পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক থাকার নির্দেশ
প্রকাশিতঃ 10:45 am | May 28, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে পুলিশের গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের পর পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশের যে কোনো স্থাপনায় প্রবেশের সময় সব আগন্তুককে বিধি অনুযায়ী সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি, ব্লক রেড, চেক পোস্টে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের গাড়িতে বিস্ফোরিত ককটেলটি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক শক্তিশালী বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, ককটেলটি আগে থেকেই পুলিশের গাড়িতে রাখা হয়েছিল। সোমবার হামলার ঘটনায় আহত রিকশাচালক লাল মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এ হামলার পরপরই জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, আইএস মালিবাগের ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। তবে এ দেশে ওই সংগঠনটির কোনো অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়ে আসছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘হামলার বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। আইএসের দায় স্বীকারের বিষয়টিও দৃষ্টিতে এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে আইএসের সংশ্নিষ্টতা পাওয়া যায়নি।’
সোমবার রাত ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির চালক কনস্টেবল শফিক চৌধুরী। বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস দমন আইনে করা এ মামলার আসামি অজ্ঞাতনামা। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে এবং সরকারি সম্পদের ক্ষতি করতে বোমা নিক্ষেপ করে।’
বিস্ফোরণের পরপরই কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটসহ (সিটিটিসি) পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করছেন তদন্ত সংশ্নিষ্টরা। এসব যাচাই-বাছাই করে হামলায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারাদেশের পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রোববার রাত ৯টার দিকে মালিবাগ মোড়ে পুলিশের পিকআপভ্যানে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ট্রাফিক পুলিশের এএসআই রাশেদা আক্তার বাবলি, রিকশাচালক লাল মিয়াসহ তিনজন আহন হন। রাশেদার বাঁ পায়ে ও লাল মিয়ার মাথায় জখম হয়েছে। রাশেদাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতাল এবং লাল মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লাল মিয়ার মাথার আঘাত গুরুতর। রোববার রাতে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
সোমবার(২৭ মে) ডিএমপি কমিশনার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লাল মিয়াকে দেখতে যান। এ সময় কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশকে টার্গেট করা হয়েছে, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এ বিস্ম্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, ককটেলটি গাড়িতে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় এই বিস্ম্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এর আগে গুলিস্তানে ট্রাফিক বক্সে বিস্ম্ফোরণের ঘটনায় তিন পুলিশ কনস্টেবল আহত হন। পুলিশ বক্স বা গাড়িতে হামলা করে পুলিশের মনোবল দুর্বল করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে এ ধরনের কাজ করে পুলিশের মনোবল ভেঙে ফেলা যায় না।
হামলায় জঙ্গিরা জড়িত কি-না, জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। কারণ জঙ্গিরাই যে দেশের মধ্যে ভীতিকর সৃষ্টি করতে চায়, এমনটা নয়। দেশীয় রাজনীতিতে একটি পক্ষ সবসময়ই চেয়েছে, এ দেশে নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও বোমা সন্ত্রাস চালানো হয়েছিল। দেশের এক শ্রেণির মানুষও বিদেশে থেকে দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় তাদের ইন্ধন আছে কি-না, খতিয়ে দেখতে হবে।
কালের আলো/এএল/এমআর