বাজেট বাস্তবায়নে তিন বিষয়কেই চ্যালেঞ্জ মনে করেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান

প্রকাশিতঃ 11:53 am | June 14, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

দেশের ৪৯ টি বাজেটের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকারই ২১ টি বাজেট দিয়ে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছে। তবে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার ৪৯ তম এ বাজেট প্র্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে নতুন আঙ্গিকে সূদুরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে সংসদে পেশ করেছেন সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

দেশকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে ‘স্মার্ট’ বাজেটে চমক নিয়েই আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। তাঁর সামনে অর্থনৈতিক অনেক ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ থাকলেও ২০১৯-২০ অর্থ বছরের এ বাজেটকে স্বপ্নপূরণের বাজেট হিসেবেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্ণেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি।

গোপালগঞ্জ-১ (মকসুদপুর-কাশিয়ানী) থেকে টানা ৫ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য বলেছেন, ‘দেশের সার্বিক উন্নয়নকে মনে রেখেই এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।’ পাশাপাশি বিশাল এ বাজেট বাস্তবায়নে তিন বিষয়কে বড় রকমের চ্যালেঞ্জ ভাবছেন সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী।

মূলত এ চ্যালেঞ্জগুলোতে সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হলেই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলেও মত দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এ রাজনীতিক। তিনি বলেন, ‘জননেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মোট ১১ টি বাজেটের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে নিজের এমন মতামত তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এ সভাপতি। এদিন বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করা হয়।

প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতা শুরু করার পর অসুস্থতা বোধ করায় তাঁর অনুরোধে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বাজেট বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এ মন্ত্রী।

৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেটে জিডিপির পরিমাণ ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।

বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।

অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নেওয়া হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা।

এবারের বাজেটে বড় আকারের ব্যয় মেটাতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশের সমান।

স্বপ্নপূরণের বাজেটে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন
দেশের ইতিহাসে কোন সরকারই টানা ১১ টি বাজেট সংসদে উপস্থাপন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারের ২১ তম ও টানা ১১ তম বাজেট সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এ বাজেটকে স্বপ্নপূরণের বাজেট হিসেবেই মনে করেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্ণেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি।

এজন্য তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অভিনন্দন জানান।

বাজেট বাস্তবায়িত হলে মানুষের আশা পূরণ হবে
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এ সদস্য বলেন, আমি মনে করি বাজেট হচ্ছে একটি পরিকল্পনা। পরিকল্পনা হিসেবেও এটি খুবই সুন্দর হয়েছে। বাজেট কতটা স্বার্থক হয়েছে তাঁর প্রমাণ পাওয়া যাবে আগামী বছর এই সময়ে যখন আমরা দেখবো এ বাজেট কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে।

বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এ অর্থ বছরের শেষের দিকে তাকিয়ে থাকবো, বাজেটের বাস্তবায়নের দিকে। আমি মনে করি এ বাজেট যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের জনগণের অনেক আশাই পূরণ হবে।

বাজেট বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রীর অনেক দায়িত্ব
অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলবো অনেক বড় এ বাজেট বাস্তবায়নই হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ, বলছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এ নিয়ে ১১ টি বাজেট দিয়েছে।

আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে সরকার সক্ষম হবে। আমি মনে করি বাজেট বাস্তবায়ন করতে অর্থমন্ত্রীর অনেক দায়িত্ব রয়েছে।

তাকে সময়মত অর্থ ছাড় করতে হবে। সময়মতো অর্থ ছাড় না দিলে কোন প্রকল্প ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে না। সব প্রকল্প শেষ তিন মাস সময়ের জন্য আটকে থাকবে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এবং নিবিড়ভাবে তাদের মনিটরিটং করতে হবে, সংযোজন করে বলেন বিশিষ্ট এ রাজনীতিক।

তিন বিষয়ই বড় চ্যালেঞ্জ
বাজেট বাস্তবায়নে তিনটি বিষয়কে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন সাবেক এ মন্ত্রী। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সংগ্রহ বিশেষ করে রাজস্ব সংগ্রহ করাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সক্ষমতা। যেহেতু অতীতে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়িত হয়নি।

তৃতীয়ত, হরতাল, অবরোধ বা রাজনৈতিক সহিংসতার মাধ্যমে বিরোধী দল বিএনপি, ঐক্যফ্রন্টসহ অন্যরা যদি বাজেট বাস্তবায়নে সমস্যা তৈরি করে তবে বাজেট বাস্তবায়নে বিলম্ব হবে। এসব চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করা সম্ভব হলেই বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মনে করেন লে. কর্ণেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি।

কালের আলো/এমএইচ/এএএমকে