ডাক্তারের মার খাওয়া সন্তানের বাবাকেও মারধর হাসপাতালে
প্রকাশিতঃ 1:26 pm | May 15, 2019
কালের আলো প্রতিবেদক:
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের মারধরের শিকার সেই কিশোরের বাবা ও চাচাকে এবার হাসপাতালে ঢুকে এক ইউপি সদস্য মারধর করেছেন। অভিযুক্ত ওই ইউপি সদস্যের নাম মো. বাদল। তিনি পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
বুধবার(১৫ মে) বেলা ১১টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, চিকিৎসকের হাতে মারধরের শিকার কিশোর জিলানের বাবা মো. নাসির ও চাচা আবুল কালাম।
আহত মো. নাসির বলেন, আমার স্ত্রী এই হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় সকালে আমি ও আমার ভাই তাকে দেখতে আসি। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক রোগীকে দেখতে আসেন আমাদের ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. বাদল।
বাদলের সঙ্গে তার জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে হাসপাতালেই তার সঙ্গে আমার সামান্য বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর বাদল তার সহযোগীদের নিয়ে আমাদের বেদম মারধর করে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বাদল মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, উল্টো তারাই আমাকে মারধর করে জামা ছিঁড়ে দিয়েছে। আমাকে চরমভাবে অপমানিত করেছে।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানা পুলিশের এসআই গাজী মাহতাব উদ্দীন বলেন, ঘটনাটি শুনে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে অসুস্থ মাকে ফ্লোর থেকে হাসপাতালের বেডে তোলায় বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার আনোয়ার উল্লাহর হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন মো: জিলানী নামের সেই কিশোর।
কিশোরকে মারধরের ঘটনার সে্ই ভিডিওটি তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে ওই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে অনেকেই ডাক্তারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে ওই ডাক্তারের বিচার চেয়েছেন স্থানীয়রা।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। পরে কেউ একজন ওই মারধরের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। পরে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।
ভাইরাল হওয়া ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আনোয়ার উল্লাহ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে তেড়ে এসে জিলানী নামে এক কিশোরকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। হাসপাতালের নার্স, কর্মী ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সামনে প্রকাশ্যে ওই কিশোরকে মেরে আহত করেন ডা. আনোয়ার উল্লাহ।
এ সময় হাতে স্যালাইন লাগানো এক নারী রোগী ডা. আনোয়ার উল্লাহকে নিবৃত্ত করতে গেলে বাধা উপেক্ষা করে জিলানীকে মারধরের পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
তবে মারধরের শিকার হওয়ার পরও ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওই কিশোরকে ডাক্তারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে শোনা যায় ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে ওই কিশোর বলেছে, ‘অপরাধ করেছেন আপনারা, আর হেইতে কতা কইলে মোগো শাস্তি।’
মারধরের শিকার কিশোর জিলানীর ভাষ্য, আমার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার সকাল ১০টার দিকে অচেতন অবস্থায় পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেয়ার পর দীর্ঘ এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমার মাকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে ফেলে রাখেন নার্স ও চিকিৎসকরা।
মায়ের কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে পরে আমি তাকে ফ্লোর থেকে নারী ওয়ার্ডের একটি বেডে তুলি। এ সময় এক নার্স এসে আমাকে নিষেধ করলে আমি তার নিষেধ উপেক্ষা করি। এর কিছুক্ষণ পরই ডা. আনোয়ার উল্লাহ এসে আমাকে মারধর করার পাশাপশি অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন। সবার সামনে আমাকে মারধর করে আহত করেছেন ডা. আনোয়ার উল্লাহ।
কালের আলো/আরএ/এমএম