আইনশৃঙ্খলায় পুলিশের সাফল্য রহস্য ‘টিম স্পিরিট’, ফুরফুরে আইজিপি!
প্রকাশিতঃ 11:32 am | June 16, 2019
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
বাঙালির শেকড় খোঁজার দিন পহেলা বৈশাখ, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা, সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান এবং মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর, এমন চারটি বড় উৎসবকে নিয়ে কী উদ্বেগ-উৎকন্ঠাই না ছিল! এসব উৎসবকে ঘিরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা থাকলেও আগাম গোয়েন্দা নজরদারি ও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে কোন রকম অঘটন ঘটতে দেয়নি পুলিশ।
এমনকি পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদের আগে-পরে সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, প্রতারক চক্র মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে ছিল না ঈদ-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে ঘরে-বাইরে খুনখারাবির ঘটনাও। এ সময়টাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছে পুলিশ।
কিন্তু এতো বড় বড় উৎসব কীভাবে নির্বিঘ্নে সামাল দিল পুলিশ, আইনশৃঙ্খলায় পুলিশের এমন সাফল্যের রহস্যই বা কী, এমন প্রশ্নের উত্তর কেবলমাত্র দু’টি শব্দ- ‘টিম স্পিরিট’। পুলিশের কাঙ্খিত এ স্বপ্নযাত্রার সাফল্যের প্রধান কারিগর এবং মেন্টর বাহিনীর প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)।
মূলত গোটা দেশে কঠোর নিরাপত্তা জোরদারে কড়া নির্দেশ ও নতুন কৌশল প্রয়োগ করেই এসব আনন্দ-উৎসবকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ করে চমক তৈরি করেছেন এ পুলিশ মহাপরির্দক (আইজিপি)। অবশ্য বাহিনীর ‘মধ্যমণি’ প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এ মানুষটি নিজেকে নয় এজন্য পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকেই।
ঈদ শেষে সপ্তাহখানেক আগে পুলিশ সদর দপ্তরে বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান ও সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি বলেছেন, ‘পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সকল সদস্য পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই এবারের রমজানে ও ঈদে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল।’
পুলিশের আইজি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের দুই ঈদেও একই রকম কৃতিত্ব দেখিয়েছেন স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল ও প্রজ্ঞাময় চৈতন্যের প্রজ্জ্বলনে উদ্ভাসিত মেধাবী ও অভিজ্ঞ জাবেদ পাটোয়ারী। তাঁর অধিনায়কোচিত দক্ষতায় কোন রকম অঘটন ছাড়াই বড় চারটি উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করে প্রকারান্তরে সর্বমহলের প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ সদস্যরা।
স্বভাবতই বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিজেও বেশ ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছেন জাবেদ পাটোয়ারী নিজেও। বুধবার (১২ জুন) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে দিনব্যাপী ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পুলিশ প্রধান আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিজ বাহিনীর সদস্যদের এমন সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘গত পহেলা বৈশাখ, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, রমজান এবং ঈদুল ফিতর অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে। বর্তমানে সামগ্রিকভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। এ অবস্থা ধরে রাখতে পুলিশ কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।’
জানা যায়, প্রতিবারই পহেলা বৈশাখ, ঈদসহ অন্যান্য উৎসবকে ঘিরে অপরাধী চক্রের তৎপরতা শুরু হয়। কিন্তু এবার এসব উৎসবে পুলিশ প্রশাসন থেকে এসব অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে সতর্ক ও সাবধান থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মেট্রোপলিটন, ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপারদের এসব অপরাধী চক্র ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করার কঠোর নির্দেশ দেন পুলিশের আইজি। শুধু তাই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অপহরণ, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, প্রতারণা ও যানজটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধেও কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়।
পাশাপাশি ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আগেভাগেই তৎপর হয়ে উঠে পুলিশ। রোববার (২৬ মে) পুলিশ সদর দপ্তরে সব মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বসেন পুলিশ মহাপরিদর্শক। ঈদে মানুষের ঘরে ফেরার আনন্দ নিশ্চিত করতে সেদিন তিনি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এসবের মধ্যে টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়ার আগেই চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পরিবহনের ফিটনেস কাগজপত্র পরীক্ষা করা, বাসের ছাদে যাত্রী পরিবহন বন্ধ, চলন্ত ট্রেনে পাথর মারা রোধে কঠোর ব্যবস্থা, নৌ-যানে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধ এবং নৌপথে অন্যকোনো স্থান থেকে নৌকা দিয়ে যাত্রী উঠনো বন্ধ, সড়ক ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’, মার্কেট ও শপিংমলে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়, জাতীয় ঈদগাহ, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া, দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দান ঈদগাহসহ বিভাগ ও জেলার কেন্দ্রীয় ঈদ জামাতস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী নির্দেশনা প্রদান করেন।
একই সঙ্গে ঈদের ছুটিতে আবাসিক এলাকা, ব্যাংক ও অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান, স্বর্ণের দোকান ইত্যাদির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, দেশের মেগা প্রজেক্ট ও বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও নিজেদের অস্তিত্ব, উপস্থিতি ও দক্ষতার জানান দেয় দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।
দেশের ষোল কোটি মানুষের ঈদ আনন্দকে রাঙিয়ে দিতে পুলিশ সদস্যরা পরিবারের সান্নিধ্য ছাড়াই বিনোদন ও ছুটিবিহীন ব্যাপক তৎপরতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেকর্ড সাফল্যের নজির স্থাপন করেছে। ঈদ-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের পর ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টিসহ সব রকমের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে জনমনে স্বস্তির উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (প্রশাসন) মিলন মাহমুদ কালের আলোকে বলেন, ‘সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। এ কারণে গোটা দেশেই বড় রকমের কোন অপরাধ সংঘটিত হয়নি। কোন রাজনৈতিক হত্যাকান্ড বা গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেনি।’
তিনি বলেন, ‘বড় ধরনের ছিনতাই বা ডাকাতির যেমন খবর নেই তেমনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নিয়েও সহিংসতা হয়নি। পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কঠোর নির্দেশনা ও তদারকির ফলেই সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করেছেন এবং ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে পেরেছেন।’
‘আইজিপির কড়া নির্দেশে এবারের ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণের ফলে অপরাধ প্রবণতার হার ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়’ নিজের এমন পর্যবেক্ষণ কালের আলোর সামনে উপস্থাপন করেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আশরাফ।
তিনি বলেন, ‘ঘুরমুখো, ঘরফেরা মানুষজনসহ দেশের সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে আনন্দ বিনোদনের মধ্য দিয়ে ঈদ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ছুটি কাটিয়েছে।’
ঈদের পরে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজের নেতৃত্বের দূরদর্শিতার আরো একবার পরিচয় দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। ঈদের দিনে কোন রকম অঘটনের খবরে বিষাদের ছায়া নেমে না আসায় বঙ্গভবনে ভাটিবাংলার প্রোজ্জ্বল বাতিঘর, বিচক্ষণ ও শুদ্ধ মানুষ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সম্পর্কের আবেগ ও ভালোবাসাময়তায় তৃপ্তিভরা হাসিতে ছড়িয়ে দেন ঈদ আনন্দ।
ডিএমপি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি), বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানেও নির্ভার আনন্দধারায় নিজেকে সমর্পণ করেন পুলিশ প্রধান।
বাংলাদেশ পুলিশের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে জায়গা করে নেওয়া এসব ছবিই বলে দেয় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উপহারে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে পুরোপুরি চাপমুক্ত তিনি। সেরাদের সেরা হিসেবেই একজন জাবেদ পাটোয়ারী নিজের ব্যক্তি ক্যারিশমার ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েই সব আলো কেড়েছেন এবং অব্যাহত প্রয়াসে ঠিকই বদলে দিচ্ছেন পুলিশকে।
কালের আলো/কেএএই/এমএএএমকে