মনিটরিং করছেন সেনাপ্রধান, ‘ফণী’ বিপর্যয় রুখতে মাঠে সেনাবাহিনী

প্রকাশিতঃ 8:43 pm | May 04, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

সুপার সাইক্লোন ‘ফণী’র সর্বনাশা হাওয়ায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে উপকূলীয় জেলা বরগুনার পাথরঘাটা, ভোলা ও নোয়াখালী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফণী’র আঘাতে এ পর্যন্ত ৪ জন নিহত ও ৬৩ জন আহত হয়েছেন।

ভয়ঙ্কর এ ঝড় আঘাত হানার আগেই মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের সব সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনা আর আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিখুঁত পূর্বাভাসে বড় রকমের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন: ‘ফণী’ মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির ঘোষণায় সাহসের সঞ্চার উপকূলবাসীর

আর এ দুর্যোগে বরাবরের মতো এবারো ‘ত্রাণকর্তার’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। অতি শক্তিশালী এ ঝড়ের হাতে মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে জেনারেল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

জীবনহানি রুখতে সরকারের আটঘাট বেঁধে প্রস্তুতি, মাঠ পর্যায়ে সেনাবাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ ও আগাম তৎপরতার মেলবন্ধনে শেষ পর্যন্ত ততটা দাঁত ফোটাতে পারেনি প্রবল এ ঘূর্ণিঝড়।

তান্ডবের যে রূপ ভারতের ওড়িশা দেখেছে সেই প্রভাব বাংলাদেশে পৌঁছার আগেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘ফণী’ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর সকল ডিভিশন ও এরিয়া হেডকোয়ার্টারকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

দুই দিন আগে বৃহস্পতিবার (০২ মে) সেনাবাহিনী প্রধানের এমন উচ্চারণ আশার আলো জ্বালিয়েছিলো উপকূলবাসীর মন-মননে। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা তিনি নিজেই শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়ের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর সকল ফরমেশনে মনিটরিং সেল খুলেছেন।

পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বয় করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ৫৫০ টি ত্রাণের প্যাকেট প্রস্তুত করা হয়েছে। খবর দায়িত্বশীল সূত্রের।

দেশের প্রতিটি দুর্যোগে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়ানোর গৌরবোজ্জল ও সমৃদ্ধ অতীত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর। আন্তর্জাতিক নানা দুর্যোগেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মদক্ষতা স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত।

সেনাসদস্যদের একাগ্রতা ও নানা জনসেবামূলক কর্মকান্ড কুড়িয়েছে সার্বজনীন আস্থা। বিশ্ব পরিমন্ডলেও তাঁরা উজ্জ্বল করেছে রক্তের দামে কেনা লাল-সবুজের পতাকাকে।

দেশপ্রেমিক ও পেশাদার সেনাবাহিনী দেশের ভূখন্ড ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের যেকোন প্রয়োজনে সব সময় সর্বোচ্চ আস্থা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে নিজেদের নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

একটি উন্নত, পেশাদার এবং প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ইতিবাচক অগ্রযাত্রার সূচনা করেছিলেন সেই ধারাবাহিকতায় তাঁর রক্তের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০’র আলোকে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে নিবিষ্ট মনে কাজ করছেন।

‘মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় উজ্জীবিত আমাদের সেনাবাহিনী দেশের আস্থা ও গর্বের প্রতীক’ সব সময়েই এমন কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ভাষ্য মতে- সেবা ও কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে সেনাসদস্যরা জনগণের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং সমগ্র জাতির আস্থা অর্জন করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্রমধারায় আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে একটি সুশৃঙ্খল ও আধুনিক সেনাবাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।’

‘ফণী’ বিপর্যয় রুখতে সেনাবাহিনী
দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আধুনিক, উন্নত ও সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদ নিষ্ঠার সঙ্গে দেশমাতৃকার সেবায় আরো অগ্রণী ভূমিকা রাখতে উদ্ধুদ্ধ করেছেন নিজ বাহিনীর সদস্যদের।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পথচলা, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সারথী চৌকস এই সেনা কর্মকর্তা বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলাতেও নিজ বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন আগেভাগেই।

বৃহস্পতিবার (০২ মে) সাভার সেনানিবাসের ফায়ারিং রেঞ্জে সেনাবাহিনীর বার্ষিক ফায়ারিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে শঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন উপকূলবাসীর মাঝে প্রেরণার মশাল জ্বালিয়ে বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনী আগাম কোনো নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করে না।

কারণ, দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে সেনাবাহিনীকে স্থায়ী নির্দেশনাই দেয়া রয়েছে। তাই ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’

ফণী বিপর্যয় কাটিয়ে তুলতে দেশের প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টে দিন-রাত একাকার করে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ৫৫০ টি ত্রাণের প্যাকেট প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি ৭৮ টি মেডিক্যাল টিম, ১৬টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট, ১৭০ টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিম এবং সর্বমোট ৬৪০ টি বিভিন্ন প্রকার বোট প্রস্তুত রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিমগুলো বিশেষ উদ্ধার সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারসমূহও প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও সেনানিবাস সমূহে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং প্রয়োজনীয় সেনা সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিশেষ যন্ত্রপাতিসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল গঠন করা হয়েছে যাদের স্বল্প সময়ের মধ্যে মোতায়েন করা যাবে। ভূূমিধ্বসের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও তৎপর সেনাবাহিনী
মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় সেনাবাহিনী দক্ষতা ও প্রশংসার সঙ্গে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে-ইতোপূর্বে বলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ, ভোটার তালিকা ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও দক্ষতা দেখিয়েছে সেনাবাহিনী।

ফণী’র সর্বনাশা ছোবলে ক্ষতিগ্রস্থ কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতেও পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।

সুপার সাইক্লোন পরবর্তী সময়ে সেখানে নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। এখানে ক্ষতিগ্রস্ত ঘড়বাড়ি মেরামত ও আহত রোহিঙ্গা সদস্যদের চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

কালের আলো/এইকেআ/এএএমকে