ঐকতানেই মিশনের সাফল্য, দ্বন্দ্বে বিঘ্ন, বলছেন সেনাপ্রধান
প্রকাশিতঃ 3:06 pm | May 25, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ অন্যতম বৃহৎ শান্তিরক্ষী জোগানদাতা দেশ। ভিন্ন সংস্কৃতি আর ভাষার এসব শান্তিরক্ষীর একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ মানবগোষ্ঠীকে রক্ষা করা। সহিংসতা থেকে শান্তির পথে আসা দেশগুলোকে সহযোগিতা করা।
গত ৩১ বছর যাবত নিষ্ঠা, ত্যাগ ও আন্তরিকতার সঙ্গেই এ কাজটি করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ফলশ্রুতিতে বিশ্ব পরিমন্ডলে তাঁরা রচনা করেছে গর্ব ও অহংকারের এক উপাখ্যান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র গর্বিত সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ শান্তিরক্ষা মিশনে সমস্যা-সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে ঐকতানেই মিশনের সাফল্য নির্ভর করে বলে মন্তব্য করেছেন।
আরো পড়ুন: হাওয়াইতে সিম্পোজিয়ামে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন কালের আলোতে
বিগত তিন দশকে মিশনে সেনা সদস্যদের শৃঙ্খলাবোধ, পেশাদারীত্ব এবং দক্ষতা স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। নিজ বাহিনীর সদস্যদের সক্ষমতাকে বৃদ্ধিকেই আন্ত-অভিযানে সাফল্যের চাবি হিসেবেই উল্লেখ করেছেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ নিজের বক্তব্যে বলেন এসব কথা।
শান্তি অভিযানের ভেতরের দিক সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন। ফলে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নতুন প্রজন্মের জন্যও চিত্তাকর্ষক। একটি মিশনের সাফল্য কীসের ওপর নির্ভর করে আবার কীভাবে আন্ত-অভিযান বিঘ্ন ঘটতে পারে সেই কথাও সুস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেছেন তিনি।
আরো পড়ুন: সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিকেই শান্তি অভিযানে সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করেন সেনাপ্রধান
অভিযান সফল হয় ঐক্যের মধ্যে দিয়ে তেমনি এ অভিযান কীভাবে বিঘ্ন ঘটে তাঁর ওপর নিজের পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, শান্তি অভিযান মিশনে সাধারণত তিনটি বিভাগ থাকে: বেসামরিক, সামরিক ও পুলিশ।

কোনো মিশনের সাফল্য নির্ভর করে এদের মধ্যে কাজের ঐকতানের ওপর। সামরিক পরিমণ্ডলে বাহিনী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সব স্তরের কর্মকর্তারা তাঁদের নিজস্ব দর্শনে অধীনস্থ কন্টিনজেন্টগুলো পরিচালনা করতে চান।
আরো পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধ ও সেনাবাহিনীর আন্ত-অভিযানের সূচনার ইতিকথা জানালেন সেনাপ্রধান
এই দর্শন মাঝেমধ্যে মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধির দেওয়া বৃহত্তর দর্শনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। এসব দ্বন্দ্ব আন্ত-অভিযান সক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটায়। অর্থাৎ, তিনটি বিভাগের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সাফল্য আসে। সফল হয় মিশন। তখন জয়গান উঠে ঐক্যের। কিন্তু পরিবেশসহ নিজেদের মধ্যকার বিভিন্ন দর্শনগত সমস্যা তৈরি হয়।
সেনাবাহিনী প্রধান আন্ত-অভিযানে স্থলবাহিনীর সক্ষমতার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি তিনটি বিভাগের ঐক্যের মাজেজার বিষয়টিকে মোটা দাগে উপস্থাপন করেছেন।
সেনাপ্রধান বলেছেন, সামরিক পরিমণ্ডলে বাহিনী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সব স্তরের কর্মকর্তারা তাঁদের নিজস্ব দর্শনে অধীনস্থ কন্টিনজেন্টগুলো পরিচালনা করতে চান।’ কিন্তু শান্তি মিশনে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধির বৃহত্তর দর্শনের সঙ্গে সাংঘর্ষিকের কারণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য যুক্তি তুলে ধরেন।
আরো পড়ুন: শান্তিরক্ষা মিশনে সাফল্য-অন্তরায়ের কারণ বললেন সেনাপ্রধান

সামরিক পরিমন্ডল বাহিনীর কর্মকর্তারা নিজস্ব আইডিয়া, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর নিজেদের পরিচালনা করেন। কিন্তু মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধির মাধ্যমে অন্য যে বাহিনীরা যায় তারা তাদের দর্শনে কাজ করতে চায়। ফলে এটির মধ্যে একটি সমন্বয়হীনতা থাকে। এ সমস্যা সমাধান হলে শান্তিরক্ষা মিশন অভিযান সফল হবে।
এছাড়া কোন রকম ধারণা ছাড়াই সেনা সদস্যরা শুরুতেই অভিযানেই নেমে পড়ে। অথচ সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে তাদের প্রাথমিক ধারণাও নেই।
এসব কারণে স্থলবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি অপরিহার্যের বিষয়টি নিপুণভাবে তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে তুলে ধরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, সেনা দলগুলো মিশন এলাকায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই আভিযানিক কাজ শুরু করে। ভিন্ন পরিবেশে খাপ খাওয়ার মতো সময় তারা পায় না।
আরো পড়ুন: বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কর্মতৎপরতা লাল-সবুজের পতাকার সুনামের স্মারক, বললেন সেনাপ্রধান
প্রাথমিক পরিবেশ সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা সেখানে নিযুক্ত সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগের কার্যকরী একীকরণ এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে নিম্নমানের আন্ত-অভিযান সক্ষমতায় পর্যবসিত করে। তা অনেক সময় আভিযানিক সমস্যা ঘটায়, শান্তিরক্ষীদের জীবনের খেসারতেরও কারণ হয়।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বেসামরিক, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর ঐকতানের অভাবটি তাই গুরুত্বপূর্ণ বাধা হয়ে রয়েছে।’
সেনাবাহিনী প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বিত কাজের পরিস্থিতি তৈরি করে পারস্পরিক মৈত্রীর ক্ষেত্র তৈরি করার ওপর জোর দেন। একাধিক অংশীদারের সঙ্গে কাজ করার মনস্তাত্বিক ধারণাগুলো সুসংহত করার মধ্যে দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন সাফল্য নিশ্চিত করতে পারে বলে মনে করেন।
আরো পড়ুন: বিশ্বমঞ্চে শান্তিরক্ষায় নিজের অভিজ্ঞতার গল্প শুনালেন সেনাপ্রধান
পাশাপাশি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উন্নত সহযোগিতা আন্ত-অভিযান সক্ষমতা বাড়ানোয় সহায়ক হতে পারে, মত সেনাবাহিনী প্রধানের। তিনি বলেন, যৌথ সেমিনার, অনুষদ বিনিময়, প্রশিক্ষণ প্যাকেজ বিনিময়, গবেষণা ও উন্নতির বিষয় এ সহযোগিতার ক্ষেত্র আদান প্রদান হতে পারে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে যে বিভিন্ন দেশের বাহিনীগুলোকে একত্রে কাজ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে ভাষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রশিক্ষণগত সমস্যা এবং সংহতির সঙ্কটও দেখা দেয়। এসব সমস্যা নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্লেষণ করে তাঁর অভিমত হচ্ছে-এগুলো কাটিয়ে উঠতে সেনাবাহিনীর সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ।
কালের আলো/এএ/এএএএমকে