শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রীসভায় ‘চমক’ দেখাচ্ছেন কৃষি পরিবারের খাদ্যমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 11:10 am | May 18, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ
নিজে উত্তরের জেলা নওগাঁর বাসিন্দা। জন্ম ও বেড়ে উঠা তাঁর কৃষি পরিবারে। পারিবারিকভাবেই রয়েছে তাদের ধান-চালের ব্যবসা। ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও।
প্রথমবারের মতো খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছে সাধন চন্দ্র মজুমদারকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মাল্লার মন্ত্রীসভায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ চমক হচ্ছে প্রথমবারের মতো কৃষকের ঘরের কোন মানুষকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া। মন্ত্রী নিজেও সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকার করেছিলেন।
এই মন্ত্রণালয়ে নিজের পূর্বসূরি মন্ত্রীদের চেয়ে নিজের কর্মযজ্ঞে শুরুতেই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন সততার মাপকাঠিতে ভর করে তৃণমূল থেকে উঠে আসা খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা নওগাঁর এ বাসিন্দা। খাদ্য অধিদপ্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে বদলি, বিশেষ বরাদ্দ ও জনবল নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
বদলটির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ বরাদ্দ বাতিল করেছেন। জনবল নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে নিবিষ্ট মনে কাজ করছেন। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নে সততা, অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিতে চান।
বড় খাদ্যগুদামে পদায়ন করতে চান গ্রেডেশন অনুযায়ী দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের। প্রতি দুই বছর পর মনিটরিংয়ের ভিত্তিতে গ্রেডেশন তালিকা পরিবর্তনের বিষয়টিও ভাবছেন।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের এসব উদ্যোগে একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। তবে ইতিবাচক এসব সিদ্ধান্তে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের প্রক্রিয়ার মধ্যে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।
তাঁর হাত ধরে খাদ্য বিভাগের কলঙ্ক তিলক মুছে দেওয়ার পাশাপাশি দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নও সাধিত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নিপাট ভদ্র, বিনয়ী, মৃদুভাষী ও ঠান্ডা মেজাজের সাধন চন্দ্র মজুমদারের বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। ছোটবেলা থেকেই জীবন সংগ্রামী এ মন্ত্রী পারিবারিক সূত্রেই ধান-চালের ব্যবসায় জড়িত। মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর আড়তের ব্যবসা এখন সামলাচ্ছেন ছোট ভাই নওগাঁর নিয়ামত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনা মজুমদার।
সততার মাপকাঠিতে ভর করে বঙ্গবন্ধু কন্যার আস্থায় আসা সাধন মজুমদারের দলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসারও উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। অতীতের খাদ্যমন্ত্রীরা যা করে দেখাতে পারেননি উল্টো নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে সমালোচনা হজম করতে হলেও খাদ্য ভান্ডারের মধ্যেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে উঠার কারণে মন্ত্রণালয় পরিচালনায় মুন্সীয়ানার পরিচয় দিচ্ছেন।
খাদ্য বিভাগের পুঞ্জিভূত সমস্যা ও বহু সঙ্কট কাটিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির সংস্কৃতিকে ‘হিমাগারে’ পাঠানোর মন্ত্র জানেন একাত্তরের রণাঙ্গণের জাতির এ সূর্য সন্তান।
সূত্র মতে, খাদ্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিশেষ করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, পরিদর্শক, গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে পদায়ন-বদলিতেই অতীতে দুর্নীতি হয়েছে। এর মধ্যে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন পেতেই সবচেয়ে বেশি টাকার লেনদেন হয়।
কথিত আছে, এসব টাকার ভাগ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত যায়। এমনকি মন্ত্রীর নির্দেশে কেউ কোন গুদামে বদলি হলে তাকেও দিতে হয় উর্ধতন কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের উপঢৌকন। তাতে গুদামের কর্মকর্তারাও বাধ্য হন দুর্নীতি করে তা পুষিয়ে নিতে।
কিন্তু যার সততায় ‘চির উন্নত মম শির’ সেই তিনি (মন্ত্রী) এ বিষয়ে কঠোর হবেনই। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এবং অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত খাদ্য সেক্টর উপহার দেওয়ার মহান ব্রত নিয়ে আদাজল খেয়ে কাজে নেমে পড়া একজন সাধন মজুমদার সমস্যার গোড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন।
নিরাময় করতে চিহ্নিত করেছেন অনিয়ম-দুর্নীতির খাতসমূহকে। প্রথমেই মন্ত্রী অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্য সংগ্রহ কর্মসূচীর ক্ষেত্রে বিশেষ বরাদ্দ বাতিল চমক সৃষ্টি করেছেন। সম্প্রতি কালের আলো’র এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে এই বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে নানা কথা শোনা যেতো।
অসংখ্য অভিযোগও আসতো। তাই বিতর্কের অবসান ঘটাতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে বিশেষ বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।’
শুধু তাই নয় প্রথমবারের মতো খাদ্য পরিদর্শক, সহকারী পরিদর্শকসহ বিভিন্ন পদে গ্রেডেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রথাবিরোধী এ খাদ্যমন্ত্রী। জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, গ্রেডেশন করা সম্পন্ন হলে দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বড় খাদ্য গুদামে পদায়ন করা হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে এই পদায়ন দিলে আমি আশাবাদী তাঁরাও দুর্নীতি থেকে সরে আসবে।
এর পরও তাদের ওপর থাকবে মনিটরিং ব্যবস্থা। তখন কেউ দুর্নীতি করলে ছাড় পাবে না। তাকে শাস্তি পেতে হবে। মন্ত্রী নজর দিয়েছেন দরপত্র দুর্নীতি বন্ধেও। এজন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব টেন্ডারিংকে ই-টেন্ডারিং করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসন থেকে নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার মনে করেন বঙ্গবন্ধু যেমন কৃষকদের নিয়ে ভাবতেন তেমনি তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারও কৃষকবান্ধব সরকার। তিনি বলেন, এ সরকার কৃষক বাঁচানোর সরকার। কৃষক মারার সরকার নয়।
এজন্য এবার ধান কেনার ক্ষেত্রে কোনও প্রকার রাজনৈতিক প্রভাব বরদাশত করা হবে না বলে নিজ জেলা নওগাঁয় আগেই জানিয়ে দিয়েছেন।
সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধানের মূল্য ২৬ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কৃষকেরা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পান সে জন্য মৌসুমের শুরুতেই ধান কেনা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রকৃত কৃষকেরা যাতে ধান দিতে পারে সে জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কালের আলো/ওএইচ/এএ