শৈশবের ঈদ স্মৃতি সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের, ধরে রেখেছেন বাবার ‘রেওয়াজ’
প্রকাশিতঃ 8:55 am | June 05, 2019
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
বলা চলে, তাঁর জীবনটা বেশ ছকে বাঁধা। নিজের প্রয়াত বাবা ঈদে যে প্রথা চালু করেছিলেন সেই রেওয়াজ এখনো ধরে রেখেছেন তিনি। সাত সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুতি। দুপুরে নিজের ভাই, সন্তান ও স্ত্রীদের নিয়ে একসঙ্গে দুপুরে খাবার, নাতিদের সঙ্গে গল্প করা ঈদে এসবই তাঁর ব্যস্ত যাপিত জীবনের অংশ।
আবার নিজে বরেণ্য রাজনীতিক হওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও নিয়ম করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়, তাদের আপ্যায়ন করাও ঈদে তাঁর বিশেষ আয়োজনের মধ্যে পড়ে। প্রতিবারই এ আয়োজনে বাড়তি হাওয়া যোগ হয় রমজানের শেষ ১০ দিন থেকেই। ওই সময় নিজ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে গিয়ে গরিব দুস্থদের খোঁজ খবর নেওয়া।
তাদের হাতে জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি তুলে দেওয়া। সাধ্যমতো তাদের যাবতীয় সহযোগিতা করা। দলীয় নেতা-কর্মীরা যাতে নিজেরা নিজেদের ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে, তাঁর উপস্থিতিতে যেন তাদের ঈদ আনন্দ নির্বাসিত না হয় সেজন্য ঈদের তিনদিন ঢাকাতেই অবস্থান করেন তিনি।
যাকে নিয়ে এতো কথা তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্ণেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি। রাজনীতিক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, মন্ত্রী নানা পরিচয়ে তিনি পরিচিত। আবার তিনি গোপালগঞ্জ-১ (মকসুদপুর-কাশিয়ানী) থেকে টানা ৫ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্যও।
সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বর্তমান সভাপতিও তিনি। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ভোট পেয়েছেন ৯৯.৩৬%। মকসুদপুর ও কাশিয়ানীর ২৪ টি ইউনিয়নেই দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবারই আপনজন তিনি। তবে তিনি এবার ঈদ করছেন রাজধানী ঢাকায়।
হেভিওয়েট এ রাজনীতিক নিজের শৈশবের ঈদের সঙ্গে বর্তমান ঈদের পার্থক্য, শৈশবের ঈদ উদযাপনের মধুর স্মৃতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন কালের আলো’র সঙ্গে। তাঁর সাক্ষাতকারের নানা দিক বিশেষ করে ঈদের দিন কী করেন, কীভাবে কাটে পুরো মুহুর্ত, ঈদ পরিকল্পনার পুরো বিষয়ের চুম্বক অংশ উপস্থাপন করা হলো কালের আলো’র পাঠকদের জন্য।
শৈশবের ঈদ ছিল খুবই আনন্দের
আবার এসেছে খুশির ঈদ। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া ঈদের আনন্দে মেতেছে সবাই। ঈদের এ অনির্বচনীয় আনন্দ থেকে বাদ যান না রাজনীতিকরাও। তাঁরাও পরিবারের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
নিজের শৈশবের ঈদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘শৈশবের ঈদ ছিল খুবই আনন্দের। আমাদের সব ভাই আত্মীয় স্বজন একসঙ্গে ঈদ করতাম। ঈদের আগে ঈদের কাপড় নিয়ে ব্যস্ততা থাকতো। কার কী কেনাকাটা হলো এসব।
ঈদের দিন বাবার সঙ্গে সকল আত্মীয় স্বজন মিলে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যেতাম। বাসায় এসে মজা করে মিষ্টি খেতাম। আমার আব্বা জানতেন ছেলেরা বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি যাবে। এজন্য আমাদের বাসার নিয়ম ছিল দুপুরের খাবার একসঙ্গে খেতে হবে। ঈদের দিন দুপুর বেলায় একসঙ্গে আমরা বাসায় খাবার খেতাম। এরপর বাবাকে বলে বন্ধুদের বাড়িতে ঘুরতে যেতাম। তখন ঈদ দুই থেকে তিনদিন থাকতো। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যেতে হতো।
চাচা-মামাদের বাড়ি যেতাম। খুবই আনন্দের সঙ্গে ঈদ কাটতাম। কোরবানির ঈদে সারাদিন গোশত বিলি করা, আত্মীয়দের বাড়িতে বাড়িতে দুপুরের খাবারের পর বেরিয়ে পড়তাম গোশত নিয়ে। ঈদুল আজহা আমাদের জন্য বেশি ব্যস্ততা ছিল। এটা একটি বড় দায়িত্বও ছিল। প্রতিটি আত্মীয়র বাড়িতে নিয়ম করে গোশত পৌঁছাতে হতো। সেটাও বেশ উপভোগ করতাম।
তিন কারণে ঢাকায় ঈদ
আনন্দের এ অমিয়ধারার মধ্যেও নিজ নির্বাচনী এলাকার পরিবর্তে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ঢাকাকেই বেছে নিয়েছেন লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান। অকাট্য যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, ঈদের দিনে নির্বাচনী এলাকায় থাকলে সকল নেতা-কর্মী আমার পেছনে ঘুরে বেড়ায়।
তাদের আর নিজেদের ঈদ ঠিকভাবে করা হয় না। দ্বিতীয় হচ্ছে সমস্ত ঈদগাহ থেকে বলা হয় আপনি আমাদের ঈদগাহে আসেন। এক ঈদগাহে গেলে বাকীরা মন খারাপ করে। তাদের কাছে গেলাম না কেন?
তৃতীয়ত, নামাজ শেষে খাবার নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয় দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে। প্রত্যেকেই বলেন, আমার বাসায় এসে খাবেন। আমি থাকলে তাদের ঈদে একটু বিঘ্ন ঘটে। নেতা-কর্মীরা মনে করেন, আমার সঙ্গে সঙ্গে তাদের থাকতে হবে। ঈদের তিনদিন পরই আবারো নির্বাচনী এলাকায় যাবেন তিনি।
২৪ ইউনিয়নেই গরিব দুস্থদের মাঝে জাকাত
ঢাকাতে ঈদ করলেও গত সপ্তাহেই নিজ নির্বাচনী এলাকা ঘুরে এসেছেন সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, তাঁর ২৪ টি ইউনিয়নেই গরিব দুস্থদের মাঝে জাকাত হিসেবে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দুস্থদের জন্য যা যা করার দরকার তাই করা হয়েছে।
ঈদের দিনের ব্যস্ততা
রাজধানীর ক্যান্টমেন্টের আল্লাহু মসজিদের পাশে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন মুহাম্মদ ফারুক খান। এরপর বনানী কবরস্থানে বাবা-মাসহ স্বজনদের কবর জিয়ারত করবেন। পরে বাসায় এসে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন। পরপরই ছুটবেন রাজনৈতিকভাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বঙ্গভবনে। প্রধানমন্ত্রী থাকলে সব সময় গণভবনে যাওয়া হয়।
এরপর দুপুরে আমার বাসায় সমস্ত ভাই ও ভাইয়ের ছেলে-মেয়েরা, বিয়াই দুপুরে একসঙ্গে লাঞ্চ করবো। বাবার সেই রেওয়াজ আমি এখনো ধরে রেখেছি। দুপুরে আমরা সবাই একসঙ্গে খাবে। আত্মীয় স্বজনরা চলে যাওয়ার পর বিকেল থেকে আমার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আমার বাসায় এলে শুভেচ্ছা বিনিময় করবো।
এ সময় তাদেরকে সেমাই, ফিরনি ও চটপটি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। মাগরিব পর্যন্ত চলবে শুভেচ্ছা বিনিময়। রাতের বেলা চলে যাবো উত্তরায় আমার ৯৬ বছর বয়স্ক মামা মো: শহীদের কাছে। ওনার সঙ্গে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় এবং রাতের খাবার শেষে বাসায় ফিরবো।
পরের দিন সকাল ১১ টা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা আমার বাসায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসবেন। এবং পরবর্তী দুই দিন এভাবেই শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাওয়া দাওয়া চলবে।
এখন ঈদ উপহার দেওয়াই আনন্দের
দেশের বিশিষ্ট রাজনীতিক মুহাম্মদ ফারুক খান মনে করেন, শৈশবে ঈদ উপহার পাওয়াটা ছিল আনন্দের। আর এখন দেওয়াটাই আনন্দের। বর্তমানের ঈদে কাপড় চোপড় নিয়ে শৈশবের মতো আগ্রহ নেই। আগে (শৈশবে) চিন্তা ছিল কাপড় কী পেলাম, বাবা-চাচা-মামা কে কি দিলো। এখন এটা মুখ্য বিষয় নয়। বরং আমার তরফ থেকে কাকে কী দিবো, কাকে গিফট পাঠাবো এটাই মুখ্য বিষয়।
ছোটবেলার ঈদের কথা মনে হলেই স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন হন তিনি। সেই রেশ ধরে কালের আলোকে বলেন, ‘শৈশবের ঈদ আনন্দ এক ধরণের ছিল। সেটা মনে হলেই মনে পড়ে বাবার কথা। আমার বাবার সঙ্গে এটা করেছি, ওটা করেছি, আত্মীয় স্বজন চাচা-মামারা ওটা দিয়েছিল। তখন কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। তখনো দিনটি ভালো ছিল। এখনো ভালো আছে, আলহামদুলিল্লাহ।
কালের আলো/এএ/এএএমকে