সেই বিতর্কিতরা ‘বহাল তবিয়তে’, টিএসসিতে আবারো পদবঞ্চিতদের অবস্থান (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 4:10 am | May 27, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
নিজেদের কাছে চিহ্নিত বিতর্কিত ১৭ জনের বিরুদ্ধে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তাঁরা। বলেছিলেন প্রকাশিত হবে তদন্ত প্রতিবেদন। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগত কারণেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী!
উল্টো সোমবার (২৭ মে) সকাল ১১ টার দিকে ৩০১ সদস্যের বিতর্কিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে নিয়েই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন। ফলে ‘অগ্নিশর্মা’ ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা পুনরায় অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছেন।
রোববার (২৬ মে) রাত ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)-এর রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ আবারো অবস্থান গ্রহণ করেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনরতরা এ অবস্থান কর্মসূচিতে থাকার কথা জানিয়েছেন।
এর আগে গত ১৩ মে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরপরই কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেয়ার অভিযোগে আন্দোলন করে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতা-নেত্রীরা। ওই আন্দোলনে হামলা করারও অভিযোগ ওঠে। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, এই কমিটিতে অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবী, ছাত্রদল রয়েছে।
সেই হামলার বিচারের দাবিতে গত ১৮ মে দিবাগত রাত তিনটা থেকে বৃষ্টিতে ভিজেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেন তারা। ওই রাতে আবারও ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের অনশনে অংশ নেওয়া ছাত্রীদের ওপর হামলা করা হয়।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী নিজেই ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলেছেন বলে অভিযোগ করেন হামলার শিকার হওয়া ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেত্রীরা। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যস্ততায় বিবাদ মিটিয়ে ফেলা হয়।
এদিকে মধুর ক্যান্টিনে পদ বঞ্চিতদের উপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত পাঁচজনকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। এদের একজনকে স্থায়ীভাবে এবং চারজনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।
পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে ‘বিতর্কিত’দের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পর বিতর্কিত ওই ১৭ জনের নাম প্রকাশ করেন শোভন ও রাব্বানি। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান।
কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বীরদর্পেই তাঁরা সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ঘোষিত ১৭ অভিযুক্ত নেতা-নেত্রীরা হলেন- সহ-সভাপতি তানজিল ভূইয়া তানভীর, সুরঞ্জন ঘোষ, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, আতিকুর রহমান খান, বরকত হাওলাদার, শাহরিয়ার বিদ্যুৎ, মাহমুদুল হাসান তুষার, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, তৌফিকুল হাসান সাগর, সাদিক খান, সোহানী হাসান তিথি, মুনমুন নাহার বৈশাখী, দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব, উপ-সম্পাদক রুশি চৌধুরী ও আফরিন লাবনী।
কিন্তু শোভন-রাব্বানীর ঘোষণার পরেও বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি ঘোষণার পর আবারো অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছে পদ বঞ্চিতরা।
তাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সবাই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন। এবারও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিতর্কিতদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তাদের দাবি মেনে না নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে যাওয়া হচ্ছে।
এর মাধ্যমে বিতর্কিত কমিটিকে বৈধ করার পাঁয়তারা চলছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সেই দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আগে কেন বিতর্কিতদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুক প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে যাচ্ছে শোভন-রাব্বানী এ নিয়েও প্রশ্ন করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় আন্দোলনকারী পদবঞ্চিতরা পুনরায় তাদের দাবি উত্থাপন করেন। তাদের দাবিসমূহ হচ্ছে- পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের স্থান দেওয়া এবং মধুর ক্যান্টিনে ও টিএসটিতে তাদের ওপর হামলাকারীদের বিচার করা।
কালের আলো/এমএইচএ/আরএম