মা ও ভাইকে বাসায় ঢুকতে না দিয়ে ফের আলোচনায় তুরিন আফরোজ
প্রকাশিতঃ 10:33 pm | June 15, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
মা ও ভাইকে বাসায় ঢুকতে না দেওয়ায় ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন তার ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির। গত শুক্রবারের এই ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে ওঠে সমালোচনার ঝড়।
কেউ কেউ আবার তুরিনের পক্ষেও যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। কেউ বলেছেন, যিনি মানবতা বিরোধী ট্রাব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর ছিলেন তিনি কিভাবে মাকে বাসায় ঢুকতে না দিয়ে অমানবিক কাজ করতে পারলেন। এর আগে ১০১৭ সালে মাকে হুমকি ধমকি দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে জিডি করেন তার ভাই।
এদিকে, ২০১৮ সালে মানবতাবিরোধী মামলার আসামি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠক, মামলার নথি তার কাছে হস্তান্তর ও মামলার মেরিট নিয়ে কথা বলার অভিযোগ উঠে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে। পরে ওই বছেরের ৮ মে পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সব মামলার কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তখন বেশ আলোচনায় ছিলেন তিনি। এবার কানাডা থেকে দেশে আসার পর ছোট ভাই ও মাকে উত্তরার বাসায় ঢুকতে না দিয়ে ফের আলোচনায় এলেন।
শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে যে জিডি (নম্বর ৭৩৮) করেছেন তাতে শিশির অভিযোগ করেন, ‘‘আমি ২০১২ সালে পরিবার নিয়ে কানাডায় চলে যাই। ২০১৫ সাল থেকে বড় বোন তুরিন আফরোজকে তার পেশাগত সুযোগ-সুবিধার জন্য উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর আমার বাড়িতে থাকতে দেই।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে আমার বাবা তসলিমউদ্দিন আহমেদ মারা যাওয়ার পর মাকে কানাডায় নিয়ে যাই। শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় আমি মাকে নিয়ে কানাডা থেকে দেশে আসি। আমার উত্তরার বাসাতে গেলে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী বাড়িতে ঢুকতে নিষেধ করে। কারণ জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী জানান, ‘তুরিন আফরোজ ঢুকতে দিতে নিষেধ করেছে।’’
শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির জানান, ‘আমার মা ১৯৯২ সালে বাড়িটি কেনেন। ২০১৪ সালে তিনি আমাকে দান করেন। আমি হাউজবিল্ডিং থেকে লোন তুলে বাড়িটি তিন তলা করি। আমার মা-বাবা এবং আমি এই বাড়িতেই ছিলাম। ২০০৫ সালে যখন তুরিন আফরোজ অস্ট্রেলিয়া থেকে আসেন, তখন আমরা তাকে এখানে থাকতে দেই। তার পেশার সুবিধার জন্য তাকে থাকতে দেওয়া হয়। মাকে নিয়ে কানাডায় চলে যাওয়ার পর তখন তুরিন আফরোজ বাড়িটি দখল করে নেয়। এখন আমাদের আর ঢুকতে দিচ্ছে না। মাকেও বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না।’
শিশির আরও বলেন, ‘বাড়ির সব ইউটিলিটি সার্ভিস আমার নামে, বাড়ির ঋন আমার নামে, জমি আমার নামে, রাজউকের প্লান পাস আমার নামে; অথচ আমাকে আর মাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমরা কোথায় থাকবো? আমরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে থানায় জিডি করেছি।’
এর আগে, গত ১ জানুয়ারি ঢাকার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে বাড়ি দখলের অভিযোগে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন ছোটভাই শিশির। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ২ মার্চ পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে মা শামসুন নাহার এবং অন্য ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে বের করে দেন তুরিন আফরোজ। নিজেকে বাড়ির মালিক দাবি করে তুরিন বাড়ি ও জমির দলিলপত্রও দখলে নিয়ে নেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, ভাই শিশির সম্পত্তিতে আসতে চাইলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়া হবে বলেও মাকে হুমকি দেন বিবাদি তুরিন আফরোজ।
মা ও ভাইকে বাড়িতে ঢুকতে না দেয়ার বিষয় তুরিন আফরোজ বলেন, আমার সঙ্গে তাদের দেখা হয়নি। তারা বাড়িতে এসেছিল কিনা, তাও জানি না। আদালতে মামলা চলমান থাকায় বাড়ির মালিকানা বিষয়ে তুরিন আফরোজ কথা বলেননি। তিনি বলেন, বাড়ি কার তা আদালতে বিচার হবে। আদালতে তারা তো মামলা পরিচালনা করছেন।
কালের আলো/এআর/এমএম