আইজিপির ঈদ আনন্দে ‘বিবর্তন’, সবার মাঝেই নিজের ঈদ আনন্দ!

প্রকাশিতঃ 7:16 pm | June 04, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো : 

দিন বা রাত নেই। ঈদ বা অন্য উৎসব বলে কথা নেই যেন! সার্বক্ষণিক দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই পথ চলতে হয় ‌তাকে। তাঁর ২৪ ঘন্টার সতর্ক চোখ আর চেষ্টাতেই স্বাভাবিক আর নিরাপদ থাকে ষোল কোটির বাংলাদেশ। 

ঈদে কর্মব্যস্ত রাজধানী ফাঁকা হলেও বরং এই দিনে দায়িত্ব আরো বহুগুণে বেড়ে যায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর, বিপিএম (বার)। দক্ষ, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে একটি ‘টিম ওয়ার্ক’ গড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম শক্ত হাতেই টেনে ধরেন। 

পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তার মতোই একই অবস্থা এ বাহিনীর শতকরা ৮০ ভাগ সদস্যের। দেশের মানুষের ঈদের আনন্দ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই নিজেদের ঈদ ‘কুরবানি’ দিয়েছেন তাঁরা। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে ঈদ আনন্দ ‘ভাগ্যে’ জুটে না। 

তবে সবার মাঝেই নিজেদের ঈদ আনন্দ উপভোগ করেন পুলিশের এ সর্বোচ্চ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের সদস্যরাও। ফলে অনির্বচনীয় আনন্দের এ দিনটিও তাদের কাছে যেন অন্যান্য দিনগুলোর মতোই সাধারণ! 

দেশের মানুষের উৎসবের মুহুর্তগুলো নির্বিঘ্ন করতেই দিন-রাতের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাই বলে দেয় দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনীর প্রধান হিসেবে বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের মতোই ঈদ পার্বণ যেন নেই তাঁর জীবনেও। অবশ্য এ নিয়ে কোন ক্ষোভ, বিরক্তি বা হতাশাও নেই। 

ঈদ বা ঈদের পরবর্তী সময়েও ‘অন ডিউটি’ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক রাখে। জঙ্গি-সন্ত্রাস, খুন-খারাবি বা অজ্ঞান-মলম পার্টির তৎপরতা ঠেকিয়ে দেয়।

সড়ক-মহাসড়ক, রেলস্টেশন বা লঞ্চ টার্মিনাল সর্বত্রই পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি বিষাদের কালো ছায়া সরিয়ে নিশ্চিত করেন আনন্দ মেলা। 

৩৩ বছরের বর্ণাঢ্য পুলিশী চাকরি জীবনের আগে এবং চাকরিকালীন সময়ে স্বভাবতই পুলিশ প্রধানের ঈদ আনন্দে বিবর্তন এসেছে। 

চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নে মান্দারী গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী বাবা আব্দুল হালিম পাটোয়ারীর সন্তান হিসেবে নিজের শৈশবের ঈদ আনন্দের রূপরেখার সঙ্গে গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেওয়া এ মানুষের পার্থক্য অনেক। 

এক সময় তাঁর জীবনেও ঈদ ছিল কেবল মাত্র ধর্মীয় উদ্দীপনার পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতির নিদর্শন। এখন সেই ঈদ কেবলই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত, তাদের দু:খ-দুর্দশা লাঘবের পাশাপাশি তাদের মুখে হাসি ফোটানোর। কবিগুরুর গানের ভাষা ‘আমার এ পথচলাতেই আনন্দ’র মতোই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন। 

ঈদ এবং শৈশব এখনো স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন করে পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে। বছরখানেক আগে একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে শৈশবের ঈদের টুকরো টুকরো স্মৃতি উচ্চারণ করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘শৈশবে আমার ঈদ ছিলো একান্তই আমার। সেখানে আমাকে ঘিরেই ছিলো সব কিছু। 

আনন্দ-উচ্ছ্বাস ঈদের জন্য অপেক্ষা। ঈদে নতুন কাপড় পাবো কী পাবো না, এই অপেক্ষা। তারপর যখন ঈদের আগের দিন কিছু পেলাম। প্রতি বছর আমরা সব ভাই-বোন একইভাবে নতুন কাপড় কিনেছি তা নয়। তবুও আনন্দ কম ছিলো না।’ 

শৈশবের ঈদের সঙ্গে একজন আইজিপির ঈদের ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে ড.মোহাম্মদ পাটোয়ারী বলেন, ‘এখন আমার ঈদ আমার ঈদ নেই। এখন ঈদ বন্টন হয়ে গেছে দেশবাসীর সাথে এবং দায়িত্বের সাথে।’ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিজেকে একজন ‘ভাগ্যবান’ মানুষ হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। 

আইজিপি বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান বাংলাদেশের মতো একটি দেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষ যেখানে, এসব মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার কাঁধে। এই নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটি বিশাল অংশ কিন্তু আমাকে এই ধরণের পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হয়।’ 

যৌক্তিকতার নিরিখেই বলেন, ‘আমি পরিবারকে মিস করি, আমার পরিবার আমাকে মিস করে। তবে আমার কাছে স্বস্তির বিষয় আমার সন্তান, স্ত্রী, পরিবারের সদস্যরা আমার দায়িত্ববোধের জায়গাটুকু ফিল করতে পারে। 

আমাদের বাবা আমাদেরকে যেমন দিচ্ছেন তেমনি দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্বটুকুও পালন করছেন। এটা অনেক স্বস্তির জায়গা’ যোগ করেন পুলিশের এ সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। 

ঈদে ঘরে ফেরার পথ নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে রাখতে দিন নয়েক আগে পুলিশ সদর দফতর থেকে সকল মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু নির্দেশনা দেন পুলিশ মহাপরিদর্শক। 

এর মধ্যে জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের বড় বড় ঈদগাহগুলোর নিরাপত্তার জোরদার, জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি, ঈদের ছুটিতে আবাসিক এলাকা, ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান, স্বর্ণের দোকানের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সাধারণ মানুষের ঈদের কেনাকাটা নির্বিঘ্ন করার লক্ষে মার্কেট ও শপিংমলে ভোররাত পর্যন্ত নিয়মিত পোশাকে ও সাদা পোশাকে বিশেষ নিরাপত্তা, সড়ক ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। 

পাশাপাশি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন পুলিশ প্রধান।   

কালের আলো/কেএএই/এএএমকে