্তু এখন সৌন্দর্যবর্ধনের অফিসের সামনের দিকটায় মনোরম পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিউটিফিকেশনের ছোঁয়ায় এসেছে ঝকঝকে তকতকে চেহারা। সৌন্দর্যবর্ধন হয়েছে পুকুরেরও। অফিসে প্রবেশ পথেই স্বাগত জানাচ্ছে সুদৃশ্য ‘ডিসি গার্ডেন।’
জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান নিজ অফিসেই প্রতিষ্ঠা করেছেন আইসিটি ল্যাব। সেখানে নারী উদ্যোক্তাদের দেয়া হচ্ছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড.মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান এসব উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন দেখে গেছেন।
উদ্বোধন করেছেন আইসিটি ল্যাব ও ডিসি গার্ডেনের। মোহনীয় এক পরিবেশ ফিরিয়ে আনায় জেলা প্রশাসকের (ডিসি) এমন কর্মযজ্ঞেরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) খলিলুর রহমানের বক্তব্য স্থানীয় জনসাধারণকে উদ্দীপ্ত করেছে। দুর্নীতিমুক্ত গতিশীল প্রশাসন পরিচালনা করে রীতিমতো মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জেলাবাসীর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের নজির স্থাপন করেছেন ডিসি খলিলুর রহমান। এর মাধ্যমে সরাসরি যে কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। নিজেদের সমস্যার কথাও অকপটে তুলে ধরতে পেরেছেন।
মূলত কল্যাণকর কাজেই সামাজিক এ নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করে নিজের কর্মকৌশল নাগরিকদের সম্মুখে তুলে ধরছেন তিনি। তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে সব রকমের সেবা প্রদানে সরকারি অঙ্গীকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
গত বছরের ডিসেম্বরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় ময়মনসিংহ জেলা থেকে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খলিলুর রহমান বলেছিলেন, দুর্নীতি অভাব নয়, দুর্নীতি স্বভাব। স্বভাব যদি ঠিক রাখতে পারেন তাহলে শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন।
নবীন ক্যাডারদের তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে তাই আপনি এবং আমি অফিসার। তাই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আপনাদেরকে জানতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
আরও পড়ুন: সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসের কাঁধে ময়মনসিংহের ডিসি’র গুরুভার
কালের আলো/এমকে